কৈশোর কালকে কেন "ঝড়ঝঞ্ঝার ও দুঃখ কষ্টের কাল" বলা হয়|| শিক্ষাবিজ্ঞান

 ড়াশোনাঃ- একাদশ শ্রেণির শিক্ষাবিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায়ঃ-"শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ" থেকে আলোচনা করা হলো- গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-কৈশোর কালকে কেন ঝড় ঝঞ্ঝার কাল বলা হয় ?অথবা কৈশোর কালকে কেন "ঝড়ঝঞ্ঝার ও দুঃখ কষ্টের কাল" বলা হয়? প্রশ্নটি একাদশ শ্রেণির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়াও বি এড বা গ্রেজুয়েট ছেলেমেয়েদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।


■ এই অধ্যায় থেকে রচনাধর্মী প্রশ্ন পরীক্ষায় অবশ্যই আসবে । তাই এই অধ্যায়ের প্রত্যেকটি সম্ভাব্য রচনাধর্মী প্রশ্ন আমরা আপলোড করে চলেছি। তোমরা উত্তরের PDF ডাউনলোড করে রাখতে পারবে । তোমরা যদি পরীক্ষায় সাফল্য পাও, তবেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে ।


 প্রশ্ন:- কৈশোর কালকে কেন ঝড় ঝঞ্ঝার
 কাল বলা হয়? অথবা কৈশোর
 কালকে কেন
 "ঝড়ঝঞ্ঝার ও দুঃখ
 কষ্টের কাল" বলা হয়?

 


                          উত্তর 


ভূমিকা:- বাল্যকাল ও প্রাপ্তবয়স্ককালের মধ্যবর্তী সময়কালকে বয়সন্ধিকাল বা কৈশোর কাল বলে। কৈশোরকাল অতিক্রম করে কিশোর কিশোরীরা পূর্ণ বয়সের দিকে এগিয়ে যায়। তাই তাদের আচরণ শিশুশুলভও হয় না, আবার পূর্ণ ব্যক্তির মতোও হয় না। আবার যেহেতু শারীরিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এই বয়সে দেখা যায়। সেহেতু হঠাৎ করে আগত এই পরিবর্তন তারা সহজে মেনে নিতে পারে না। তাই তাদের জীবন তখন ঝড়সদৃশ হয়ে যায়। অর্থাৎ এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তারা এগিয়ে চলে।



মনোবিদদের মন্তব্য:- মানব জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কোনো কোনো মনোবিদ 'যৌন পরিণতির স্তর' হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ কেউ 'বৈপ্লবিক পরিবর্তনের স্তর' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । আবার কোন কোন মনোবিজ্ঞানী 'ক্রমবিকাশমূলক স্তর' বলে ব্যক্ত করেছেন। কিশোর- কিশোরীদের জীবনে এই সংকটময়তার জন্য নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই মনোবিদ জি এস হল একে 'ঝড়ঝঞ্ঝার ও দুঃখ কষ্টের কাল' বলে চিহ্নিত করেছেন।



ঝড় ঝঞ্ঝারকাল বলার কারণ:- সাধারণত ১২ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে কৈশোর কাল বলা হয়। এই সময়কালকে মনোবিদ জি এস হল 'ঝড়ঝঞ্ঝার ও দুঃখ কষ্টের কাল'  কাল বলেছেন। এরূপ মন্তব্যের কারণগুলি হলো:- 



যৌন চেতনা অবদমন:- কৈশোরকালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে যৌন চেতনা দেখা যায়। কিন্তু আকস্মিক পরিবর্তন সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা ও সামাজিক সমর্থনের অভাবে কিশোর কিশোরীরা যৌন চেতনাকে অবদমন করতে বাধ্য হয় । ফলে তারা মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে।



পাপবোধ:- কিশোর-কিশোরীরা এই বয়সে যৌনতা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। কিন্তু এই সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না পাওয়ায় ও যৌনতা সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণার ফলে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং অন্যায় বোধ জাগরিত হয় এবং অনেক সময় তারা পাপবোধ করে।



সংগতি বিধানজনিত সমস্যা:- বয়:সন্ধিকালের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল সঙ্গতি বিধানজনিত সমস্যা। নতুন পরিস্থিতিতে সংগতিবিধানে কিশোর-কিশোরীদের অনেক সময় অসুবিধা হয়। কারণ যুক্তি, চিন্তন, বিচারবোধ, দায়িত্ব-কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতনতা ইত্যাদি এই বয়সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।



বাধাপ্রাপ্ত:- কিশোর-কিশোরীরা এই বয়সে যে কোনো নতুন কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে অথবা পরিবারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে এই বয়সের ছেলে মেয়েরা মতামত দিতে চাইলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাদের বাধা দেন। ফলে সে নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে শুরু করে।



হীনম্মন্যতা সৃষ্টি :- নতুন পরিবেশে বা সকলের সামনে যদি কিশোর কিশোরীদের অপদস্থ, অসম্মান বা অপমান করা হয়, তবে তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয় এবং এই লক্ষণগুলি কিশোর কিশোরীদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।


মন্তব্য:- পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, ঝড় যেমন সুন্দরভাবে সাজানো প্রকৃতিকে এলোমেলো ও অবিন্যস্ত করে দেয়। ঠিক তেমনিভাবেই বয়:সন্ধিকালের আকস্মিক পরিবর্তনগুলি কৈশোরের নিষ্পাপ সুন্দর জীবনকে অগোছালো, এলোমেলো করে দেয়। তাই এই বয়সের ছেলেমেয়েদের ভাবনা-চিন্তা কল্পনা যুক্তি ইত্যাদি সমস্ত কিছুই অর্থহীন মূল্যহীন মনে হয়। তখনই সংকটময় সমস্যামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাই বয়:সন্ধিকাল বা কৈশোরকালকে অনেক মনোবিজ্ঞানী "ঝড়ঝঞ্ঝা বা পীড়ন-কষ্টের কাল" বলে উল্লেখ করেছেন।



Post a Comment

0 Comments