ভাত মহাশ্বেতা দেবী ।।রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর ।।PDF DOWNLOAD

ভাত মহাশ্বেতা দেবী ।।রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর ।।PDFD DOWNLOAD

পড়া শোনা -  উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্য গল্প: ' ভাত' মহাশ্বেতা দেবীর লেখা। এই গল্প থেকে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন-উত্তর ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আজকে তোমাদের কথা ভেবেই আমরা রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর আপলোড করলাম। প্রতিটি উত্তর যথাযথভাবে দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ১৫০ শব্দের মধ্যে বাংলার রচনাধর্মী প্রশ্নএর উত্তর দিতে হয়। সেই অনুযায়ী উত্তর লেখা হয়েছে।


 ■ ওমিক্রনের প্রভাব দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তাই পুনরায় বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষা যথা সময়ে নেওয়া হবে। তাই যাতে তোমাদের অসুবিধা না হয় তার জন্য টিভিতে এ মাসে ক্লাস শুরু হচ্ছে। সেই ক্লাস করার পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রশ্ন-উত্তরগুলো ভালোভাবে পড়বে। এছাড়াও পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য তোমরা লগ-ইন করতে পারো পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সাইটে


দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্য 'ভাত' মহাশ্বেতা দেবীর লেখা গল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাছাই করা রচনাধর্মী প্রশ্ন-উত্তর


১. "দাঁতগুলো বের করে সে কামটের মতো হিংস্র ভঙ্গি করে"- কে কার প্রতি এরূপ আচরণ করেছিল? তার এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করো। 

                                           উত্তর 


এরূপ আচরণ :- মহাশ্বেতা দেবীর লেখা 'ভাত' গল্পে ক্ষুধার্থ  উচ্ছব নাইয়া তার গ্রাম সম্পর্কিত বোন ও বড়ো বাড়ির পরিচারিকা বাসিনীর প্রতি এরূপ আচরণ করেছিল।


ঘটনা :- প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উচ্ছবের সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সেই শোকে উচ্ছব প্রায় পাগল হয়ে যায়। কিন্তু যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন সে ভাতের জন্য উতালা হয়ে পরে। সেকারণেই বাসিনীর সঙ্গে কলকাতার বোড়ো বাড়িতে আসে। সেখানে সে কাজ করবে ও ভাত খাবে। ভাতের আয়োজন দেখে উচ্ছব নাইয়া স্বপ্ন পূরণের ইঙ্গিত পায়। বড়ো কর্তা হোম যজ্ঞের সময় মারা গেলে ,বড়ো পিসিমা সমস্ত রান্না ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্ছব চোখের সামনে স্বপ্ন ভাঙার কথা মেনে নিতে পারেনি। তাই যখন বাসিনী পিসিমার নির্দেশ মতো খাবার ফেলতে যায় ,তখন উচ্ছব মোটাচালের ভাতের ডেকচি চেয়ে নিয়ে পালতে শুরু করে। বাসিনী তাকে বাঁধা দিলে উচ্ছব এরূপ আচরণ করে। 


কারণ :- বাদ অঞ্চলের মনিব সতীশবাবুর মাঠের ধান নষ্ট হওয়ার পর থেকেই উচ্ছব নাইয়া না খেয়ে থাকে। এমনকি তার মাতলা নদীর গর্ভে তার সমস্ত ভিটেমাটি চলে গেছে। শোকগ্রস্ত উচ্ছবের কপালে লাঙ্গর খানার খিচুড়িও জোটেনি। মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরেও সে ভাত পাইনি। অবশেষে গ্রাম সম্পর্কের বোন বাসিনীর হাত ধরে উচ্ছব কলকাতায় যায়। সেখানে ভাতের বিনিময়ে কাজ করতে রাজি হয়। কাজ করতে করতে উচ্ছব ভাতের গন্ধে উতালা হয়ে পরে। হোম যজ্ঞ সমাপ্ত হলে ভাত খাওয়া যাবে ,সেই আসায় উচ্ছব তাড়াতাড়ি হাত চালায়। কিন্তু বড়োবাড়ির কর্তা হঠাৎ মারা গেলে উচ্ছবের স্বপ্ন ভেঙে যায়। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না বিষয়টি। হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসে সে কী করবে।লেখকের কথায় -"উচ্ছবের মাথার মধ্যে যে মেঘ ছিল তা সরে যায়। সে বুঝতে পারে সব ভাত ওরা পথে ফেলে দিতে যাচ্ছে। উচ্ছবের মাথায় এখন বুদ্ধি স্থির হয় ,সে জানে সে কী করবে।"অর্থাৎ দীর্ঘদিন অভুক্ত থেকে  উৎসবের ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য, মানবিকতা প্রভৃতি অনুভূতিগুলি যেন লোপ পেয়ে যায়। তাই সে বাহিনীর কাছ থেকে মোটাসাপ্টা চালের ভাতের হাঁড়ি নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। বাসিনী তকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে, সে রুখে দাঁড়ায় এবং দাঁত বের করে কামটের মতো হিংস্র ভঙ্গি করে।

                              ■ ভাতের অভাবে মানুষের যে আচরণের পরিবর্তন ঘটে, তা লক্ষ্য করা যায় উচ্ছব নাইয়ার ক্ষেত্রে।ভাতের অভাব তাকে অনেক নিচে নামিয়ে দিয়েছিল। এ কারণে উৎসব নাইয়া অছুচ ভাত চুরি করে।


২. "সকাল হতেই বোঝা গিয়েছিল সর্বনাশের বহরখানা।"- কার সর্বনাশ এবং সর্বনাশের পরিচয় দাও।

                                  উত্তর 

কার সর্বনাশঃ- উদ্ধৃত অংশটি মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত 'ভাত' থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য অংশে উচ্ছব নাইয়ার সর্বনাশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুন্দর বনের 'বাদা' অঞ্চলের অধিবাসী উচ্ছবের সংসার মাতলা নদীর জলে ভেসে গিয়েছিল।


সর্বনাশ এর পরিচয়ঃ- দুর্যোগের রাতে অনেকদিন পর পেট ভরে ভাত খেয়েছিল উৎসব ও তার বউ ছেলেমেয়ে। তারপরই শুরু হয় তুমুল ঝড় বৃষ্টি। ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শীতে আর ভয়ে কাঁপছিল উৎসবের স্ত্রী। ঘরের খুঁটিটি শক্ত করে ধরে ভগবানের নাম জপ করছিল। কিন্তু কপালটা মন্দ ছিল উৎসবের, তাই ঈশ্বরের করুণা হয়নি।বরং ঝড়-বৃষ্টি তাদের সংসারকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরূপ দুর্যোগে বা সর্বনাশের আভাস পাওয়া গিয়েছিল সকালে।

বন্যার প্রকোপ :- প্রবল দুর্যোগে মাতলা নদীর বন্যা দরিদ্র উৎসবের সংসার, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। পরের দিন সকাল থেকে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উৎসব নাইয়া তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েকে খোঁজ করে। কিন্তু দেখা যায় তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। এমনকি সরকারের কাছে আবেদন করা জমির উইলও হারিয়ে গিয়েছিল। সর্বস্বান্ত হয়ে উৎসব নাইয়া মানসিক ভারসাম্য  হারিয়ে ফেলে। লেখকের কথায় "যা আর নেই যা ঝড়-জল -মাতলার গর্ভে গেছে, তাই খুঁজে খুঁজে উৎসব পাগল হয়েছিল।" তাই রান্না খিচুড়ি তার খাওয়া হয়নি। অর্থাৎ সর্বস্ব খুইয়ে ফেলেছিল উৎসব নাইয়া।

সর্বনাশের বহরখানা:-  প্রাকৃতিক দুর্যোগকে  সর্বনাশের বহরখানা বলা হয়েছে। যার কারণে উৎসব নাইয়ার সংসার মাটিতে লুটোপুটি খায়। দীর্ঘদিন অভুক্ত অবস্থায় থাকে সে। এরপর উৎসব নাইয়ার চেতনা ফিরলে  ভাতের আশায় বাসিনীর হাত ধরে কলকাতায় কাজে যোগ দেয়। অবশেষে ডেকচি চুরির অপরাধে তার জেল হয়। যদি আজ তার সংসার সর্বনাশ হয়ে না যেত, তাহলে হয়তো সে স্ত্রী ছেলেমেয়েকে নিয়ে সুখে দিন কাটাতো।

■ যে কোনো অশুভ ইঙ্গিত পূর্বে পাওয়া যায়। সেদিনের সেই অশুভ সঙ্কেত পেয়েছিল উৎসবের স্ত্রী। তবে হতদরিদ্রের কান্নার আওয়াজ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছায় না। তাই লেখিকা আলোচ্য গল্পে উৎসব নাইয়া চরিত্রটির মধ্য দিয়ে সেই বার্তা প্রকাশ করেছেন।


৩. "এ সংসারের সবকিছুই চলে বড় পিসিমার নিয়মে"-  বড় পিসিমা কে ?গল্পে তার চরিত্রের কি পরিচয় পাওয়া যায়?

                                উত্তর 


বড় পিসিমা:- মহাশ্বেতা দেবীর "ভাত" গল্পের বড় পিসিমার কথা বলা হয়েছে। তিনি হলেন বড় বাড়ির সর্বময় কর্ত্রী। তিনি অবিবাহিতা বয়স্ক মহিলা। সংসারের সমস্ত দায়িত্ব একা হাতে সামলান। সংসারের দায়িত্ব দেখাশোনার জন্য তাকে বড় বাড়ির সদস্যরা তার বিয়ে দেননি। তবে সেই বাড়ির লোকেরা বলে বিয়ে হয়েছে ঠাকুরের সঙ্গে। তিনি হলেন দেবতার সেবিকা।


বড় পিসিমার চরিত্র:-গল্পের অন্যতম চরিত্র হলো বড় পিসিমা।এই চরিত্রের কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, যা পাঠকের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। যেমন চরিত্রটির নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, সেবাপরায়নতা সংস্কারাছন্ন, বহু বাস্তবধর্মীতা প্রভৃতি।


নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা:- বড় পিসিমা চরিত্রে যে সহজাত ক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়, তা হল নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা। বড় বাড়িতে তার কথার কেউ বিরোধিতা করে না। তিনি চিরকাল সংসারের হেঁসেল দেখেছেন, বাড়িতে মিস্ত্রি লাগিয়েছেন, এমনকি বুড়ো কর্তার জীবন বাঁচানোর জন্য হোম যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। বহু বছর ধরেই সংসারের নিয়ম কানুন সামলানোর জন্যই বাড়ির সকলে পিসিমাকে শ্রদ্ধা করতেন।পিসিমা ছাড়া অন্য কেউ এমন নেতৃত্ব দিতে পারতেন না বড় বাড়িতে।


  সেবাপরায়নতা ও সংস্কারবোধঃ-  বড় পিসিমা সেবাপরায়ণ নারী ছিলেন।তিনি বয়স্ক দাদার সেবা করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এমনকি সংসারের প্রতিটি কাজ নিয়মরীতি পালন করেছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। তবে অন্যান্য বয়স্ক ব্যক্তির মতো তিনিও ছিলেন কুসঙস্কারাচ্ছন্ন । এ কারণেই ক্যান্সারে আক্রান্ত দাদার জীবন বাঁচানোর জন্য হোম যজ্ঞের উপর আস্থা রেখেছিলেন । আবার সেই যজ্ঞের নিয়ম ভঙ্গ করার কারণে দোষারোপ করেছিলেন বড় ও ছোটো বইয়ের বাবাকে। লেখক এর কথায় বড় পিসিমা চেঁচিয়ে বলতে থাকেন- "তিন ছেলে হোম ছেড়ে উঠে গেল যে এসব কাজে বেরুনী পড়লে রক্ষে আছে " অর্থাৎ বড় পিসিমা নিয়ম ভঙ্গকে বুড়ো কর্তার মৃত্যুর কারণ বলেছিলেন ।কারণ তিনি ছিলেন কুসঙস্কারাচ্ছন্ন মহিলা।


বাস্তব চরিত্র -শহরের ধনী পরিবারের নারী হলেও তার মধ্যে ছিল মানবিকতা ।তাই বড় বউয়ের কথার উত্তরে তিনি বলেছিলেন- তোমরা তো দশটা পয়সা দিতে পারবে না প্রাণে ধরে। এই দফায় কাজ করবে পেটে দুটো খাবে বৈতো নয়। অর্থাৎ সংস্কারাচ্ছন্ন নারী হলেও বাস্তব বোধছিল পিসির মধ্যে এ কারণে চরিত্রটি গল্পে গুরুত্ব পেয়েছে।


(বি:দ্রঃ- ভাত গল্পের নামকরণেরসার্থকতাঃ অবশ্যই দেখে রাখবে। আমাদের সাইটে প্রকাশিত প্রশ্ন ও উত্তর বা সাজেশন ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের জানাতে ভুলবে না। হয়তো তোমার একটি শেয়ার দরিদ্র অসহায় কোনো বন্ধুর কাজে আসতে পারে। )

আরো পড়ো .....


ভাত গল্পের গুরুত্বপূর্ণ MCQ AND SAQ 

ভারতবর্ষ গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর 

রূপনারানের কূলে কবিতার রচণাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর 

আমার বাংলা গ্রন্থের রচণাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর 

সম্পূর্ণ উত্তরের PDF পেতে CLICK HERE PDF DOWNLOAD

Post a Comment

3 Comments

  1. ধন্যবাদ। প্রত্যেকটা উত্তর খুব সুন্দর ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

    ReplyDelete
  2. আপনাকেও ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  3. A lot of thanks ☺️.

    ReplyDelete