গারো পাহাড়ের নীচে বসবাসকারী মানুষের জীবন যাত্রার বর্ণনা || আমার বাংলা || উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

 ড়াশোনাঃ- পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। বাংলা বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ "আমার বাংলা" সুভাষ মুখোপাধ্যায় ।এই গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি পাঠ্য গল্পের মধ্যে "কলের কলকাতা" বাদ দেওয়া হয়েছে।


● যে চারটি গল্প আমাদের পাঠ্য সেগুলি হল - (1)গারো পাহাড়ের নীচে, (2) ছাতির বদলে হাতি,(3) মেঘের গায়ে জেলখানা, এবং (4) হাত বাড়াও । 


●এই চারটি গল্প থেকে দু'টি প্রশ্ন পরীক্ষায় আসবে এবং যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে । আমাদের আলোচ্য "গারো পাহাড়ের নীচে"- গল্প থেকে সম্ভাব্য রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি দেওয়া হল।


আলোচ্য প্রশ্ন (গারো পাহাড়ের নীচে)

ক্রমিক নম্বর 
"গারো পাহাড়ের নীচে"- বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।1
"তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠলো"- প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠেছিল কেন ?কে তাদের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?2
"কিন্তু হাতি-বেগার আর চলল না।"- হাতি-বেগার আইন কী? তা আর চলল না কেন?3
"যেন রাবণের চিতা জ্বলছে তো জ্বলছেই"- রাবণের চিতার মতো আগুন কারা ,কীজন্য কোথায় জ্বালিয়েছ ?এই আগুন তাদের কিভাবে সাহায্য করে থাকে?4

 সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর আমার বাংলা গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত গারো পাহাড়ের নীচে প্রবন্ধ থেকে গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্ন-


1- "গারো পাহাড়ের নিচে"- যারা বসবাস করে তাদের জীবনযাত্রার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।               মান- 5
 
                                উত্তর 

অধিবাসী:- সুভাষ মুখোপাধ্যায় "আমার বাংলা" গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত "গারো পাহাড়ের নীচে" প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে লক্ষ করেন, গারো পাহাড়ের নীচে সুসং পরগনায় হাজং,ডালু ,গারো , কোচ প্রভৃতি জনজাতির মানুষ বসবাস করে। তবে তাদের মধ্যে হাজংদের সংখ্যায় বেশি ।যারা চাষবাসে অত্যন্ত দক্ষ।

পেশা:- গারো পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী অধিবাসীদের জীবিকা ছিল চাষবাস। যারা চৈত্র মাসের  শেষে শুকনো গাছ পালায় আগুন লাগিয়ে দেয় ।গাছপালা পুড়ে ছাই হওয়ার পর জমির উপরে বীজ ছড়ায়। এরপর ধান কাটার সময় নারী-পুরুষ উভয়েই কাস্তে নিয়ে মাঠে যায় ।তাদের ছোটো ছেলেমেয়েরা পিঠে ধানের আঁটি নিয়ে কুঁজো হয়ে হাঁটতে হাঁটতে খামারে আসে। তবে চাষবাসে অধিক যোগ্য ছিল হাজংরা। তাই তাদের চাষের পোকা বলা হত।


বাসস্থান:- গারোদের বাসস্থান গুলি ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়।  তারা জন্তু-জানোয়ারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উঁচু মাচা তৈরি করে, তাতে ঘর তৈরি করত। সেই ঘরেই তারা ঘুমানোর ব্যবস্থা, রান্না-বান্না ও হাঁস-মুরগি পালন করত।


ভাষা:- গারোদের ভাষা সম্পূর্ণ ভিন্ন । তবে হাজংদের ভাষা বাংলা হলেও রাঢ় অঞ্চলের ভাষার মতো নয় ।তারা দুধকে 'ডুড' বলে ,আবার তামাককে 'টামাক' বলে। 


জমিদারের অত্যাচার:- একসময় এই অঞ্চলে হাতির বেগার আইন প্রচলিত ছিল। ফলে প্রজারা পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করলেও অধিকাংশই দিয়ে দিত হতো জমিদারকে ।পরবর্তীতে এই আইন উঠে গেলেও জমিদারদের শাসন ও অত্যাচার বন্ধ হয়নি। তাই তাদের অবস্থা অতীতে যেমন ছিল ,তেমনই রয়ে গেছে।



2- "তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠল"- প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল কেন? কে তাদের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?


                              -   উত্তর  -

প্রজাদের বিদ্রোহঃ-সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'আমার বাংলা' গ্রন্থের অন্তর্গত "গারো পাহাড়ের নীচে" গল্পে ডালু, হাজংরা জমিদারের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কারণ গারো অঞ্চলের জমিদার পাইক- বরকন্দাজদের দ্বারা প্রজাদের উৎপাদিত ফসলের বেশিরভাগ অংশই নিয়ে নিত ভয় দেখিয়ে। প্রজারা অনেক পরিশ্রম করে মাঠে ফসল উৎপাদিত করত । কিন্তু জমিদার তাদের উৎপাদিত ফসলের বেশিরভাগই কেড়ে নিতো । এরূপ অত্যাচার দীর্ঘদিন ধরে সহ্য করতে করতে তাদের মনের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়। কিন্তু কোনোরকম বিদ্রোহ করেনি ।


হাতির বেগার আইনঃ- জমিদারের এই 'হাতির-বেগার' আইন মেনে নিতে পারেনি প্রজারা।  জমিদার জোর করে প্রজাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করলেও তারা কোনোরকম বিদ্রোহ করেনি। কিন্তু হাতিরবেগার আইনকে তারা মানতে পারল না। এই অমানবিক আইনের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ বিদ্রোহ ঘোষণা করে।  তারা জানত জমিদারের ক্ষমতার কাছে তারা পেরে উঠবে না। তবুও তারা পিছপা হয়নি । গোরাচাঁদ মাস্টার তাদের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিলেন। পরগনায় পরগনায় হল মিটিং। জমিদারের সঙ্গে লড়াই চালানোর জন্য কামারশালায় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি হতে লাগলো। কিন্তু তারা ছিল অত্যন্ত দুর্বল । তাই জমিদারের সেপাইদের কাছে পরাজিত হয়।


বিদ্রোহের নেতৃত্বঃ-এই আইনের দ্বারা জমিদার নিরীহ প্রজাদের বাধ্য করতো হাতি শিকার এর সঙ্গী হতে। জমিদার জঙ্গলের মাঝে উঁচু মাচায় বসে থাকতেন আর প্রজারা সমগ্র জঙ্গলকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে এগিয়ে চলত ফলে বহু প্রজা সাপের কামড়ে বা বাঘের আক্রমণে মারা যেত। এই অমানবিক হাতির আইনের বিরুদ্ধে প্রজারা বিদ্রোহ করে। গোরাচাঁদ মাস্টার তাদের এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যদিও এই বিদ্রোহে প্রজারা পরাজিত হয়েছিল তবুও এই বিদ্রোহের ফলেই হাতির-বেগার আইন বন্ধ হয়ে যায়।




3- "কিন্তু হাতি-বেগার আর চলল না।"- হাতি-বেগার আইন কী?  তা আর চলল না কেন?


                                 উত্তরঃ 


হাতি-বেগারঃ- সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর 'আমার বাংলা' গ্রন্থের অন্তর্গত 'গারো পাহাড়ের নীচে' রচনায় "হাতির-বেগার" আইন প্রসঙ্গটি জানা যায় । বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড়ে প্রাবন্ধিক ঘুরতে গিয়েছিলেন এবং সেখানকার অধিবাসীদের রীতিনীতি সংস্কৃতি ও তাদের সুখ দুঃখের কথা তুলে ধরেছেন 'আমার বাংলা' প্রবন্ধের মধ্যে। সেই প্রসঙ্গেই 'হাতির বেকার' আইন তুলে ধরেছেন ।তৎকালীন সময়ে জমিদারদের শখ ছিল হাতি ধরার । জমিদার সেপাহি-সন্ত্রাসীদের নিয়ে নিরাপদে পাহাড়ের মধ্যে বাধা উঁচু মাচায় থাকতেন। তিনি নিজের নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করলেও প্রজাদের জন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা ছিল না। জমিদার যখন হাতি ধরতে যেতেন,তখন পার্শ্ববর্তী সমস্ত গ্রামের প্রজাদের আসতে হতো চাল-চিঁড়ে বেঁধে ।


■ যে জঙ্গলে হাতি আছে সেখানে প্রজাদের বের দিয়ে দাঁড়াতে হত। ছেলে-বুড়ো কারো ছাড় নেই। হাতি বের দিতে গিয়ে কেউ সাপের কামড়ে, কেউ বা বাঘের আক্রমণে প্রাণ দিত। কিন্তু এ নিয়ম মানা ছাড়া কোনো গতি ছিল না। এই আইনের নাম ছিল হাতির-বেগার।



হাতির বেকার আইন বন্ধঃ- বছরের পর বছর এই আইনের অন্যায় সহ্য করতে করতে গারো পাহাড়ের অধিবাসীরা অধৈর্য হয়ে পড়ে। ফলে দ্রুত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র অঞ্চলে। গোরাচাঁদ মাস্টারের নেতৃত্বে প্রজারা একত্রিত হয়। পাড়ায় পাড়ায় মিটিং বসে, কামারশালায় তৈরি হয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র। লড়াই বাঁধে কিন্তু জমিদারের সেপাহি অপটু প্রজাদের সহজেই পরাজিত করে ।তবে এই বিদ্রোহের ফলেই চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় 'হাতি বেগার' প্রথা।



4- "যেন রাবণের চিতা- জ্বলছে তো জ্বলছেই।"- রাবণের চিতার মতো আগুন কারা, কি উদ্দেশ্যে কোথায় জ্বালিয়েছে? এই আগুন তাদের কিভাবে সাহায্য করে?



                            -    উত্তর   -


সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'আমার বাংলা' গ্রন্থের অন্তর্গত 'গারো পাহাড়ের নীচে' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন যে, ময়মনসিংহ থেকে চৈত্র মাসে রাত্রে বেলায় উত্তর দিকের যে আকাশটা দেখা যায়, প্রতিবছর আকাশটা একবার দপ করে জ্বলে ওঠে। আসলে ঐ আকাশটা হলো অবিভক্ত বঙ্গ দেশের গারো পাহাড়। বর্তমান মেঘালয় রাজ্যের অন্তর্গত। 


রাবণের চিতার মতো আগুনঃ- গারো পাহাড়ে যেসকল অধিবাসী বসবাস করেন, তাদের অবস্থা এত নিম্নমানের যে তাদের নিজস্ব কোনো লাঙ্গল, গরু কিছুই নেই ।কিন্তু খাদ্যের প্রয়োজনে তাদের পাথুরে মাটিতে ফসল ফলাতে হয়। সেই উদ্দেশ্যেই গারো পাহাড়ের ডালু হাজং অধিবাসীরা পাহাড়ের শুকনো ঝোপঝাড়ের মধ্যে আগুন লাগিয়ে দেয়। যে আগুন সারারাত জ্বলতে থাকে। দূর থেকে দেখলে যাকে মনে হয় রাবণের চিতার আগুন। গারো পাহাড়ে এই দাবানল চলাকালীন অধিবাসীরা নিজের পছন্দের শিকারি পশুর মাংস খেতে পায়।


অধিবাসীদের চাহিদা পূরণঃ গারো পাহাড়ে দাবানল চলার সময় বনের বাঘ, হরিণ, শুয়োর,  অজগর প্রভৃতি জন্তু যখন আত্মরক্ষার্থে ছুটোছুটি করতে থাকে,তখন পাহাড়িরা তাদের বিশেষত শুয়োর ও হরিণ শিকার করে মহানন্দে। সেই শিকার ধরা, খাওয়া-দাওয়া, নাচ গানের আয়োজন চলতে থাকে। ঝোপঝাড় পুড়ে ছাই হওয়ার পর পাহাড়ের গায়ে ও উপত্যকায় কালো ছাইয়ের স্তর জমে যায় ।এরপর তারা পাহাড়ের মধ্যে দানা শস্য রোপণ করে ।কয়েকদিনের  মধ্যে পাহাড়ের জগতে সবুজ রঙ ধরে ।ক্রমে ক্রমে তামাক এবং অন্যান্য ফসলে ভোরে উঠে গারো পাহাড়।



আরো পড়ো-v




Post a Comment

1 Comments