H.S NOTE 2020|রূপনারানের কূলে কবিতার রচণাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

                      *উচ্চমাধ্যমিকের কবিতা* 
                           রূপনারানের কূলে 

রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর-                                        মান 5
১."রক্তের অক্ষরে /দেখিলাম আপনার"-কবি এ কথা কেন বলেছে? 

উত্তর -কবির জীবন জিজ্ঞাসা:-দীর্ঘ জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে কেন হৃদচেতনা ফিরে পেলেন ।"শেষ লেখা" কাব্যের কবি মানবতার স্বরূপ খুঝেছেন। সত্য অন্বেষণে ধ্যানমগ্ন কবি সমগ্র মানব জীবনের মূল্যায়ন করেজীবন বাস্তবতার কষ্টিপাথরে নিজেকে নিরীক্ষণ করে নিজের স্বরূপ অনুসন্ধান করেছেন।

 সত্যের স্বরূপ সন্ধান:- নদী যেমন সরলরেখায় চলতে পারে না তেমনি রবীনাথ ঠাকুরের জীবনও সহজ সরলভাবে কাটেনি ।জীবন নদীর প্রতিটি বাঁকে কবি আহত হয়েছেন ও ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন ।সেই চরমতম সংকটের সময়ে কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন থেকে কবি সত্য অন্বেষণে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন জীবনের অন্তিমলগ্নে । গভীর অধ্যবসায় নিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি সত্যের জন্য অপেক্ষমান নবপ্রাণে জেগে উঠে কবি শেষবারের মতো জীবনকে দেখতে চেয়েছেন, চেয়েছেন মূল্যায়ন করতে ।কিন্তু কবি বারবার আহত ও রক্তাক্ত হয়েছেন কঠিন কঠোর বাস্তবের আঘাতে।অবশেষে দুঃখের সাগর মন্থন করেই কবি পেয়েছেন সত্যের সন্ধান।তাই তিনি লিখেছেন।-
                            "সত্য যে কঠিন, /
                     কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,/ 
                    সে কখনো করে না বঞ্চনা।" 
অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত কবি বাস্তবের কঠিন সত্য কে ভালবাসলেন ,তাকে স্বীকার করলেন এবং খুঁজে পেলেন জীবনের বাস্তব সত্য। 
জীবন সত্য লাভ:-রক্তঝরা জীবনকে আলিঙ্গন করে রবি কবি খুঁজে পেয়েছেন জীবনসত্যকে , আবিষ্কার করেছেন নিজেকে- সেই প্রাপ্তির আস্বাদ ব্যক্ত হয়েছে "রূপনারানের কূলে" কবিতায়।সমগ্র জীবনে প্রাপ্ত দুঃখ আঘাত কবিকে খাঁটি সোনায় রূপান্তরিত করেছিল । 

2."জানিলাম এ জগৎ/ স্বপ্ন নয়"- রূপনারানের কূলে কবিতা অবলম্বনে কবির এই ভাবনার তাৎপর্য লেখো।

উত্তর:-কবির জীবন-মৃত্যুর স্বরূপ প্রাপ্তি :-জগৎ ও জীবন নিয়ে অনন্ত জিজ্ঞাসায় ক্লান্ত রবীনাথ ঠাকুর জীবন মৃত্যুর রহস্যকে স্বপ্ন মনে করেছেন। বহু বর্ণময় জীবন কবিকে শুধুই কল্পজগতের মধ্যে নিয়ে গিয়েছে ফেলে দিয়েছে কুহকের আবর্তে। শ্রান্ত ও প্রায় চেতনাহীন কবি শেষপর্যন্ত খুঁজে পেয়েছেন জীবন-মৃত্যুর স্বরূপকে কঠোর তপস্যা মাধ্যমে। ভগ্ন হৃদয়ের সেই সুদ্ধ অনুভবের কাব্যগ্রন্থ হয়ে উঠেছে "রূপনারানের কূলে" কবিতাটি। বিষাদ ভারাক্রান্ত কবিতা:-রূপ রস গন্ধে ভরা প্রকৃতির পানে চেয়ে কবি মুগ্ধ হয়েছেন।অপরদিকে জীবন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে বারবার আহত হয়েছেন। দ্বিধাদ্বন্দের দোলাচলে থেকে জীবন-মৃত্যুর স্বরূপ কবির কাছে দীর্ঘকাল অধরা মাধুরী হয়ে থেকেছে। তাই জীবনের সত্য অন্বেষণে কবির জীবন বিষাদে ভরে গেছে।জীবনকে তার মনে হয়েছে অর্থহীন ঘটনাবলীর সমষ্টি মাত্র ।

 জীবনসত্য আবিষ্কার:-কিন্তু জীবনের অন্তিম লগ্নে পৌঁছে কবি সহসা আবিষ্কার করেছেন কঠিনের আবরণে মোড়া জীবনসত্যকে। তপস্যায় প্রাপ্ত সে সত্য কবিকে মুগ্ধ করেছে, অপসৃত হয়েছে কুহকের আবরণ । তাই কবি লিখেছেন-
                       "জেগে উঠিলাম,/
                      জানিলাম এ জগৎ,/
                             স্বপ্ন নয়।"
 দীর্ঘজীবনপাত্রখানি সহসা পরিপূর্ণ ও অর্থবহ হয়ে উঠেছে ।সফলতার পরশে যাবতীয় চিত্তচাঞ্চল্য হয়েছে বিদূরিত। সেই তৃপ্তিবোধে জগৎ আর স্বপ্নময় থাকেনি ।জীবনকে কল্পলোকের কোন আয়োজন বলে মনে হয়নি কঠিন হলেও সেই জীবন বাস্তবতাকেই স্বর্ণরেণুরূপে সংগ্রহ করেছেন কবি,দ্যুতিতে রাঙিয়ে নিয়েছেন জীবনের অন্তিমলগ্নকে।

 3"আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,"-বক্তা জীবনকে দুঃখের তপস্যা কেন বলেছেন তা আলোচনা করো । 

উত্তর :-দুঃখের তপস্যা বলার কারণ :-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "শেষ লেখা" কাব্যগ্রন্থের "রূপনারানের কূলে"কবিতায় কবি গভীর জীবনবোধের প্রগাঢ়তায় এ উপলব্ধি করেছেন। কবির কাছে জীবন মানে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। "রূপনারানের কূলে" জেগে উঠে কবি তাই অনুভব করেছিলেন দুঃখ ,জরা, মৃত্যু, ব্যাধি এজীবনে প্রতিনিয়ত থাকবেই।" দুঃখের আঁধার রাত্রি"- কবিতায় কবি তাই বলেছেন-
             দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে/ 
                   এসেছে আমার দ্বারে ।"
দুঃখ মৃত্যুর ছলনা ও মিথ্যা আশ্বাসের প্রতারণা যে বুঝতে পারে সেই "শান্তির অক্ষয় অধিকার লাভ করে" সমালোচক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন -"কঠোর দুঃখের তপস্যা করিয়া তিনি আত্মস্বরূপ দেখিতে পারিয়াছেন।"
■রক্তের অক্ষরেই কবি আপনার রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন, চিনেছেন "আঘাতে আঘাতে, বেদনায় বেদনায়"।জীবনের মিথ্যা কুহক ছেড়ে কবি তাই সত্যকে ভালোবেসেছেন। কারণ সত্য কঠিন হলেও -"সে কখনো করে না বঞ্চনা।"দুঃখকে অতিক্রম করে সত্যের যথার্থতা উপলব্ধি করেই কবির মনে হয়েছে "আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন।

জীবন দুঃখের দুঃসহ প্রবাহ:-কবি দেখেছেন জীবন হলো দুঃখ ও সুখের নিরন্তর প্রবাহ ।কিন্তু তার স্বরূপ উপলব্ধি করতে গিয়ে কবির মনে হয়েছে এ জীবন অনন্ত দুঃখ ব্যথায় আকীর্ণ দুঃসহ প্রবাহধারা। বাস্তবতার নির্মম আঘাতে আহত কবি চেতনারহিত হয়ে পড়েছেন । ক্লান্ত-শ্রান্ত -অবসন্ন কবি জীবনের অন্তিম লগ্নে সত্যকে খুঁজে পাওয়া অনুভব করেছেন-"রূপনারানের কূলে ,/জেগে উঠিলাম ।"অর্থাৎ নবচেতনায় ঋদ্ধ কবি অবশেষে সম্বিৎ ফিরে পেয়েছেন। 

একনজরে:- অনুরূপ উত্তর দেওয়া যাবে-
(1) কঠোর দুঃখের তপস্যা করে কবি কিভাবে আত্ম সরূপ দেখতে পেয়েছেন তা কবিতা অনুসরণে লেখ। 

2.রচণাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হবে কমবেশি দেড়শো শব্দে।

 3.কবিতার নাম কাব্যগ্রন্থের নাম বা কবিতার কোনো লাইন ব্যবহার করলে তা অবশ্যই কোট চিহ্নের মধ্যে রাখতে হবে।

Post a Comment

0 Comments