নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর||উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

নানা রঙের দিন:- উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্য নানা রঙের দিন নাটক থেকে mcq & acq এবং বড় প্রশ্ন আসে । তাই নাটকটি খুঁটিয়ে পড়ার সাথে সাথে সম্ভাব্য mcq ও acq এবং  রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর  পড়তে হবে। তোমরা অনেকেই খুঁজে চলেছে- নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর , নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর , নানা রঙের দিন নাটকের নামকরণের তাৎপর্য ,  নানা রঙের দিন নাটকে রজনীকান্ত চরিত্র , নানা রঙের দিন ছোট প্রশ্ন উত্তর ,  নানা রঙের দিন নাটকের বিষয়বস্তু , নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর ২০২২ , নানা রঙের দিন নাটক pdf download , নানা রঙের দিন mcq & saq, নানা রঙের দিন mcq , নানা রঙের দিন saq ইত্যাদি। তাই তোমাদের কথা ভেবেই আজকের পোষ্টটি আপলোড করা হলো।

■ নানা রঙের দিন নাটকটি ভালোভাবে পড়লে অবশ্যই তোমাদের কমন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তোমাদের সুবিধার্থে আমরা সম্ভাব্য mcq acq ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি, যেগুলি পাঠ করলে তোমাদের উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলার প্রস্তুতি অনেকটা ভালো হয়ে যাবে।


নানা রঙের দিন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নাটক সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-


নানা রঙের দিন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
নাটকের উৎসরুশ নাট্যকার আনন্ত চেকভের"Swan Song" 
চরিত্রঃ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের(68) ও কালীনাথ সেন(60)
নাটকের প্রকৃতি একাঙ্ক নাটক
পটভূমিথিয়েটার 


অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা রঙের দিন নাটকের বাছাই করা mcq মান-1

1. ' আর কি এ বয়সে এতো সয় '- কোন প্রসঙ্গে একথা বলা হয়েছে ?

Ans : মদ্যপান সম্পর্কে 
 
2. 'কিন্তু কার্টেন উঠবেই '- কার্টেন উঠলে প্রথমে কী দেখা যাবে ?
Ans : শ্মশানঘাট 

3. 'রাজনীতি বড়ো কূট  '- বক্তা কে ? 
Ans : রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায় 

3. রজনীকান্ত থিয়েটারে আসার আগে কীসের চাকরি করতেন ?
Ans : পুলিশের 

4. 'তারা সব গাধা '-  কারা গাধা ?
Ans : যারা বলে নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প 

5. 'তাও আর কয়েক বছর পরে মানাবে না আমাকে '- কোন চরিত্রের ভূমিকায় মানাবে না ?
Ans : দিলদারের 

6. রিজিয়া নাটকের রচয়িতা কে ?
Ans : মনমোহন রায় 

7. রজনীকান্ত মঞ্চে অভিনয় করেছেন কত বছর ?
Ans : ৪৫ বছর 

8. 'রজনীকান্ত অভিনয় চলাকালীন দুবার স্পষ্ট শুনেছিলো '- কী  শুনেছিল ?
Ans : মাইরি এই না হলো এক্টিং 

9. দিলদারের পোশাক পরিহিত রজনীকান্তের হাতে কী ছিল ?
Ans : জ্বলন্ত মোমবাতি 

10. সাজাহান নাটকের রচয়িতা কে ?
Ans : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় 

11. 'আমি লাস্ট সিনে প্লে করবো না ভাই '- লাস্ট সিন্ কী ?
Ans : মৃত্যুকাল 

12. শিল্পাকে যে মানুষ ভালোবেসেছে '- রজনীকান্তের মতে তার কী  নেই ?
Ans :  বার্ধক্য , একাতিত্ব ও রোগ নেই 

13. 'Farewell the tranquil mind ! farewell content ' -  উক্তিটির মূল উৎস কোন নাটক ?
Ans : ওথেলো 

14. 'গ্রিনরুমে ঘুমোই '- কে ঘুমান ? 
Ans : কালীনাথ সেন 

15. 'আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পরা গেছে যা হোক '- কাকে পাগল বলা হয়েছে ? 
Ans : রামব্রিজ 

16. 'Life 's But walking shadow '- এই সংলাপটি কোন নাটকের ? 
Ans :  ম্যাকলে 

17. রজনীকান্তবাবুর  মতে অভিনেতা স্টেজ থেকে নামলে কী  হয়ে যায় ?
Ans : অস্পর্শ ভাঁড় 

18. রজনীকান্ত রামব্রিজকে কত টাকা বকশিস দিয়েছিলেন ? 
Ans : ৩ টাকা 

19. 'তোমার চোখে জল ' - কার চোখে জল দেখা গিয়েছিল ?
Ans : কালীনাথের 

20. 'নানা রঙের দিন ' নাটকটিতে কয়টি চরিত্র আছে ? 
Ans : দুটি 

21. রজনীকান্ত কোন ঐতিহাসিক চরিত্রের পোশাকে ফাঁকা মঞ্চে প্রবেশ করেন ?
Ans : দিলদারের 

22. রজনীকান্ত নাটকের সূচনায় মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে হাসছিলেন কেন ? 
Ans : গ্রিনরুমেই ঘুমিয়ে পড়ার  ভেবে 

23. 'ঘুরেফিরে কানে বাজছে আমার '- ঘুরেফিরে বক্তার কানে কী  বাজছে ? 
Ans : গলাটা 

24. 'কাল রাতেও ঠিক একই ব্যাপার '- ব্যাপারটা কী  ?
Ans : মদ গিলে গ্রিনরুমে পড়ে থাকা 

25. রামব্রীজকে বকশিশ দেওয়ার কারণ কী ? 
Ans : রাজনীবাবুকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ট্যাক্সি ডেকে আনা 

26. 'সেই টাকায় তিনি নিজেই আজকে মদ গিলে কোথায় পড়ে আছেন।'- তিনি কে ?
Ans : রামব্রীজ 

27. রজনীকান্ত চুলে কলপ লাগান কতবার ?
Ans ; প্রত্যহ হাফ শিশি 

28. 'এক-পা এক-পা করে এগিয়ে চলেছে '- কীসেরদিকে এগিয়ে চলেছে ?
Ans : মৃত্যুর দিকে 

29. 'সব মিলিয়ে যেন একটা শ্মশান ,'- কারণ কী ?
Ans : সব গভীর অন্ধকারে ডুবে আছে 

30. 'দেওয়ালে কালো কালো অঙ্গারে  আছে '- কী লেখা আছে ?
Ans : জীবনের শেষ কথাগুলো 

31. 'মদটা ছেড়ে দিন রাজনীবাবু,মদটা ছেড়ে দিন। '- একথা বলার কারণ কী ?
Ans : তিনি বুড়ো হয়ে গেছেন

32. 'সারা রাত ধরে এসইব ভাবলে '- কী হওয়ার সম্ভাবনা আছে ?
Ans : হার্টফেল করার 

33. কালীনাথ রাতে গ্রিনরুমে কী করেছিলেন ?
Ans : ইদানিং তিনি মালিকের অজ্ঞাতসারে গ্রিনরুমেই রাত কাটাতেন 

34. 'আসলে যতক্ষন স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকি ততক্ষন '- স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন কী  হয় ?
Ans : কদর 

35. 'আর একরকম করে জীবন শুরু করা গেল ,'- কীভাবে জীবন শুরু করা গেল ?
Ans : নাটক নিয়ে 

36. 'আর একদিন তাকে দেখে মনে হয়েছিল '- কী মনে হয়েছিল ? 
Ans : ভোরের আলোর চেয়েও সুন্দর 

37. মেয়েটি রজনীকান্তকে কেবল কোন  চরিত্রে পার্ট করতে দেখেছিলো ?
Ans : আলমগিরের 

38. রজনীকান্ত 'রিজিয়া ' নাটকের কোন চরিত্রের সংলাপ বলেছেন ? 
Ans : বক্তিয়ার  

39. ' A horse ! A horse ! My kingdom for a horse ! ' - কোন নাটক থেকে উক্তিটি গৃহীত ? 
Ans : নানা রঙের দিন 


 

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা নাটক নানা রঙের দিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ SAQ



1.'আপনি বামুন মানুষ মিছে কথা বলবো না '- বক্তা কোন সত্যি কথাটি বলেছিল ?

Ans :    'নানা রঙের দিন ' নাটকে বক্তা কালীনাথ বামুন মানুষ রজনীকে বলেছিলো যে ,সে রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রিনরুমে ঘুমায়। 


2. 'তোমার চোখে জল ,কেন বলতো '- শ্রোতার চোখে জল আসার কারণ কী  ? 

Ans :    বৃদ্ধ অবস্থাতেও অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ে শ্রোতা কালীনাথ অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন।  তাই দুঃখে ,আবেগে ও ভালোবাসায় তার চোখে জল আসে। 


3. 'তারপর একদিন, বুঝলে -চাকরিটা ছেড়ে দিলাম '- বক্তা চাকরি ছেড়েদিয়েছিলেন কেন ?

Ans :     নাটক নিয়ে নতুন জীবন শুরু করার উদ্দেশ্যেই বক্তা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায় পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। 


4.  'come on ,quick ! মহম্মদের ক্যাচটা দাও তো '- মহম্মদ কে ? মহম্মদের ক্যাচ কে দিয়েছিলেন ? 

Ans :     সাজাহান নাটকে ঔরঙ্গজেবের পুত্র হলেন মহম্মদ।  রজনীর অনুরোধে কালীনাথ মহম্মদের ক্যাচ দিয়েছিলেন। 


5. 'আর এরকম করে জীবন শুরু করা গেল '- সেই জীবনটা কেমন ছিল ? 

Ans :      বক্তা রজনীকান্তের শুরু হওয়া নতুন জীবনটা ছিল অত্যন্ত রঙ্গিন।  অভিনেতা রজনীর নাম-ডাক ছিল অনেক।  তিনি ছিলেন খ্যাতি তো সাফল্যের শীর্ষ পর্যায়ে।  



6.'দিলুম ,তোকে বকশিশ  দিলুম ।'- কে, কাকে বকশিশ দিলেন ?

Ans :     নাট্য অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায় রামব্রিজকে বকশিশ দিলেন। 


7. 'তাতে বয়সটা ঠিক বোঝা যায় না ' - কীসে  'বয়স' বোঝা যায় না ?

Ans :    রাজনীকান্তবাবু ছোকরাদের মতো ঢং করতে পারেন, লম্বা চওড়া  চেহারা তার। তাছাড়া লম্বা লম্বা চুলে প্রতিদিন হাফ শিশি করে কলপ লাগিয়ে এমন ইয়ার্কি মারেন যে , তার বয়সটা ঠিক বোঝা যায় না।  


8. 'এখানেই গল্প শেষ।'-  গল্পটির বিষয় কী  ছিল ?

Ans :      প্রশ্নে প্রদত্ত উক্তিটিতে 'গল্প ' বলতে বোঝানো হয়েছে মানুষের জীবনকে।  জন্মের পর থেকে স্বাভিক জীবনক্রম অতিবাহিত করতে করতে মানুষ ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। শৈশব,যৌবন,পৌঢ়ত্বের পথ পেরিয়ে আসে বার্ধক্য।  তারপরই সব গল্প শেষ। 


9. 'পঁয়তাল্লিশ বছর থিয়েটারের জীবনে এই প্রথম মাঝরাতে একা '-  মাঝরাতে একা দাঁড়িয়ে থাকার কারণ কী ? 

Ans :     পঁয়তাল্লিশ বছর থিয়েটার জীবনের সমাপ্তির পর হল খালি হয়ে যাওয়ায় রজনীবাবু একা মাঝরাতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন।  তিনি ওইদিন মদ খেয়ে গ্রিনরুমেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। 


10. 'মরা হাতি সোয়া লাখ।'- কার সম্পর্কে , কোন প্রসঙ্গে এমন প্রবাদ  প্রয়োগ করা হয়েছে ?  

Ans :   প্রবীণ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়ের অভিনয় দক্ষতা প্রসঙ্গে প্রবাদটি প্রয়োগ করা হয়েছে। 


11. অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যের জীবনে আসা মেয়েটি কেমন ছিল ?

Ans :    অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়ের জীবনে আসা মেয়েটি ছিল বেশ লম্বা,ফর্সা,সুন্দর,ছিপছিপে গড়নের। তার বয়স ছিল উঠতি এবং তার মনটাও ছিল দারুন ভালো।  তাতে কোনো ঘোরপ্যাচঁ ছিল না। 


12. 'একদিন তাকে দেখে মনে হয়েছিল '- কী  মনে হয়েছিল ?

Ans :       একদিন মেয়েটিকে দেখে অভিনেতা রজনীকান্তের মনে হয়েছিল যে, ভোরের আলোর চেয়েও মেয়েটি সুন্দর। 


13. 'মরে যাব তবু ভুলব না ,'- বক্তা কী ভুলবেন না ?

Ans :        বক্তা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায় তার দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটির অদ্ভূত চাহনি কখনোই ভুলবেন না।    


14. 'সেই রাত্রেই জীবনে প্রথম মোক্ষম বুঝলুম '- বক্তা কী বুঝেছিলেন ?

Ans :      থিয়েটারে অভিনয় দেখে প্রেমে পড়া মেয়েটি বিয়ের সময় যখন রজনীকান্তকে অভিনয় ছেড়ে দিতে বলে সেই রাতেই বুঝেছিলেন যে , যারা নাট্যাভিনয়কে পবিত্র শিল্প বলে তারা সবই গাধা।  তারা সব মিথ্যা কথা বা বাজে কথা বলেন। 


15. 'খুব খারাপ হচ্ছে না ,কী বলো ?'- কী খারাপ হচ্ছে না ?

Ans :    দ্বিজেন্দ্রলালের 'রিজিয়া' নাটকে বক্তিয়ারের  মুখের সংলাপটি আওড়েছেন রজনী চাটুজ্জে মহাশয় , এখানে সেই সংলাপটি খারাপ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। 


16. 'নানা রঙের দিন' নাটকে রজনীকান্ত ঔরঙ্গজেব ও মহম্মদের  যে দৃশ্যের কথা বলেছিলেন সেটি কোন নাটকের অংশ ?

Ans :    'নানা রঙের দিন' নাটকে রজনীকান্ত ঔরঙ্গজেব ও মহম্মদের যে দৃশ্যের কথা বলেছিলেন সেটি 'সাজাহান ' নাটকের অংশ। 


17. 'রাজনীতি বড়ো কূট।'- একথা কে বলেছিলেন ? 

Ans :     দ্বিজেন্দ্রলালের 'সাজাহান' নাটকে প্রশ্নে প্রদত্ত উক্তিটি করেছিলেন ঔরঙ্গজেব।  তবে 'নানা রঙের  দিন' নাটকে  প্রশ্নে আলোচ্য উক্তিটি ধ্বনিত হয়েছে প্রবীণ অভিনেতা রজনীকান্ত চাটুজ্জের কন্ঠে।   


18. 'এই তো জীবনের সত্য কালীনাথ '- সত্যটি কী ?

Ans :     প্রতিভা যার আছে, বয়সে তার কিছু এসে যায় না।  এটাই হল জীবনের সত্য। 


19. 'সত্যি কথা বলতে কী '- সত্যি কথাটি কী ?

Ans :     সত্যি কথাটি হল অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়ের মতে তার প্রতিভা-টতিভা কিছু নেই, দিলদারের অভিনয়টা তিনি মন্দ করেন না।  তবে বয়সে ক্রমশ প্রবীণ হয়ে পড়ায় কয়েক বছর তাকে তাও মানাবে না।  


20. 'আমি বলছি রজনী চাটুজ্জে মরবে না '- কেন মরবে না ? 

Ans:      শিল্পীর দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও প্রতিভার কোন দিন মৃত্যু হয় না সেই কারণেই কালীনাথ বলেছেন যে ,রজনী চাটুজ্জে মরবে না।  



উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর 






1. "অভিনেতা মানে একটা চাকর-একটা জোকার ,ক্লাউন।  লোকেরা সারাদিন ঘেটে ঘুটে এলে তাদের আনন্দ দেওয়াই হল নাটকওয়ালাদের  একমাত্র কর্তব্য "- বক্তার কথার তাৎপর্য আলোচনা কর। 

Ans :  প্রসঙ্গ : অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নানা রঙের দিন' নাটকে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায় অভিনয়ের শেষে মদ্যপান অবস্থায় ফাঁকা মঞ্চে নিজের আত্মসমালোচনা করতে গিয়ে আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন।  গ্রিনরুমে ঘুমিয়ে পড়া রজনীকান্তকে একা ফেলে বাড়ি চলে যান।  হটাৎ জেগে উঠে দিলদারের পোশাক পড়া রজনী ফাঁকা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভয় অনুভব করেন।  অবশেষে কালীনাথের উপস্থিতিতে নিজের আত্মসমালোচনায় মগ্ন হন। 

তাৎপর্য :  মঞ্চে রজনী কালীনাথের উপস্থিতিতে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার জন্য স্মৃতি  রোমন্দন করেন।  তার যৌবনের উজ্জ্বল জীবন, নাটকের খ্যাতি ,প্রেমিকার স্বার্থপরতা সবকিছুই মনে পরে। নিজেকে আবিষ্কার করেছেন একজন প্রতিভাবান শিল্পী হিসেবে।  কালীনাথকে এবিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে উৎসাহ দেন।  ফলে একে একে অতীতের হতাশা থেকে মুক্তি ঘটতে থাকে তার।  কিন্তু বিগত প্রেমজীবনের প্রসঙ্গ এলে থমকে যান রজনীকান্ত।  যে ভালোবাসার জন্য সুনিশ্চিত সুখের জীবনকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন ,তার জন্যই আজ তিনি সম্পূর্ণ একা।  নাটকের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থাকার জন্যই তিনি প্রেমিকাকে ত্যাগ করেছিলেন। তবে সেই নাটকের ভালোবাসার পরিণয় তাকে সম্পূর্ণ মূল্যহীন নিঃসঙ্গ উপহার দিয়েছে। 

ব্যাখ্যা : জীবনের শেষপর্যায়ে পৌঁছে রজনীকান্ত উপলব্ধি করেছেন নাটকওয়ালা একজন চাকর ,জোকার ও ক্লাউন ছাড়া আর কিছু নয়।  কারণ সমাজের মানুষেরা সারাদিনের ক্লান্তিমোচনের জন্যই নাটক দেখতে আসে। সেই সব মানুষদের মনোরঞ্জন করেই হল নেতাকওয়ালাদের কর্তব্য। মঞ্চ থেকে নামলেই সেই সকল মানুষের সমাজে আর কোনো মূল্য থাকে না। তাই রজনী কালীনাথকে জানিয়েছেন - 'থিয়েটারের পরিচয়ে কেউ তার মেয়ে কিংবা বোনের সঙ্গে বিয়ে দেবে কারো?কক্ষনো না।' অর্থাৎ নাটকের শিল্পীদের সমাজের মানুষ গ্রহণ করতে চায় না।

মন্তব্য :  হৃদয়ে শত দুঃখ ,কষ্ট থাকা সত্ত্বেও জোকার বা ক্লাউনদের মঞ্চে হাসতে হয় এবং লোককে হাসাতে হয়। নিজের কষ্ট বা দুঃখকে তারা লুকিয়ে রাখে অভিনয় করার সময়।  তেমনি রজনীকান্ত নিজের নিঃসঙ্গতা একাত্বিত্ত ও হতাশাকে লুকিয়ে রেখে হাসির নাটক করতে বাধ্য হন।  তাই তিনি নিজেকে চাকর বা জোকারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। 




2. 'নানা রঙের দিন' নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ কর। 

Ans:  চরিত্র বিশ্লেষণ : অজিতেশ বন্ধ্যোপাধ্যায়ের 'নানা রঙের দিন' নাটকের প্রধান চরিত্র হল রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়।  সহ অভিনেতা কালীনাথ সেন চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য মূল চরিত্রকে সহযোগিতা করেছেন।  সম্পূর্ণ নাটক পর্যালোচনা করলে চরিত্রটির কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট পাওয়া যায় ,সেগুলি হল - 

ব্যাক্তি রজনীকান্ত: অভিনেতা রজনী ছিলেন সমাজের একজন দায়িত্ববান নাগরিক। তার  কথা তিনি  অনুযায়ী রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহন করেন। অভিনয়ের পূর্বে তিনি পুলিশের চাকরি করতেন।  অর্থাৎ তিনি ছিলেন ইন্সপেক্টর অফ  পুলিশ।  সে  সময় তার চেহারায় জেল্লা ছিল , শরীরে ছিল শক্তি , তার মনে ছিল সাহস।  আজকের চেয়েও চারগুন বেশি খাটার ক্ষমতা ছিল তার। কিন্তু অভিনয়ের জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। অন্যান্য সমাজের তরুনের মতোই তারও জীবনে একটি সুন্দরী বড়োলোকের মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু অভিনয়ের  জন্যই সেই সম্পর্ক বিবাহ পর্যন্ত গড়ায়নি। 

নিঃসঙ্গ ও একাকী চরিত্র : অভিনেতা রজনীকান্তের জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে সম্পূর্ণ যন্ত্রনাময় একাকী জীবন অতিবাহিত করেন অতীত গৌরব হারানো অভিনেতা জীবন যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার জন্য সস্তা দামের মদ্যপান করেন।  শিল্পের জন্যই তিনি গ্রাম, পরিবার , আদর্শ শক্তি ,নারী ও প্রেমকে বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ৪৫ বছরের অভিনয় জীবন অতিক্রম করে বার্ধক্য বয়সে উপলব্ধি করেন- 'পৃথিবীতে আমি একা , আমার আপনজন কেউ নেই -বউ নেই ,ছেলে-মেয়ে নেই, সঙ্গী-সাথী নেই,কেউ কোথাও নেই -আমি একদম একা।' অর্থাৎ তিনি সম্পূর্ণ একা হয়ে যান। শুধুমাত্র শিল্পকে ভালোবেসে। তাই বেদনার্ত কন্ঠে সমস্ত দুঃখ যন্ত্রণাকে প্রকাশ করেছিলেন কালীনাথের সম্মুখে। 

দ্বন্দময়  চরিত্র : রজনীকান্তের চরিত্রের মধ্যে দ্বন্দ লক্ষ করা  যায়। একদিকে ছিল শূন্য জীবনের হাহাকার ,অন্য দিকে ছিল প্রতিভার দ্বারা বার্ধক্য , রোগ ও মৃত্যুকে জয় করার চেষ্টা। এই দুই সত্যের দ্বিধায় তিনি ঔরঙ্গজেবের মতো গ্লানিময় ও ওথেলোর মতো সর্বস্ব হারানো ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। অবশেষে রজনীকান্ত দদ্বিতীয় সত্যটিকে স্বীকার করে নেন। 

উপসংহার :  জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে রজনীকান্ত  বুঝতে পারেন, নাটকওয়ালাদের সামাজিক সম্মান নেই।  তাদের কাজ কেবল খদ্দেরদের আনন্দ দেওয়া। মৃত্যু  ছাড়া আর কোনো  পথ থাকে না বয়স্ক শিল্পীদের।  প্রতিভা দিয়েও এই সত্য বদলানো  যায় না। তাই তিনি এই সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে ওথেলো নাটকে উক্তি করেছেন- 'Life's but walking shadow ,A poor player/ that struts and frets his hour upon the stage / and then is heard no more.' 




  
           
3. 'নানা রঙের দিন' একাঙ্ক নাটক হিসেবে কতখানি সার্থক আলোচনা কর। 

Ans:  ভূমিকা:  নাটকের বিভিন্ন অংশের মধ্যে একজন অভিনেতার দ্বারা পরিচালিত অভিনয় এক অঙ্ক বিশিষ্ট নাটক নাম পরিচিত।  যাকে one act play বা একাঙ্ক নাটকও বলা  হয়।  এরূপ নাটকে একটিমাত্র দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে নাটক সম্পূর্ন হয়। ফলে নাটকের মঞ্চ সজ্জার জন্য নানান সরঞ্জাম আলোও জ্বালানোর প্রয়োজন হয় না। স্বল্পকালীন মুহূর্তে মুষ্টিমেয় চরিত্রের দ্বারা অভিনয়ের দক্ষতায় নাটকটি ফুটিয়ে তোলা হয়।  এরূপ নাটকের গভীরতা লুকিয়ে থাকে চরিত্রের সংলাপের মধ্যে। নাটকীয়তা ছাড়াই শুধুমাত্র সংলাপের  মধ্য দিয়েই নাটকটি শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাবে। 

বিষয়বস্তু: আলোচ্য 'নানা রঙের দিন' নাটকটির সম্পূর্ণ বিষয় সীমাবদ্ধ মাত্র একটি রাতের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই। নাটক শেষে বৃদ্ধ অভিনেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে আত্মগ্লানিতে মগ্ন হয়। এরপর কালীনাথ সেনের সঙ্গে কথাপোকথনের মধ্য দিয়েই নাটকটি শেষ হয়। রজনীকান্ত  নিজের দীর্ঘজীবনের অভিজ্ঞাতা থেকে জানিয়েছিলেন যে নাটকওয়ালারা জোকার বা ক্লাউন ছাড়া আর কিছু নয়। নাটকের মুহূর্তগুলিকে প্রথম জীবনে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল রজনীকান্তের। কিন্তু বাস্তবের কঠিন কোষ্ঠী পাথরের আঘাতে স্বপ্নের মায়াজাল ছিন্ন করে রজনীকান্ত বাস্তব ও কঠিনকে অনুর্ভব করেন। তার মূল্য মঞ্চে হ্রাস পেয়েছে ,আগের মতো প্রতিভার দ্বারা চরিত্রগুলিকে ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা কমে গেছে। অতীতের স্মৃতিচারণ করে রজনীকান্ত নিজের অসম্পূর্ণতাকে ঢাকাতে চেয়েছিলেন। অবশেষে হতাশ হয়ে জীবনের চূড়ান্ত সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নেয়।
 
একাঙ্ক নাটক: উপন্যাস ও ছোট গল্পের মধ্যে যেমন বৈশিষ্টগত তফাৎ রয়েছে তেমনি একাঙ্ক নাটক ও সাধারণ নাটকের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। ছোট গল্প যেমন কোনো একটি বিষয় বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়,তেমনি একাঙ্ক নাটক কোনো একটি মুহূর্তকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। আলোচ্য নাটকটি আবর্তিত হয়েছে শুধুমাত্র কয়েক মুহূর্তের কথাপোকথনকে কেন্দ্র করেই। কোনো দীর্ঘ জীবন বা একাধিক ঘটনার ঘনঘটা নেই। তাই 'নানা রঙের দিন' এক অঙ্ক বিশিষ্ট একাঙ্ক নাটক। 

স্বার্থকতা: সমগ্র নাটকটি লক্ষ করলে দেখা যায় যে নাটকের চরিত্রগুলি উপস্থাপনার ক্ষেত্রে একমুখীনতা রয়েছে , চরিত্রগুলির গভীর ও সুষ্ট সংলাপ , রহস্যময় পর্যায় নাটকের চূড়ান্ত climax ,ঘটনার বর্ণনা প্রভৃতি নাটকটিকে একাঙ্ক নাটকের মর্যাদা দিয়েছে।  সুতরাং বলা যায় 'নানা রঙের দিন' একটি স্বার্থক একাঙ্ক নাটক।  



4. 'শিল্পকে যে মানুষ ভালোবেসেছে'- 'নানা রঙের দিন' নাটক অবলম্বনে মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখ।  শিল্পকে যে মানুষ ভালোবেসেছে তার কী  নেই ? 

Ans: ভূমিকা: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় 'নানা রঙের দিন' নাটককে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ ৬৮ বছরের অভিনয় জীবনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন জীবনের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে তিনি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। তিনি বলেছেন শিল্পকে যারা ভালোবাসে তাদের বার্ধক্য ,রোগ ও মৃত্যু নেই।  অভিনেতারা প্রতিভার মধ্য দিয়েই দর্শকের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকেন। গভীররাতে মাদকাসক্ত অভিনেতা নিজের আত্মগ্লানির কারণে এরূপ মন্তব্য করেছিলেন। নিজেই নিজেকে শান্তনা প্রদানের উদ্দেশে কালীনাথ সেনকে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। 

প্রসঙ্গ: অভিনয়ের শেষে গভীর রাতে হঠাৎ জেগে ওঠা রজনীকান্ত দর্শক শূন্য মঞ্চে উপস্থিত হয়ে জীবনের সকল-দুপুর ও বিকেলকে অনুভব করেন। মৃত্যু ছাড় আর কোনো কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছে না। থিয়েটারের ওয়ালে কালো অঙ্গারে লেখা ছিল রজনীর ৬৮টা বছরের জীবন কাহিনী। ফলে তিনি ভয় পেয়ে যান ,মন্তব্য করেন- 'যান যান মেকাপ -টেকাপ তুলে ,চুল-টুল আঁচড়ে ,ভদ্র গোছের জামা কাপড় পরে বাড়ি যান দিকিনি। কিযে পাগলামি করেন। সারারাত ধরে এইসব ভাবলে হটাৎ হার্ট ফেল করবেন যে। ' অর্থাৎ নিজের ভয় তথা হতাশাকে দূর করার জন্য উদ্যোগী হন। 

তাৎপর্য: বৃদ্ধ অভিনেতা নিজের পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে শিল্পের সঙ্গে একাত্ব হয়েছেন। পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তার দেহ ও মন শিল্পের প্রতি নতজানু হয়েছে। এই শিল্পের জন্যই রজনীকান্ত নারী,অর্থ ,সংসার ও সামাজিক সম্মান ত্যাগ করেছে। আজ বয়সের ভার তাকে উপলব্ধি করিয়েছে যে, তার খ্যাতি প্রতিপত্তির দিন শেষ তার জীবন থেকে দিনের আলো চলে গেছে ,পরে আছে শুধু অন্ধকার। এরূপ হতাশা থেকেই রজনীকান্ত বিগত দিনের ঔরঙ্গজেব ,সুজা ও বক্তিয়ারের সংলাপ স্মরণ করেন।  এর মধ্য দিয়েই তিনি নিজের আত্মক্ষমতাকে ঢাকতে চেয়েছেন। তাই অনুভব করেন - 'শিল্পকে যে মানুষ ভালোবেসেছে - তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ ,একাতিত্ব নেই ,রোগ নেই ,মৃত্যু ভয়ের উপর সে তো হাসতে হাসতে ডাকাতি করতে পারে। ' অর্থাৎ রজনীকান্ত এই উক্তির মধ্য দিয়েই শিল্পের প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। শিল্পীর মৃত্যু হতে পারে কিন্তু প্রতিভার মৃত্যু কখনোই -মৃত্যু হতে পারে না। এই কারণেই বুদ্ধিজীবিরা শিল্পী তথা শিল্পকে গুরুত্ব দেন। শিল্পের চর্চা করেনা ,  যুগ যুগ ধরে বহুকাল অতিক্রম করে। 



আরো পড়ো ......







Post a Comment

0 Comments