পড়াশোনাঃ- উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্য ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতা থেকে একটি MCQ , একটি SAQ এবং একটি রচনাধর্মী প্রশ্ন থাকবে। তোমরা অনেকেই খুঁজে চলেছো- ক্রন্দনরতা জননীর পাশে MCQ, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে SAQ, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতা উৎস , ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার কবি পরিচিতি, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার সারাংশ, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার নামকরণ, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে মৃদুল দাশগুপ্ত, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে pdf , ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ছোট প্রশ্ন উত্তর, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে বড় প্রশ্ন উত্তর, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে পুরো কবিতা, জননীকে ক্রন্দনরতা বলা হয়েছে কেন, ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে না পারলে কবির কি মনে হয়, আমি তা পারি না কবি কি পারেন না ইত্যাদি। তাই তোমাদের কথা ভেবে আজকে এই কনটেন্ট আপলোড করলাম।
■ পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে 'শিকার' কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে ।বাকি চারটি কবিতা ভালোভাবে পড়ার পর আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রশ্ন উত্তর গুলি পড়লে অবশ্যই ভালো ফলাফল করব। তোমাদের কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারো। ধন্যবাদ লেখাটি ধৈর্যসহকারে পড়ার জন্য।
সূচিপত্র
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার কবি পরিচিতি ।
কবিতার বিষয় সংক্ষেপ।
কবিতার উৎস।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার নামকরণ।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার MCQ।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার SAQ।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার কবি পরিচিতি
কবি পরিচিতি : আধুনিক বাংলা কবিতার জগতে মৃদুল দাশগুপ্ত একজন বিশিষ্ট নাম। কবি জন্মগ্রহন করেন ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৩ এপ্রিল। পিতার নাম জ্যোৎস্না কুমার দাশগুপ্ত ও মাতা সান্তনা দাশগুপ্ত। জীবন বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর তিনি কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। তাঁর প্রকাশিত ছড়ার বইগুলি হল -'ঝিকিমিকি ঝিরিঝিরি ', 'আমিপাতা জামপাতা','ছড়া পঞ্চাশ '। কবি রচিত প্রবন্ধগুলি হল -'কবিতার সহায় ','সাত -পাঁচ '। যে সকাল পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছেন কবি ,সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -'বাংলা আকাদেমি পুরস্কার '(১৯৯৫) ও 'রবীন্দ্র পুরস্কার ' (২০১২) ।
বিষয় সংক্ষেপ : মানুষ সমাজবদ্ধ জীব ,সুতরাং সমাজের ভালোমন্দ তাকে প্রভাবিত করবে এটা খুব স্বাভাবিক। 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে 'কবিতায় সামাজিক অব্যক্ষয়ের যে চিত্র ফুটে উঠেছে ,তা কবির মনে তৈরী করেছিল গভীর প্রতিক্রিয়া। দেশবাসীর কাছে রাজনীতি যখন পরিণত হয়েছিল রণনীতিতে ,তখন সে দেশের শাসক সম্পর্কে কবির মনে জমা হয়েছিল ঘৃণা। নিহত ভাইয়ের মৃতদেহ দেখে কবির মনে তৈরী হয়েছিল ক্রোধ এবং কবি মনে করেছিলেন অত্যন্ত স্বাভাবিক। সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক যদি ভালোবাসা দিয়ে গড়া হয় ,যদি এক মানুষের কাছে অন্য জন মূল্যবান হয় ;তবে একের মৃত্যুতে অন্যের বিচলিত হওয়ারই কথা। কিন্তু শাসকের চোখরাঙানিতে ভালোবাসা -মূল্যবোধ শব্দগুলো অর্থহীন হয়ে পড়েছে বলে কবি বিস্মিত হন। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা সমাজবিরোধীরা যখন কোনো নারীকে তুলে নিয়ে যায় তারঘর থেকে ,তাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে দেয় জঙ্গলে ;তখন মানাবিক মূল্যবোধসম্পম্ন কবির বিবেক প্রতিবাদে গর্জে উঠতে চায়। কিন্তু কবি জানেন একা একা প্রতিবাদ করা যায় না। অথচ জন্মভূমির প্রতি দায়বদ্ধতা তিনি অস্বীকার করতে পারেন না। তাই কবিতা রচনার মধ্যদিয়ে তিনি প্রতিবাদ করতে চান ,শব্দের শক্তি দিয়েই তিনি বিস্ফোরণ ঘটাতে চান মানুষের মনে।
উৎস : 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে 'কবিতাটি কবির 'ধানখেত থেকে ' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার নামকরণ
নামকরণ : সাহিত্যের নামকরণ সর্বদা তাৎপর্য্পূর্ণ করে তুলতে চান সাহিত্যিক। পাঠকের সঙ্গে বিষয়ের সহিতত্ত্ব স্থাপনের আগেই নামকরণে ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দগুচ্ছের সাহায্যে সাহিত্যিক বিষয়কে ইঙ্গিতপূর্ণ করে তোলার সুযোগকপান। তাই আগেভাগে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা তিনি সেরে ফেলেন নামকরণের মাধ্যমে। বিষয়ভিত্তিক ,চরিত্রকেন্দ্রিক ,ব্যঞ্জনাধর্মী প্রভৃতি নামকরণ করা হয় সাহিত্যের। কবি মৃদুল দাশগুপ্তের 'ধানখেত থেকে ' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ' কবিতাটির নামকরণ বিষয়কেন্দ্রিক।
* আলোচ্য কবিতার বিষয় সংকটময় পরিস্থিতিতে কবির তার পাশে থাকার অঙ্গীকার। সে সময় হানাহানিতে সমাজে নেমে এসেছে গভীর অবক্ষয় ,শাসকের রাজনৈতিক চোখরাঙানিতে মানুষের মধ্য থেকে মুছে গেছে ভালোবাসা-সহানুভূতি -সম্প্রীতিবোধ ,যে সময় রাজনীতি পরিণতি হয়েছে রণনীতিতে ,রোজদিন রক্তাক্ত হয়েছে সমাজের প্রতিটি কোণ - সেই ২০০৬-২০০৭ খ্রিস্টাব্দের অবক্ষয়িত সমাজ -রাজনৈতিক পরিবেশে কবি অনুভব করেছেন জননী -জন্মভূমির কান্না। অগণিত ব্যাক্তিমানবীর বেদনা দেশজননীর হৃদয়কেই ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল। কবি দেখেছিলেন মানুষ হারিয়ে ফেলেছে প্রতিবাদের ভাষা। কবি বুঝিয়েছিলেন ভাগ্যের হাতে ভবিষ্যতের ভার দিয়ে অসহায় বাংলার মানুষ বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে কবি অনুভব করেছিলেন তার কলম থেকে সূচনা হতে পারে বিপ্লবের। তাই তিনি তাঁর কবিতায় শব্দের শক্তি দিয়ে মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন। তার সজাগ বিবেক 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে 'কবিতাটির মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে জননী জন্মভূমির পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। আর এই সূত্রে কবিতাটির নামকরণ সার্থক হয়ে উঠেছে।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার সম্ভাব্য MCQ
Q ➤ " আমি তাকাবো আকাশের দিকে "- কী উদ্দেশে কবি একথা বলেছেন ?Ans ➤ বিধির বিচার চাইতে
Ans : 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে 'কবিতায় কবি মৃদুল দাশগুপ্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাইতে পারেন না।
২.'যা পারি কেবল '-কে কী পারেন ?
Ans : কবি মৃদুল দাশগুপ্ত কাপুরুষের মতো বিধির বিচার চাইতে পারেন না। তিনি পারেন কলমের মাধ্যমে প্রতিবাদে গৰ্জে উঠতে।
৩.'কেন ভালোবাসা, কেন বা সমাজ /কিসের মূল্যবোধ '- কোন মানবিক যন্ত্রনা থেকে কবি একথা বলেছেন ?
Ans : কবি মৃদুল দাশগুপ্ত জননীর অপমান ,লাঞ্ছনা এবং আগ্রাসি মানুষের বর্বরতা দেখে ব্যথিত এবং মর্মাহত হয়েছেন। তাই কবি মানুষের প্রতি ভালোবাসা ,সামাজিক অব্ক্ষয় ও মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
৪.'আমার বিবেক, আমার বারুদ '-কথাটির অর্থ কী ?
Ans : ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতায় শব্দ দুটি প্রয়োগের মাধ্যমে কবি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে জাগাতে চেয়েছেন এবং নিজের মনের মধ্যে জমে থাকা ক্রোধের কথা উল্লেখ করতে এরূপ মন্তব্য করেছেন।
৫.'যে মেয়ে নিখোঁজ '-জঙ্গলে তাকে কীরূপ অবস্থায় পাওয়া যায় ?
Ans : যে মেয়েটি নিখোঁজ ছিল তাকে জঙ্গলে ছিন্নভিন্ন ও লাঞ্ছিত অবস্থাতে পাওয়া যায়।
৬.ক্রন্দনরতা জননীর পাশে না থাকলে কবি কী কী ব্যার্থ বলে মনে করেছেন ?
Ans : ক্রন্দনরতা জননীর পাশে না থাকলে কবি লেখা ,গান গাওয়া ,আঁকাআঁকি প্রভৃতি সংস্কৃতিকে বৃথা বলে মনে করেছেন।
৭.'নাই যদি হয় ক্রোধ '-ক্রোধ হওয়ার কারণ কী ?
Ans : মানবিক ও সামাজিক কবি তার নিহত ভাইয়ের মৃত দেহ দেখে ক্রোধ হওয়ার কথা বলেছেন।
৮.জননী ক্রন্দনরতা কেন ?
Ans : বঙ্গ জননীর দরিদ্র ,অসহায় সন্তানের উপর আগ্রাসী বর্বর মানুষের অত্যাচার নেমে এসেছে। তাই জননী আজ ক্রন্দনরতা।
৯.'এখন যদি না থাকি '-এখন বলতে কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে ?
Ans : এখন বলতে সামাজিক অব্ক্ষয়ের কারণে জনগনের উপর সীমাহীন অত্যাচার চলার সময়কে বোঝানো হয়েছে।
১০.'সেই কবিতায় জাগে '-কী জাগার কথা কবি বলেছেন ?
Ans 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে 'কবিতায় কবির বিবেক তথা চেতনার জেগে ওঠার কথা বলা হয়েছে।
১১.'সে-ই কবিতায় জাগে আমার বিবেক '- 'বিবেক'-কে কীসের সঙ্গে তুলনাকরা হয়েছে ?
Ans : কবি স্বয়ং তাঁর বিবেককে বারুদের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
১২. 'আমার বিবেক, আমার বারুদ /বিস্ফোরণের আগে।'- এর মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
Ans : সমাজসচেতন কবি সমাজের বুকে ঘটে যাওয়া অন্যায় -অবিচারের প্রতিকার চেয়েছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে বিবেকবান প্রতিবাদী মানুষ। তাই তিনি চেয়েছেন চূড়ান্ত বিস্ফোরণের আগে তাঁর মনের মধ্যে জমে থাকা বারুদের যেন হদিস দিতে পারে তার লেখনী।
১৩.'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে 'কবিতায় কবির বিবেক কী বলতে চাইছেন ?
Ans : সমাজসচেতন কবি আলোচ্য কবিতায় 'আমার বিবেক 'বলতে বুঝিয়েছেন তাঁর প্রতিবাদী ,কর্তব্য পরায়ণ ও শুভ বুদ্ধির জাগরণকে। অসহায় মানুষের জন্য দরদী ও সংবেদনশীল তাঁর বিবেক।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার সম্ভাব্য বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ' কবিতায় কবি জননীকে ক্রন্দনরতা বলেছেন কেন ? এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত বলে কবি মনে করেন ?
Ans : পটভূমি : মৃদুল দাসগুপ্তের 'ধানখেত থেকে ' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ' কবিতাটি রচনা করেছেন ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে সিঙ্গুর কৃষিজমি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। রাজনীতি যখন রণনীতিতে পরিণত হয়েছিল ,শাসকের অত্যাচারে মানুষ যখন ভালোবাসা ,মানবিকতা ,মূল্যবোধ প্রভৃতি ভুলতে বসেছিল সেই সময় কবি জননী তথা জন্মভূমির ব্যাথা অনুভব করেছিলেন। এই উপলব্ধি থেকেই কবি প্রতিবাদী হয়ে বারুদের মতো শব্দ ব্যবহার করে আলোচ্য কিবিতাটি লিখেছেন। যা জনগনের মধ্যে বিদ্রোহ জাগাতে সক্ষম হবে বলে কবির দৃঢ় বিশ্বাস। ক্রন্দনরতা জননী :কবিতায় উল্লিখিত জননী আসলে কবির স্বদেশভূমি। এই স্বদেশভূমি তথা জননী ব্যথিত সামাজিক অব্যক্ষয়ের কারণে। তাই কবি নিজের স্বদেশভূমিকে ক্রন্দনরতা জননী বলেছেন। সামাজিক অব্যক্ষয়ের দুটি চিত্র লক্ষ করা যায় আলোচ্য কবিতায়। দ্বিতীয় স্তবকে কবি লিখেছেন -'নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে নাই যদি হয় ক্রোধ /কেন ভালোবাসা কেন বা সমাজ /কীসের মূল্যবোধ।' অর্থাৎ সামাজিক সম্পর্কের অবনতির কারণে নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখেও মানুষের হৃদয়কে ক্রোধ জাগ্রত হয় না। তাই কবি প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক মূল্যেবোধ নিয়ে। আবার কবিতার তৃতীয় স্তবকে দেখাযায় রাজনীতির হার্মাদ বাহিনী যখন ঘর থেকে মেয়েকে তুলে নিয়েগিয়ে তার ছিন্নভিন্ন দেহ ফেলে দিয়েছে জঙ্গলে,তখন বিবেকবান কবি বিরোধিতার বিচারের অপেক্ষায় বসে থাকাকে নির্বুদ্ধিতা বলেছেন। এইদুটি সামাজিক অনাচারের চিত্র তুলে ধরে কবি লিখেছেন স্বদেশভূমি বা জননী আজ ক্রন্দনরতা। পালনীয় কর্তব্য :সমকালীন সামাজিক অনাচার কবি মেনেনিতে পারেননি। তাই এই বিবেক বা চেতনা বারুদের মতো শক্তিশালী শকদিয়ে বিদ্রোহী কবিতা রচনা করেছেন। কবি জানেন রক্ত ঝরানো বিপ্লব করা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। একারণেই কবি রক্তলেখা কবিতার মাধ্যমে মানুষের মনে বিপ্লবের ইন্ধন জোগাতে চেয়েছেন। এছাড়াও নিগৃহীত ,নিপীড়িত ও ক্রন্দনরতা জননীর পাশে মানুষকে থাকার আবেদ জানিয়েছেন। স্বদেশভূমির লাঞ্ছনা ও অপমান দেশের ত্রুদ্ধ কবি বিধিরবিচার চাওয়ার পরিবর্তে মানুষকে প্রতিবাদী হতে বলেছেন। কারণ সম্মিলিত প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই সামাজিক অনাচার ও শাসকের চোখ রাঙানি বন্ধ হবে। সেইজন্যই আলোচ্য কবিতায় সামাজিক মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন কবি।
'আমি তা পারি না'-কে কী পারেন না ?না পাড়ার বেদনা কিভাবে কবিকে আলোড়িত করেছেন তা কবিতা অবিলম্বে লেখ।
Ans: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : 'ধানখেত থেকে 'কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ' কবিতায় কবি মৃদুল দাশগুপ্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাইতে পারেন না।
না পাড়ার বেদনা : একবিংশ শতকের প্রথমদিকে কবি দেখেছিলেন শাসকের চোখ রাঙানিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সিঙ্গুরের সাধারণ কৃষকেরা কৃষি জমি রক্ষার গণআন্দোলন করেছে। আন্দোলনকারীদের শাসক বাধা প্রদান করলে সমগ্র বঙ্গ রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠে। কবি দেখেছিলেন বহু জননী কোলের সন্তান হারিয়েছেন। ঘরের মা -বোনেরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হয়েছে। মানব দরদী কবি এরূপ চরিত্র দেখেই উপলব্ধি করেছিলেন বঙ্গজননী ক্রন্দনরতা।
* কবির প্রশ্ন : সামাজিক অবক্ষয়ের মুহূর্তে কবি লক্ষ করেছিলেন ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কেও নেই। জননীর পাশে কাউকে না পেয়ে কবি আত্মদগ্ধ হন। এই আত্মজন্ত্রণা থেকেই কবি প্রশ্ন করেন -'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে /এখন যদি না থাকি /কেন তবে লেখা ,কেন গান গাওয়া /কেন তবে আঁকাআঁকি ?' অর্থাৎ কবি ছিলেন মানবদরদী এবং সমাজসচেতন মানুষ। তাই তিনি বলেছেন ক্রন্দনরতা জননীর পাশে দাঁড়াতে না পারলেও শিল্প -সাহিত্য -সংস্কৃতির কোনো মূল্য নেই।
কবির ক্রোধ : সমাজের বুদ্ধিজীবী বলে যারা পরিচিত ছিলেন ,তারাও স্বদেশভূমিকে লাঞ্ছিত হতে দেখেও নির্বাক ছিলেন। সামাজিক সম্পর্কের নিহত ভাইয়ের মৃত দেহ দেখেও সুবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বিবেকহীন ছিলেন। তবে কবি মানবিক এবং সামাজিক ব্যক্তি হওয়ায় নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে ক্রূদ্ধ হয় এবং মন্তব্য করেন -'নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে /নাই যদি হয় ক্রোধ /কেন ভালোবাসা ,কেন বা সমাজ /কিসের মূল্যবোধ। ' অর্থাৎ কোবো গভীর মনোবেদনা থেকে সামাজিক সম্পর্ক ও মানবিকতার মূল্য নিয়ে প্রশ্ন করেছেন।
না পাড়ার ব্যর্থতা : মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে বসবাসকারী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোই মানুষের কর্তব্য। কিন্তু সিঙ্গুরের গন আন্দোলননের সময় নিখোঁজ মেয়েটির ছিন্নভিন্ন দেহ জঙ্গলে দেখেও সমাজের মানুষ প্রতিবাদ করেনি। সমস্ত অন্যায়ের বিচার বিধাতা তথা ঈশ্বরের হাতে সমর্পন করে মানুষ নিশ্চুপ থেকেছে। সমাজের মানুষ এরূপ ব্যর্থ মানবিকতা দেখে কবি গভীর বেদনা অনুভব করেছেন। এই ব্যর্থতা থেকেই কবি লিখেছেন -'আমি তা পারি না। ' মনের মধ্যে জমে থাকা ক্রোধ প্রকাশ করেছেন বারুদের মতো কবিতা লিখে। এই কবিতার মধ্য দিয়েই কবি প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
0 Comments