পড়াশোনাঃ- পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমধ্যশিক্ষা পর্ষদের ঘোষিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে উচ্চমাধ্যমিকে দুটি নাটক রয়েছে।যথা- বিভাব ও নানা রঙের দিন।এই দুটি নাটক থেকে একটি করে রচনাধর্মী প্রশ্ন আসে। এর মধ্যে যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আমাদের আলোচ্য বিভাব নাটক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষায় যে বড় প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলির উত্তর প্রকাশ করা হলো।
■ বিভাব নাটক থেকে বড় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে। তাই এই উত্তরগুলো যথাযথভাবে আয়ত্ত করে লিখতে পারলে পরীক্ষায় অবশ্যই ভালো ফল করবে।
প্রশ্ন- 'বিভাব'- কথাটির সাধারণ অর্থ কী? 'বিভাব'- নাটকের নামকরণ কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করো।
অথবা
বিভাব নাটকের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।
নামকরণের সার্থকতাঃ- সাহিত্যে নামকরণ হলো বিষয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশের চাবিকাঠি। তাই সাহিত্যের নামকরণ করা হয় বিশেষ অভিপ্রায় ব্যক্ত করার জন্য ।আমাদের আলোচ্য নাটকের নামকরণ করা হয়েছে 'বিভাগ'। 'বিভাব'- শব্দটি অলঙ্কারশাস্ত্র থেকে গৃহীত হলেও নাট্যকার শম্ভু মিত্র দর্শক মনে অনুভূতি জানানোর জন্যই নাটকের নামকরণ করেন বিভাব। এরূপ নামকরণের উদ্দেশ্য ছিল দর্শকের হৃদয়ে আনন্দ জাগানো ও মনোরঞ্জন প্রদান করা। তাই নাট্যকার সহজ প্রকৃতিতে নাটক লিখে দর্শককে নাটকের অংশ করে নিয়েছেন।
হাসির খোরাকঃ- নাটকের বেশি অংশ জুড়ে আছে হাসির খোরাক খোঁজর ব্যর্থ চেষ্টা। কিন্তু হাসি এই নাটকের প্রধান বিষয় নয় বরং মহামারী,মন্বন্তর,দেশভাগের যন্ত্রণা, দাঙ্গা প্রভৃতি এ নাটকের প্রেক্ষাপট। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু ভিটেমাটি হারিয়ে যখন অন্ন বস্ত্রের অভাবে জর্জরিত তখন তাদের কোনো বিষয়ই হাসাতে পারে না । অথচ বল্লভ ভাই প্যাটেল এর ওপরে বাঙালি জাতিকে "কাঁদুনে জাত" বিশেষণে ব্যঙ্গ করেন ।তখন তার প্রতিক্রিয়া হয় তীব্র এবং প্রখর ।
হাস্যরসের ব্যর্থ চেষ্টাঃ- শম্ভু মিত্র বাঙালির "কাঁদুনে জাত" তকমা ঘোচানোর জন্য নাটকে দর্শককে হাসানোর নানান প্রচেষ্টা করেন। যেমন- নানান অঙ্গভঙ্গি ও প্রেমের দৃশ্য, নায়ক-নায়িকার সংঘর্ষ, ফিল্মি কায়দায় মালতীলতা দোলে গান, নায়িকার কাল্পনিক গাছের ডাল ধরে থাকা প্রভৃতি। কিন্তু এসবের দারাও হাসির উদ্রেক হয়নি। অবশেষে দর্শকদের জন্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অবলম্বন করেন তা সত্ত্বেও কাঙ্খিত হাস্যরস সৃষ্টি হয়নি।
নামকরণের তাৎপর্যঃ- শেষ পর্যন্ত জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য ও হাসির খোরাক জোগাড় করার জন্য সম্ভু ও অমর ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু তারা বাইরের পথে বাস্তবের মুখোমুখি হন ।দেখা যায় ক্ষুধার্ত মানুষ অন্নবস্ত্রের পরিবর্তে গুলি খায়। লুটিয়ে পড়ে প্রতিবাদী ছেলেটি ও মেয়েটি। এরূপ পরিস্থিতিতে কন্ঠে শম্ভু বলেন " কী অমর এবার হাসি পাচ্ছে ? এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাচ্ছে।" অর্থাৎ বাস্তব দৃশ্য দেখে দর্শকের হাসি হারিয়ে যায়। এরূপ অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে 'বিভাব' থেকে। তাই বলা যায় বিভাব নাটকের নামকরণ সার্থক হয়েছে।
প্রশ্ন- "এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না"- জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন? শেষে তার কীরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
জীবনকে উপলব্ধিঃ- বহুরূপী নাট্য গোষ্ঠীর সদস্য শম্ভু মিত্রের 'বিভাব' নাটকে হাসির খোরাক জোগাড় করার জন্য সহকর্মী অমর গাঙ্গুলীর বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানে বৌদির পরামর্শ অনুযায়ী লাভ সিন ও প্রগ্রেসিভ লাভ সিনের অভিনয় করেন। কিন্তু কোনো হাসি তথা হাস্যরস উদ্রেক হয়নি। অবশেষে ঘরে বসে হাসির খোরাক না পেয়ে শম্ভু মিত্র তার সহ-অভিনেতা অমরকে বলেন- "এই চার দেওয়ালের মধ্যে, এই ঘরের মধ্যে, জীবনকে উপলব্ধি করা যাবেনা, হাসিও পাবে না।" সুতরাং দুজনে হাত ধরাধরি করে বিশেষ নাটকীয় ভঙ্গিতে বাইরে বেরিয়ে পড়েন হাসির খোরাক খোঁজার জন্য ও জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য।
বাস্তবের অভিজ্ঞতাঃ- নাটকে দেখা যায় শম্ভু মিত্র ও অমর গাঙ্গুলী একটা ব্যস্ত রাস্তায় হেঁটে চলেছেন। মঞ্চে দেখা যায় কেউ একজন একটি মোটরের, কেউ হাত রিক্সার, কেউ গ্রামের ছবি নিয়ে মুখে আওয়াজ করতে করতে তাদের অতিক্রম করে যায়। একটি বাস অমরকে যেন চাপা দিচ্ছিল। কিন্তু সম্ভু তাকে টেনে নিয়ে বাস চালককে ধমক দেন। এরপর তারা রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে, শুনতে পায় একটা মিছিলের আওয়াজ। তারা সবাই "চাল চাই, কাপড় চাই"- স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে আসছিল। অপরদিকে পুলিশ ছুটে আসে শোভা যাত্রীদের আটকানোর জন্য। শম্ভু ও অমর দুজনে পালিয়ে আত্মগোপন করে। কিন্তু বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে দুজনে হতভম্ব হয়ে যায়।
জীবনকে উপলব্ধি অভিজ্ঞতাঃ- জীবনকে উপলব্ধি করতে এসে দুজনেই মিছিলের ও পুলিশের মুখোমুখি হন। যা তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো। তারা দেখেন সার্জেন মিছিলকারীদের দাঁড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছে কিন্তু অপরদিকে মিছিলকারীরা সার্জেন্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে এগিয়ে আসছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। দেখা যায় একটি ছেলে ও একটি মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। নাটকের সম্পূর্ণ মঞ্চ লাল আলোয় ভরে যায়। দর্শকের হৃদয়ে আনন্দ সৃষ্টির পরিবর্তে করুণ রসের সঞ্চার হয় । তাই নাট্যকার হাসানোর চেষ্টা করে দাঙ্গা, মন্বন্তর, দেশভাগের যন্ত্রণা তুলে ধরেছেন। জীবনকে উপলব্ধি করতে গিয়ে নাট্যকার বাস্তব অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করে।
প্রশ্ন- "কোথাও জীবনের খোরাক, হাসির খোরাক নেই"- বক্তা কে? কোথাও জীবনের খোরাক হাসির খোরাক নেই বলে বক্তা মনে করেছেন কেন?
আরো পড়ো .....
নানা রঙের দিন নাটকের ছোট প্রশ্ন উত্তর
0 Comments