বিষয়ঃ-অধিকরণ কারক,নিমিত্ত কারক এবং কারক ও অকারক সম্পর্ক আলোচনা ।
■অধিকরণ কারক ■
সংজ্ঞা -যে স্থানে কালে বা বিষয়ে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয় তাকে বলা হয় ক্রিয়ার আধার,ক্রিয়ার সেই আধারকে বলা হয় অধিকরণ কারক।
উদাহরণ- বনে বাঘ থাকে।- এখানে যদি ক্রিয়াকে প্রশ্ন করা হয় কোথায় থাকে? তাহলে উত্তর পাবো "বনে" ।যা ক্রিয়ার স্থান, তাই এটি অধিকরণ কারক।
■অধিকরণ কারকের শ্রেণীবিভাগ■
শ্রেণী:- অধিকরণ কারক মূলত তিন প্রকার ।
যথা -১- স্থানাধিকরণ ২-কালাধিকরণ ও ৩-বিষয়াধিকরণ।
স্থানাধিকরণ- ক্রিয়া যে স্থানে সম্পন্ন হয় তাকে বলে স্থানাধিকরণ ।এই স্থানাধিকরণ কারক আবার তিন প্রকার।যথা-(১)একদেশসূচক (২) ব্যপ্তিসূচক এবং (৩) সামীপ্যসূচক।
একদেশসূচক:-সমস্ত জায়গায় ব্যস্ত নয়, মাত্র কোনো এক বিশেষ জায়গায়, কোনো স্থানের এক অংশে অবস্থিত এমন বোঝালে,তাকে একদেশসূচক বলা হয়।
উদাহরণ:-(১)হিমালয়ে কস্তুরী মৃগ আছে।
(২)ইউরোপে বড়ো ঠান্ডা ।
ব্যপ্তিসূচকঃ- ব্যপ্ত হয়ে থাকার জন্য এই শিরোনাম । অর্থাৎ কোনো বিশেষ অংশে নয়, সমস্ত স্থান জুড়ে আছে এমন বোঝালে ব্যাপ্তিসূচক স্থানাধিকরণ হয়।
উদাহরণঃ- তিলে তেল আছে ।এখানে তেল তিলের সমগ্র অংশজুড়ে ব্যাপ্ত আছে ।তাই তিলে ব্যাপ্তিসূচক স্থানাধিকরণ কারক।
সামীপ্য সূচক :-সমীপে অর্থাৎ নিকটে অবস্থিত এমন বোঝালে সামীপ্যসূচক হয়।
উদাহরণ- শীতকালে গঙ্গাসাগরের মেলা হয় ।এখানে শীতকালের কাছাকাছি গঙ্গাসাগরের মেলা বসে। তাই শীতকালে সামীপ্যসূচক স্থানাধিকরণ কারক।
কালাধিকরণঃ- যে সময়ে ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়, সেই সময় বাচক পদটি কালাধিকরণ হয় ।
উদাহরণ- ভোরে সূর্য ওঠে । এখানে ভোর সময়বাচক পদ।
বিষয়াধিকরণঃ-যে বিষয়ে ক্রিয়ায় নিষ্পন্ন হয় সে বিষয়ে অধিকরণ হয় ।
উদাহরণ- মেয়েটি রূপে লক্ষ্মী ও গুণে সরস্বতী ।এখানে যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন বিষয়ে মেয়েটি লক্ষী ?
তাহলে উত্তর পাবো রূপে ।
আবার যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন বিষয়ে সরস্বতী তাহলে উত্তর পাবো রূপ। তাই রূপ ও গুন হলো বিষয়াধিকরণ।
■ নিমিত্ত কারক ■
সংজ্ঞা :- বাক্যের ভিতরে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদ ক্রিয়ার সঙ্গে নিমিত্ত অর্থ প্রকাশ করলে, নিমিত্ত কারক হয়।
বিভক্তি:- এ,র,এর।
উদাহরণঃ- অন্ধজনে দেহ আলো।
(২) দিনের লাগি দান।
[ বিশেষ দ্রষ্টব্য -সংস্কৃত ব্যাকরণ এ নিঃস্বার্থভাবে দান করা বুঝালে সম্প্রদান কারক হয় কিন্তু বাংলায় নিমিত্ত কারক ধরা হয় যেমন এ জীবন দেবতা কে উৎসর্গ করলাম]
■ কারক ও অকারক সম্পর্ক■
● সংজ্ঞা:- ক্রিয়াপদের সঙ্গে যে পদের সম্পর্ক থাকে ,তাকে কারক বলে ।
আবার ক্রিয়াপদের সঙ্গে যে পদের সম্পর্ক থাকে না, তাকে অকারক পদ বলে।
অকারক পদের শ্রেণিবিভাগঃ- অকারক পদ মূলত দুই প্রকার ।যথা- (১) সম্বন্ধ পদ ও (২) সম্বোধন পদ ।
সম্বন্ধ পদ:- বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সঙ্গে অনান্য বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সম্বন্ধকে সম্বন্ধ পদ বলে ।
ক্রিয়ার সঙ্গে সম্বন্ধ পদের সম্পর্ক থাকে না বলেই সম্বন্ধ পদ কে কারক বলা হয় না ।
সম্বোধন পদ:- যে পদের দ্বারা কাউকে আহ্বান করা বোঝায়, সেই পদকে সম্বোধন পদ বলে।
উদাহরণ- বাপরে ! কি বিরাট সাপ।
(২) মাগো মা! এমন কাজ মা।
(৩) ওহে মশাই ! এদিকে আসুন ।
ব্যাখ্যা:- এখানে বাপরে, মাগো মা, ওহে মশাই, পদগুলির সঙ্গে ক্রিয়াপদের কোন সম্পর্ক নেই। এগুলো মূলত সম্বোধন বা ডাকার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ।তাই এদেরকে সম্বোধন পদ বলে।
0 Comments