পড়া শোনা - মাধ্যমিকের পাঠ্যআফ্রিকা কবিতা আলোচনা করা হলো। এই কবিতা ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর , ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর ও রচণাধর্মী প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে। আজকে তোমাদের কথা ভেবেই আমরা আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর আপলোড করলাম। তোমরা অনেকেই খুঁজে চলেছো আফ্রিকার কবিতার প্রশ্ন উত্তর pdf download/ ক্লাস টেনের আফ্রিকা কবিতা / আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর saq / আফ্রিকা কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর / আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর / প্রভৃতি। প্রতিটি উত্তর যথাযথভাবে দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ১৫০ শব্দের মধ্যে বাংলার রচনাধর্মী প্রশ্নএর উত্তর দিতে হয়। সেই অনুযায়ী উত্তর লেখা হয়েছে।
■ 2023 সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পূর্ণ সিলেবাসের উপর হবে। নোটিশ জারি করে বোর্ড ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য তোমরা লগ-ইন করতে পারো পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সাইটে।
আলোচ্য বিষয়
আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর
MCQ
30 টি
SAQ
15 টি
DAQ
5 টি
LAQ
3 টি।
মাধ্যমিক আফ্রিকা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ MCQ
1➤ আফ্রিকাকে কীসের নিবিড় পাহারায় বেঁধে রাখা হয়েছিল ?
ⓐ ইতিহাসের পাতায় ⓑ অপমানিত ইতিহাসে ⓒ সাধারণের মনে ⓓ ভবিষ্যতের ভাবনায়
➤ অপমানিত ইতিহাসে
মাধ্যমিক কবিতা আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ SAQ
১. 'আদিম যুগে'- যুগকে 'আদিম' বলা হয়েছে কেন ?
Ans : 'যুগ' শব্দটি দিয়ে কালখণ্ড বোঝানো হয়। এই কালখণ্ড অতিপ্রাচীন বলে কল্পিত হয়েছে বলেই তা 'আদিম' ।
২. 'স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তষে ' - এই অসন্তোষ কেন ?
Ans : কোনো স্রষ্টাই প্রাথমিকভাবে নিজ সৃষ্টির প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারেন না। বিশ্বস্রষ্টাও তাই সৃষ্টির আদিলগ্নে নিজ সৃষ্টির প্রতি অসন্তোষ দেখিয়েছিলেন।
৩. 'নতুন সৃষ্টিকে বার বার করেছিলেন বিধ্বস্ত'- কে , কেন বিধ্বস্ত করেছিলেন ?
Ans : নতুন সৃষ্টি বিশ্ব তথা পৃথিবীর প্রতি প্রবল অসন্তোষে স্বয়ং স্রষ্টা বিধাতা তাকে বার বার বিধ্বস্ত , অর্থাৎ ভেঙে-গড়ে দেখিয়েছিলেন।
৪. 'তাঁর সেই অধৈর্যে'- অধৈর্যের কারণ কী ঘটেছিল ?
Ans : বিশ্বসৃষ্টির অমোঘ স্রষ্টা বিধাতা তাঁর সৃষ্টির প্রতি অসন্তোষে অধৈর্য হয়ে ঘন ঘন মাথা নেড়ে উঠেছিলেন, অর্থাৎ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন।
৫. 'রুদ্র সমুদ্রের বহু'- সমুদ্রাকে রুদ্র বলা হয়েছে কেন ?
Ans : সৃষ্টির আদিলগ্নে ভৌগলিক উপাদানগুলি যেন ততটা নিজস্বতায় পূর্ণ হয়ে ওঠেনি, উত্তাল ছিল সমুদ্রও। তাই তীব্র ঊর্মিমালামুখর সমুদ্র ছিল রুদ্র।
৬. 'প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু'- কবির কেন এইরকম মনে হয়েছে ?
Ans : প্রকৃতি যেন আশ্চর্য এক ঐন্দ্রজালিক। তার সব ব্যাপারই যেন বৃহৎ ভেলকি, তা সর্বদাই দৃষ্টি গ্রাহ্যের অতীত বলে কবি মনে করেছেন।
৭. 'মন্ত্র জাগাচ্ছিল ' -'মন্ত্র' কী ?
Ans : 'মন্ত্র'-এর রবীন্দ্রনির্দেশিত ব্যাখ্যা হল - ' যা মনের সাহায্য করে'। কিন্তু এখানে কবির মতে আফ্রিকার কাছে 'মন্ত্র' হল জীবনসম্পর্কে বাস্তবিক ধ্যানধারণা।
৮. 'তোমার চেতনাতীত মনে।'- 'তোমার' বলতে এখানে কার কথা বলা হয়েছে ?
Ans : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আফ্রিকা' কবিতাটিতে কাব্যবিষয় হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে আফ্রিকা মহাদেশ। এখানে 'তোমার' বলতে তাকেই বোঝানো হয়েছে।
উত্তরঃ - কবি রবীদ্রনাথ ঠাকুরের '' আফ্রিকা '' কবিতায় দেখানো হয়েছে মানুষের জয়যাত্রার সূচনালগ্নে প্রতিটি সভ্যতাই ছিল প্রকৃতিনির্ভর। বিশেষত আফ্রিকা মহাদেশের অবস্থানটি ছিল পরিবেশগত কারণে সম্পূর্ণ রহস্যময় অরণ্যপ্রকৃতিতে মোড়া। একটা সময় পর্যন্ত এই রহস্যঘন আধারপ্রকৃতি যেমন আফ্রিকাকে ঘিরে রেখে দিয়েছিল,তেমনই কখনো -কখনো সংহারকের ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। আদিম কুসংস্কারাচ্ছন্ন আফ্রিকাবাসীদের কাছে এই রহস্য ছিল অনতিক্রম্য। পরে অবশ্য তারা এই দুর্গমের রহস্যকে ভেদ করতে পেরেছিল।
২.ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে ''- কে কাকে কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ?
উত্তরঃ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'পত্রপুট' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'আফ্রিকা' কবিতায় দেখা যায় স্রষ্টা যখন বিশ্বসৃজনের কাজে মত্ত ছিলেন, তখন নিজ সৃষ্টকর্মের প্রতি বারবার অসন্তুষ্ট হয়ে ভাঙ্গা গড়ার খেলায় মত্ত হয়েছেন। সেই মুহূর্তে রুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচী ধরিত্রীর বুক থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় অর্থাৎ পৃথিবীর পূর্বভাগ থেকে আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে গেল নির্জন স্থানে এবং বেধে ফেলল বনস্পতি নিবিড় পাহারায়। সভ্য নাগরিক জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকা যেন কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে চলে যায়।
উত্তরঃ- 'আফ্রিকা'- কবিতায় দেখা যায় অরণ্যময় শ্বাপদ -সংকুল এক ছায়াচ্ছন্ন ভিন্ন প্রকৃতির ভূখণ্ডকে। বনস্পতির নিবিড় পাহারায় আচ্ছাদিত মানুষ অধ্যুষিত এই আফ্রিকা শ্বেতাঙ্গ সভ্যদের কাছে ছিল উপেক্ষিত ও বিরূপতার আধার। কিন্তু আফ্রিকা ও তার অধিবাসীদের ছিল অন্তরের আলো, আপন সংস্কৃতির ঐতিহ্য, নিজস্ব জীবন চর্চা, সভ্য দুনিয়ার কাছে ছদ্মবেশ। তারা ক্রমশ অগ্রসরমান পৃথিবীর সঙ্গে যথার্থ পাল্লা দিতে না পারলেও এই বিরূপতার ছদ্মবেশেই একদিন দুর্গমের রহস্য প্রকৃতির সংকেত করে ব্যঙ্গ করতে পেরেছিল।
৪. যখন গুপ্তগহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল ''- কাকে এখানে পশু বলা হয়েছে ?গুপ্তগহ্বর বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তরঃ - 'আফ্রিকা'- কবিতায় দেখা যায় ,সাম্রাজ্যবাদীরা প্রায় নরপশু। কেননা তাদের নখ নেকড়ের চেয়েও বেশি তীক্ষ্ণ। এরা যে দেশে উপনিবেশ গড়ে তোলে সেই দেশের অধিবাসীদের উপর হাড়হিম অত্যাচার চালায়। যা পশুদের মাংস খাওয়ার সমতুল্য। তাই এখানে সাম্রাজ্যবাদীদের পশু বলা হয়েছে।
■ "গুপ্তগহ্বর" বলতে সাধারণত বোঝায় গোপন বা লুকানো গর্ত বিশেষ । যেমন- স্বাপদদের অবস্থান বিবর। কবি নরপশু সুলভ সাম্রাজ্যবাদীদের শাসন-শোষণ ক্ষেত্রগুলিকে এখানে "গুপ্ত গহর"- বলতে চেয়েছেন । উপযুক্ত অবসর পেলেই এই পশুর দল আসল পশুদের মতো বিবর ছেড়ে বের হয়ে এসে আক্রমণ করে।
৫. যুগান্তরের কবির স্বরূপ আলোচনা করো ।
উত্তরঃ- মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ তার দীর্ঘ জীবনে সাম্রাজ্যবাদের মত্ততা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাই তিনি জানতেন হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে যাতে হিংসা দীর্ঘায়িত হয়, এ তারা চাইবেই । দলিত-মথিত আফ্রিকার সামনে তারা কখনোই আনত হবে না। তাই কবি কবিতায় আহ্বান জানালেন 'যুগান্তরের কবি'কে, যিনি হিংসাযুগের অন্তে ক্ষমার বাণী প্রচার করবেন মত্ত মানুষের মন থেকে হিংসা তাড়াতে। আফ্রিকায় যারা হিংসার রাজত্ব পত্তন করেছে, আফ্রিকার কাছে তাদের হয়ে আনত ভঙ্গিতে তিনি উচ্চারণ করবেন "সভ্যতার শেষ পুন্য বাণী" স্বরূপ - 'ক্ষমা করো'।
দশম শ্রেণীর কবিতা আফ্রিকা বড়ো প্রশ্ন উত্তর
১. 'হায় ছায়াবৃতা ' - কাকে 'ছায়াবৃতা' হয়েছে ? 'হায়' শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী ? তার কালো ঘোমটার নীচে কী ছিল ?
Ans : যাকে 'ছায়াবৃতা' বলা হয়েছে : কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'পত্রপুট' কাব্যের 'আফ্রিকা' কবিতা থেকে নেওয়া উক্তিটি 'হায় ছায়াবৃতা' বলা হয়েছে , অরণ্যময় ভিন্নতমা মহাদেশ আফ্রিকাকে।
'হায়' শব্দ প্রয়োগের তাৎপর্য : 'হায়' শব্দটি অব্যয় এবং তা দিয়ে খেদ , অনুতাপ ,শোকের ব্যঞ্জনা আনা হয়। কবি তাঁর কবিতায় এই অব্যয়টির তাৎপর্যময় ব্যবহার করেছেন। যে আফ্ৰিকা অপরিসীম সম্পদের আকর ; যার অজস্র বৈভবের ভাণ্ডারে রয়েছে গভীর অরণ্যানি , মানবসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ , রয়েছে বন্য প্রাণীর অভাবনীয় বৈচিত্র - সেই আফ্রিকা যেন অনেকদিন পর্যন্ত আপন সত্তার গভীরে ডুব দিয়ে আত্মসমাহিত ছিল, কিন্তু ক্রমে তার ঘুম ভাঙে। আত্মনিমজ্জন থেকে ক্রমে জেগে উঠে সে ' বনস্পতির নিবিড় পাহারা ' ও 'কৃপণ আলোর অন্তপুর' থেকে বের হয়ে এসে দাঁড়ায় নিশ্চিন্ত নিভৃতির বাইরে। তার অস্তিত্বের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা দুর্গমের রহস্যকে সে ভেদ করে। প্রকৃতির দৃষ্টির অতীত জাদুকে পরিণত করে জীবনমন্ত্রে ,ভীষণ আর শঙ্কাকে হার মানায়। এমত সময়ে নিজেকে অনেকটা উগ্র উগ্র করে যখন সে অবশিষ্ট পৃথিবীরদিকে চোখ মেলে তাকায় , তখনই খেদের সঙ্গে কবি লক্ষ করেন - তার উপর বর্বর লোভদৃষ্টি পড়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের। এই প্রেক্ষিতেই কবির খেদোক্তি 'হায়' শব্দটি প্রয়োগ।
কালো ঘোমটার আড়ালের রূপ : ছায়াবৃতা আফ্রিকা প্রাকৃতিক কারণেই যেন ছিল অন্ধাকারাময়। তার রূপসৌন্দর্যের মায়া থাকলেও , আত্মবিকাশের উগ্রতা ছিল না। নিজ মানবতায় সমাহিত ছিল বলেই কদর্য আত্মপ্রকাশে সে বাধা পেত। তার এই অবগুন্ঠিত ও সলজ্জ রূপটিকেই কবি বলেছেন 'কালো ঘোমটার নীচে'। এই যে ঘোমটা পরা রূপ আফ্রিকার , কবি এরই নীচে তার 'অপরিচিত'মানবরূপ -এর সন্ধান পেয়েছেন। মা যেমন অবগুন্ঠিত থাকলেও তাঁর স্নেহময় আত্মরূপ বিকাশে বাধা হয় ন, আফ্রিকাও তেমনই তার নিজ অস্তিত্বে মানবতার প্রলেপ মাখিয়ে রেখেছিল সর্বদা।
২.'অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ'- 'তোমার' বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? তার রূপ অপরিচিত কেন ? সেই মানবরূপের পরিচয় দাও।
Ans : 'তোমার'স্বরূপ : কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'পত্রপুট' কাব্যের অন্তর্ভুক্ত 'আফ্রিকা' কবিতার উদ্ধৃত অংশে 'তোমার' বলতে কবি 'আফ্রিকা মহাদেশ'-এর কথা বলতে চেয়েছেন।
রূপের অপরিচিতির কারণ : অন্যান্য মহাদেশগুলির থেকে আফ্রিকার অপরিচিতি ছিল অনেক বেশি। কেন-না ঘন অরণ্যানি দিয়ে আড়াল করা এই মহাদেশ হলো চির-উপেক্ষিতা। বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় আফ্রিকা যেন অবহেলিত , আড়ালে পরে থাকা ভৌগোলিক ভূখণ্ড। এর মৃত্তিকায় লালিত কালো মানুষ , বৈচিত্রময় পশুপাখি ,বনজ ও খনিজ সম্পদ দীর্ঘদিন সভ্যতার দৃষ্টিতে ধরা পড়েনি। তাই জীবনসম্পদে ভরপুর এই মহাদেশ যেন অপরিচিতির আড়ালে এতআত্মগোপন করেছিল , সবার উপেক্ষার অন্তরালে পড়ে ছিল।
মানবরূপের পরিচয় : আফ্রিকার দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছিল আর এক শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধীর মতোই। উপেক্ষার আবিলতায় ঢাকা , সভ্যতার শানিত দৃষ্টির আড়ালে চির-উপেক্ষিতা আফ্রিকার কথা বড়ো করে তুলে ধরেন রবীন্দ্রানুরাগী কবি অমিয় চক্রবর্তী। বিদেশ থেকে তিনি কবিকে লিখেন -"আমার কেবলই মনে হচ্ছিল,আফ্রিকার এই Tribe Eternal নিয়ে আপনি যদি একটি কবিতা লেখেন। আফ্রিকা সম্পর্কে আপনার কোনো কবিতা নেই , এইরকম কবিতা পেলে কী রকমের আনন্দ হবে বলতে পারি না।" আন্তর্জাতিক মননসমৃদ্ধ , বিশ্বমাত্রিক চেতনাসম্পন্ন , মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ। তাই তাঁর 'আফ্রিকা' কবিতাটি রচনা করে , সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে এই কবিতায় তীব্র আঘাত হানলেন। পাশাপাশি তুলে আনলেন আফ্রিকার মানবরূপের স্বচ্ছ অন্তর্জীবন , তার জীবনবেদ-জীবনচর্চা, সহজ-স্বচ্ছ জীবনযাপন ও কৌম সংস্কৃতিকে। আফ্রিকার মানুষ যেন মৃত্তিকার মানুষ। কাউকে আক্রমণ ও আঘাত করার বাসনা তাদের নেই। তারা আপন জীবনরসে আপনি সতেজ এবং সজীব, নিজস্ব সংস্কৃতিতে উচ্ছসিত , উদবেলিত। আপন সম্পদে আত্মনির্ভর এখানকার কালো মানুষেরদের জীবন। এই অনাবিল ও একক সংস্কৃতিময় সত্তা-সংগ্রাম ও সভ্যতাকে কবি সম্মান জানালেন
৩. 'এল মানুষ-ধরার দল'- 'মানুষ-ধরার দল' বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন ? কবিতা অনুসারে তাদের পরিচয় দাও।
Ans : 'মানুষ-ধরার দল' যারা : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'পত্রপট ' কাব্যের 'আফ্রিকা' কবিতায় কবি বিষন্ন কন্ঠে 'মানুষ ধরার দল'-দের পরিচিত করতে চেয়েছেন। কবিদৃষ্টিতে এরা মানবতার বড় শত্রু ঔপনিবেশিকতাবাদী বা সাম্রাজ্যবাদী দলবল।
প্রাককথন : মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে সমাচ্ছন্ন আফ্রিকা মহাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখেছেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে রচিত তাঁর এই কবিতাটিকে আপাতদৃষ্টিতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কবিতা হিসেবে ধরা হলেও দেখা যায় - আফ্রিকার অন্তর্লোক উদঘাটনকে রবীন্দ্রনাথ এখানে সম্যক সচেতন ছিলেন। কবিমতে আফ্রিকা যেন ভৌগলিক পৃথিবীর জীবনকাব্যে উপেক্ষিতা। বিদেশ থেকে কবি অমিয় চক্রবর্তীর এ প্রসঙ্গে কবিকে লিখা কথাটি স্মরণীয় - 'আমার কেবলই মনে হচ্ছিল আফ্রিকার এই Tribe Eternal নিয়ে আপনি যদি একটি লেখেন। '
'মানুষ ধরার দল'-এর স্বরূপ : ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনি আফ্রিকা ভূখণ্ডের আবিসিনিয়া অধিকার করেন। নিরীহ-সহজ-সরল আবিসিনিয় মানুষজন সাম্রাজ্যবাদের থাবার তলায় চাপা পড়ে আর্তনাদ করে ওঠে, অমানবিক-আগ্রাসনের শিকার হয়। সভ্যতাবর্গী ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের পাশবিক-পৈশাচিক দাঁত-নখ ইতিমধ্যেই পৃথিবীর অনেক শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্রকে ঔপনিবেশিকতায় মুড়ে ফেলে সাম্রাজ্যবাদের বিজয় পতাকা তুলে ধরেছে। উপেক্ষিতা আফ্রিকার মাটিতেও এবার মানবতা ছিন্নভিন্ন হতে শুরু করে। কবির ভাষায় -
'এল মানুষ-ধরার দল
গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে
সভ্যের বর্বর লোভ
নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা। '
রক্তাক্ত হলো মানবতা,আফ্রিকার রক্ত-অশ্রু তার নিষ্পাপ মাটিকে ভিজিয়ে দিল। মানুষ ধরার দল যে কত পাশবিক শক্তির আধার কবিকর্তৃক তারই স্বরূপ অঙ্কিত হয়েছে।
0 Comments