পড়াশোনাঃ- মাধ্যমিকের তৃতীয় অধ্যায়ঃ প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ - থেকে টিকা দেওয়া হলো। বিশেষত কোল বিদ্রোহ ও বিভিন্ন উপজাতি বিদ্রোহ থেকে প্রশ্ন গুলি করা হয়েছে ।
●পরীক্ষায় আসতে পারে এমন সম্ভাব্য টিকা বা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন যেমন দেওয়া হয়েছে। তেমনই সম্ভাব্য প্রশ্ন দেওয়া হল। তোমরা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর পড়ার পাশাপাশি টিকার উপর জোর দেবে।
প্রস্তুতিও সমানভাবে নেবে। তা না হলে রেজাল্ট ভালো করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
● তোমাদের সুবিধার্থে টিকাগুলির PDF FILE ও দেওয়া হলো।যা DOWNLOAD করে তোমরা নিজেদের কাছে রাখতে পারবে।
মাধ্যমিকের তৃতীয় অধ্যায় থেকে বিভিন্ন উপজাতি বিদ্রোহের ওপর টিকা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর আলোচনা-
- সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো।
- উত্তর -
সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণঃ- 1855 সালে 30 শে জুন সিধু, কানহু, চাঁদ, ভৈরব প্রমুখের নেতৃত্বে বিহারের ছোটনাগপুরের ভাগনাডিহির মাঠে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয় । নানান কারণে সাঁওতালরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বিভিন্ন কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
খাজনা বৃদ্ধিঃ- বাংলা, বিহার, উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হলে সাঁওতালদে জমির উপর খাজনা ধার্য হয়।ফলে সাঁওতালরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ও একত্রিত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
বহিরাগত ব্যবসায়ীদের কারচুপিঃ- অসাধু মহাজনরা ঋণ প্রদান ও সুদ গ্রহণের সময় শোষণ শুরু করে। আবার বহিরাগত ব্যবসায়ীরা কেনারাম ও বেচারাম বাটখারার সাহায্যে কেনাবেচার সময় সরল সাঁওতালদের দীর্ঘদিন এভাবে ঠকালে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিতঃ- সাঁওতালরা অরণ্যকে নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করত। কিন্তু 'অরণ্য আইন' -এর দ্বারা আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার লোপ পায় ।সাঁওতাল বিদ্রোহের এটি একটি অন্যতম কারণ।
প্রশাসনিক অসহযোগিতাঃ- সাঁওতালদের প্রতি রেল কর্মচারী, ঠিকাদার, নীলকর সাহেবরা নানান জুলুম ও অত্যাচার চালাত । এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইংরেজ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালেও তারা কোনো সহযোগিতা করতো না।
মূল্যায়নঃ- উপরের এই সকল কারণের জন্য আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় মহাজন' কমা ব্যবসায়ী কমা ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারী ও কর্মচারী ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র সূচনা করে কাকে সাঁওতাল বিদ্রোহ বলা হয়।
------------
2- কোল বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখ।
-- উত্তর ---
ভূমিকাঃ- ইংরেজ শাসনে ভারতে যেসকল উপজাতি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল, তার মধ্যে কোল বিদ্রোহ অন্যতম। 1831 সালে বিহারের অন্তর্গত ছোটনাগপুরের সিংভূম, মানভূম, হাজারীবাগ ও পালামৌতে কোল বিদ্রোহ শুরু হয়।
কোল বিদ্রোহের নেতাঃ- কোল বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন বুদ্ধ ভগৎ, জোয়া ভগৎ, ঝিন্দরাই প্রমুখেরা। এই আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল । কারণ এই আন্দোলনে কামার, কুমোড় প্রমুখ নিম্নবর্ণের মানুষ অংশগ্রহণ করে।
কোল বিদ্রোহের কারণঃ- 1831 সালের কোল বিদ্রোহের নানান কারণ ছিল।যেমন-
আফিম চাসে বাধ্য করাঃ- ব্রিটিশ সরকার নিজেদের অর্থনৈতিক লোভের কারণে কোলদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আফিম চাষ করাতে বাধ্য করতো।তাই কোলরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
রাজস্ব বৃদ্ধি:- 1820 সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছোটনাগপুরে শাসন প্রতিষ্ঠা করে ।তারপর ইংরেজ সরকার সেই অঞ্চলকে কয়েকটি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে বহিরাগত ব্যবসায়ীদের লিজ দিলে তারা নিজের ইচ্ছামত রাজস্ব বৃদ্ধি করে।
জমি থেকে উৎখাতঃ যে সকল কোল অতিরিক্ত কর দিতে পারতো না, সেই সকল কোলকে জমি থেকে উৎখাত করা হতো । এর ফলে কোলরা অসন্তুষ্ট হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
কোল বিদ্রোহের গুরুত্বঃ -উল্লেখযোগ্য গুরুত্বগুলি হল-
( 1 ) এই বিদ্রোহের তীব্রতা লক্ষ্য করে সরকার 1834 সালে কোলদের জন্য পৃথক "দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি" নামে পৃথক অঞ্চল দান করে।
(2) এখানে ব্রিটিশ আইন এর পরিবর্তে কোলদের নিজস্ব আইনকানুন চালু রাখার ব্যবস্থা গৃহীত হয়।
(3) জমিদার'দের কেড়ে নেওয়া জমি পুনরায় ফেরত দেওয়া হয়।
(4) এই বিদ্রোহ পরবর্তীকালে কৃষক বিদ্রোহগুলিকে অনুপ্রাণিত করে।
3.টিকা- সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ।
- উত্তর -
ভূমিকা:- বঙ্কিমচন্দ্রের 'আনন্দমঠ' উপন্যাস থেকে যানা যায় উত্তরবঙ্গের সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কথা। জানা যায় মূলত ফকির, নাগা, গিরি সম্প্রদায়ের মানুষেরা জমিদারের অত্যাচার ও ইংরেজ সরকারের রাজস্ব নীতির কারণে একত্রিত হয়ে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের সূচনা করে।
বিদ্রোহের নেতা:- সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানী, মজনু শাহ, আলী শাহ, মুসা শাহ প্রমুখেরা। প্রায় 40 বছর ধরে সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ চলেছিল। জমিদারের কাছারিবাড়ি, ধানের গোলা, ব্রিটিশ কোম্পানির কুঠি প্রভৃতি আক্রমণ করে তারা।
বিদ্রোহের কারণ:- সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের নানান কারন লক্ষ করা যায় । যেমন- সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ওপর কর আরোপ করা, দরগায় যাওয়া-আসার উপর বিধি নিষেধ চাপানো সন্ন্যাসী ও ফকির দের জমির উপর কোম্পানি উচ্চহারে কার বিরুদ্ধে করে প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও ফকির সোচ্চার হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য:- সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের কতগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় । যেমন-(1) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ধর্মীয় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল । (2)এই বিদ্রোহে প্রান্তিক কৃষকেরা যোগদান করেন।(3) এই বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল বিদেশিদের হাত থেকে নিজের দেশ ও ধর্মকে রক্ষা করা (4) পরবর্তী কৃষক বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল এই বিদ্রোহ।
মন্তব্য:- পরিশেষে বলা যায় যে, সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ 40 বছর ধরে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে চললেও যোগ্য নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও অস্ত্রশস্ত্রের অভাবে বিদ্রোহ বর্থ্য হয়ে যায়। তা সত্বেও বলা যায় যে, এই বিদ্রোহ পরবর্তীতে বহু কৃষক বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। তাই ইতিহাসে এর স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
4- নীল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখো।
- উত্তর -
নীল বিদ্রোহ:- বাংলায় নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকেরা নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে এক বিদ্রোহ শুরু করে, যা নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত ।এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিষ্ণুচরন বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস । 1859-60 খ্রিস্টাব্দের এই বিদ্রোহে বাংলার প্রায় 60 হাজার কৃষক যোগদান করেছিল।
বৈশিষ্ট্য:- অন্যান্য কৃষক বিদ্রোহ থেকে নীল বিদ্রোহ ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। তাই এই বিদ্রোহের কতগুলি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় । যেমন-
নীলকর বিরোধী আন্দোলনঃ- এই বিদ্রোহ কোনো জমিদার বা মহাজনের বিরুদ্ধ আন্দোলন ছিল না। ছিল অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
হিন্দু মুসলিম ঐক্যঃ- বাংলার হিন্দু-মুসলিম কৃষকেরা একত্রিত হয়ে নীল বিদ্রোহের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। উভয় সম্প্রদায়ের কৃষক বিদ্রোহের অংশগ্রহণ করে শপথ নেয়- "মরবো তবু নীল বুনবো না।"
জমিদারদের অংশগ্রহণঃ- শুধুমাত্র নীলচাষী নয়, ছোটো ছোটো জমিদারও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল । এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রামরতন রায়, শ্রী হরি রায় আচার্য।
ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত আন্দোলনঃ- এই বিদ্রোহ ছিল কৃষকদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষার লড়াই। এতে কোনো ধর্মীয় প্রভাব ছিল না।
Read more.....
মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ের mcq
0 Comments