শৈশব বলতে কী বোঝো? শৈশবের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

 ড়াশোনাঃ- একাদশ শ্রেণির শিক্ষাবিজ্ঞানের পঞ্চম অধ্যায়ঃ-"শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ" থেকে আলোচনা করা হলো- গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন- শৈশব বলতে কী বোঝো ? শৈশবের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। / বিকাশ কাকে বলে ? এই প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো । প্রশ্ন দুটি একাদশ শ্রেণির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়াও বি এড বা গ্রেজুয়েট ছেলেমেয়েদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।


■ এই অধ্যায় থেকে রচনাধর্মী প্রশ্ন পরীক্ষায় অবশ্যই আসবে । তাই এই অধ্যায়ের প্রত্যেকটি সম্ভাব্য রচনাধর্মী প্রশ্ন আমরা আপলোড করে চলেছি। তোমরা উত্তরের PDF ডাউনলোড করে রাখতে পারবে । তোমরা যদি পরীক্ষায় সাফল্য পাও, তবেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে ।


 1. শৈশব বলতে কী বোঝো ? শৈশবের বিকাশমূলক  
 বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। 

 2.বিকাশ কাকে বলে ? এই প্রক্রিয়ার
 বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে 
পার্থক্য নির্ণয় করো ।


1. শৈশব বলতে কী বোঝো? শৈশবের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। 2+6= 8



শৈশব:- মানব জীবনের বিকাশের প্রথম স্তর শৈশবকাল নামে পরিচিত। শিশুর জন্ম থেকে পাঁচ বছর বয়স কাল পর্যন্ত বিকাশের স্তরকে শৈশবকাল বলে। এই স্তরে শিশুর সুঅভ্যাস গঠিত হয়। শারীরিক ও সঞ্চালনমূলক দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক প্রভৃতিরও বিকাশ ঘটে।



শৈশবকালের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্য:-  শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের যে বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো- 



দৈহিক বিকাশ:- জন্ম থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শৈশবকাল বিস্তৃত। এই সময় শিশুদের শারীরিক বিকাশ দ্রুত ঘটে। সাধারণত জন্মের সময় শিশুর ওজন থাকে 33 পাউন্ড এবং উচ্চতা থাকে 38 ইঞ্চি। তবে পাঁচ বছর বয়সে ওজন হয় 43 পাউন্ড এবং উচ্চতা হয় 43 ইঞ্চি।



ভাষাগত বিকাশ:- একজন শিশুর ক্রন্দন থেকে ভাষার বিকাশ শুরু হয়। প্রথমদিকে কান্নার অর্থ স্পষ্ট ভাবে বোধগম্য হয় না । কিন্তু 6 মাস বয়সে উদ্দেশ্য অনুযায়ী শিশুরা কান্না করে। 6 থেকে 8 মাস বয়স পর্যন্ত শিশু স্পষ্ট উচ্চারণ করে এবং 10 থেকে 12 মাস বয়সে সে দুটো অর্থপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করতে শেখে। এক বছরে দুটি শব্দ, পাঁচ বছরে 2000 শব্দ শেখে।



মানসিক বিকাশ:- শৈশবকালে শিশুর বিকাশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কৌতূহল প্রবণতা ও জানার ইচ্ছা।  তাই শৈশবকালে শিশুরা পরিবেশ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। শিশুর মধ্যে শারীরিক এবং সামাজিক বাস্তবতার সম্বন্ধে ধারণা তৈরি হয়। শৈশবকালে শিশুর চিন্তন ক্ষমতা ও যৌক্তিক ক্ষমতার বিকাশ ঘটে। শিশুরা অলৌকিক রূপকথার গল্প শুনতে ভালোবাসে শুনতে।



প্রাক্ষোভিক বিকাশ:- এই স্তরে শিশু মূলত প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রক্ষোভগুলি প্রাথমিক অবস্থায় থাকে এবং ঘন ঘন পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন- চার বছরের কোনো শিশু যদি খেলনা পাওয়ার জন্য কান্নার আশ্রয় নেয়, তবে ওই শিশুই পাঁচ বছর বয়সে আর তা করেনা, প্রক্ষোভকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।



সামাজিক বিকাশ:- শৈশবকালে শিশুর প্রথম দিকে সামাজিক আচরণ লক্ষ্য করা না গেলেও পরবর্তী সময়ে সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করতে করতে অন্যান্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে, আত্মকেন্দ্রিক থাকে, তারপর বন্ধু নির্বাচন করে এবং এই স্থরের শেষের দিকে দলগত খেলায় অংশগ্রহণ করে। যেমন লুকোচুরি, কানামাছি, ক্রিকেট, কাবাডি প্রভৃতি।



যৌন জীবনের বিকাশ:- এই স্তরে নিজের প্রতি ভালবাসাকে কেন্দ্র করে যৌনতার বিকাশ ঘটায়। একে বলা হয় narcissism ।



মন্তব্য:- পরিশেষে বলা যায় যে, শৈশবকালীন বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপ্রাসঙ্গিক। ভবিষ্যৎ জীবনের শিক্ষার ভিত্তি প্রস্তুতিতে এই বিকাশমূলক স্তরের অবদান অনস্বীকার্য।



 2. বিকাশ কাকে বলে ? এই প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো । 1+2+5= 8


 

                              উত্তর 


বিকাশ:- ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সার্বিক, উন্নয়নমূলক ও ক্রিয়াগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে বিকাশ বলে। বিকাশের ফলে শিশুর গুণগত পরিবর্তন ঘটে।

বিকাশের বৈশিষ্ট্য:- বিকাশ প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো- 



জীবন ব্যাপী:- শিশুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিকাশ প্রক্রিয়া, ক্রিয়াশীল থাকে। বিকাশের কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই।


ক্রিয়াগত পরিবর্তন:- বিকাশ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিশুর ক্রিয়াগত পরিবর্তন ঘটে। বিকাশ শুরু হয় জন্মের পর থেকে। যেমন- শিশু ১০ মাস বয়সে হামাগুড়ি দিতে শেখে,১৪-১৫ মাস বয়সে দাড়াতে পারে বিকাশের কারণে।


অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:- বিকাশ হল একটি নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, এটি শিখনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ, বিকাশ এক সংশ্লেষক প্রক্রিয়া, ব্যক্তি বিশেষে বিকাশ ভিন্ন হয় প্রভৃতি।


বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য:- এই দুই প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু মিল থাকলেও এদের মধ্যে কতকগুলি পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন-সংজ্ঞাগত:- জীবদেহের আকার, আয়তন , ওজন, উচ্চতা প্রভৃতির স্বতঃস্ফূর্ত ও স্থায়ী পরিবর্তনকেই বৃদ্ধি বলে। আবার পরিনমন এবং অভিজ্ঞতার ফলশ্রুতি হিসেবে ব্যক্তির মধ্যে যে ধারাবাহী পরিবর্তন ঘটে, তাকে বিকাশ বলে।


সীমা:- বৃদ্ধি শুধুমাত্র দেহ বা শরীরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু বিকাশ দেহ , মন, সামাজিক অবস্থা, প্রক্ষোভ প্রভৃতির মধ্যে ব্যপ্ত থাকে।


পরিবর্তনের প্রকৃতি:- বৃদ্ধি হল পরিমাণগত ও পরিমাপযোগ্য প্রক্রিয়া। আবার বিকাশ হল পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ ও গুণগত পরিবর্তন।


সময়কাল:- বৃদ্ধের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। এর শুরু যেমন আছে তেমনি সমাপ্তিও আছে। সারা জীবন ধরে ঘাটে না।অন্যদিকে বিকাশ সেসর জন্ম মুহূর্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। অর্থাৎ বিকাশ জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া।


ক্ষেত্র বা স্থান:- বৃদ্ধির ক্ষেত্র বা স্থান অনেকটাই নির্দিষ্ট। যেমন হাতের ব্যায়াম করলে হাতের পেশির বৃদ্ধি যথাযথ হয়। কিন্তু বিকাশের ক্ষেত্র বা স্থান নির্দিষ্ট নয় কারণ মানসিক বিকাশের বিষয় অনুশীলন করলে তার প্রতিফলন সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশের উপর লক্ষ করা যায়।


পরিমাপের প্রকৃতি:- বৃদ্ধিকে অত্যাধুনিক কৌশলে প্রত্যক্ষ ও নীতিগতভাবে পরিমাপ করা যায় যন্ত্রের মাধ্যমে। কিন্তু বিকাশকে পরোক্ষ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে পরিমাপ করা হয় বিভিন্ন অভীক্ষার মাধ্যমে।


তাৎপর্য:- বৃদ্ধে বিকাশের একটি অংশ মাত্র। এর তাৎপর্য বিকাশের মতো ব্যাপ ক ও বিস্তৃত নয়। দাড়ি তবে বিকাশ গুণগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার কার্যক্ষমতার উৎকর্ষ হলেও এর তাৎপর্য অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত।



Post a Comment

0 Comments