উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

 পড়াশোনা:-দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস, পঞ্চম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে প্রশ্ন - উত্তর  সাজানো হয়েছে। তবে প্রতি বছরের জন্য এই প্রশ্ন উত্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা খুজে চলেছে - দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় MCQ, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় SAQ , উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় ছোটো প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর  ,দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর প্রভৃতি। 

■ উচ্চমাধ্যমিকের পঞ্চম অধ্যায়ঃ ঔপনিবেশিক ভারতে শাসন থেকে MCQ আসবে আবার SAQ ও আসবে। তাই অধ্যায়টি খুঁটিয়ে পড়তে হবে। এরপর আমাদের দেওয়া MCQ ও SAQ পড়তে হবে। তোমরা যদি ছোটো প্রশ্নোত্তর খুঁটিয়ে পড়ো তাহলে অবশই ভালো ফল হবে। এছাড়াও সাজেশন ভিত্তিক রচনাধর্মী প্রশ্ন-উত্তর দেওয়া হল, যা পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।



বিষয় ইতিহাসঃ পঞ্চম অধ্যায় 
শ্রেণী দ্বাদশ 
বোর্ড WBCHSE 
MCQ
 28 টি
SAQ
15টি
LAQ4 টি


উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ MCQ




 




1.  বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বাংলায় পঞ্চাশের মন্বন্তর হয়েছিল কত সালে?

A.১৯৪০ সালে

B.১৯৪২ সালে

C.১৯৪৩ সালে

D.১৯৪৫ সালে

উত্তর-১৯৪৩ সালে।



2. বারদৌলি সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব কে দেন?

A.রাজকুমার শুক্লা

B.বল্লভভাই প্যাটেল

C.রাজেন্দ্র প্রসাদ

D.কল্যাণজি মেহতা

উত্তর - বল্লভভাই প্যাটেল।



3. নবান্ন নাটকের রচয়িতা কে?

A. অমলেন্দু চক্রবর্তী

B. ভবানী ভট্টাচার্য

C.  বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

D .বিজন ভট্টাচার্য

উত্তর - বিজন ভট্টাচার্য।



4. রাওলাট কমিশনের অপর নাম কী?

A . সিডিশন কমিশন

B . সাইমন কমিশন

C . একওয়ার্থ কমিশন

D . হূইটলি কমিশন

উত্তর - সিডিশন কমিশন।



5. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় ১৯১৯ সালের কত তারিখ?

A. ১০ এপ্রিল

B .১২ এপ্রিল

C .১৩ এপ্রিল

D .১৯ এপ্রিল

উত্তর- 13 এপ্রিল।



6. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কাইজার-ই-হিন্দ উপাধি কে ত্যাগ করেন?

A. গান্ধীজী

B. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

C. সুভাষচন্দ্র বসু

D. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তর-গান্ধীজী।



7. গান্ধীজী প্রবর্তিত 'হরিজন' শব্দের অর্থ কী?

A. নিপীড়িত

B. অত্যাচারিত

C. ঈশ্বরের সন্তান

D. তপশিলি জাতি

উত্তর-ঈশ্বরের সন্তান।



8. শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির জন্য সরকার কোন কমিশন নিয়োগ করে?

A. সিডিশন কমিশন

B. হান্টার কমিশন

C. হুইটলি কমিশন

D. সাইমন কমিশন

উত্তর - হুইটলি কমিশন।



9. মুসলিম লীগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

A. ১৯১৫ সালে

B. ১৯০৩ সালে

C. ১৯০৬ সালে

D.১৯০৯ সালে

উত্তর -1906 সালে।



10. রাওলাট আইন কত খ্রিস্টাব্দে পাশ হয়?

A.১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে

B. ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে

C .১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে

D. ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর-১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে।



12. 'দ্যা ইন্ডিয়ান মুসলমানস' গ্রন্থের রচয়িতা কে?

A.স্যার সৈয়দ আহমদ

B. উইলিয়াম হান্টার

C. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ

D. ড্যানিশন রস

উত্তর - উইলিয়াম হান্টার।



13. গুজরাটের অচ্ছুৎ আদিবাসীদের কী বলা হত?

A. রাজাপরাজ

B. কালিপরাজ

C. উজালীপরাজ

D. কোনোটিই নয়

উত্তর- কালিপরাজ।



14. কোন নীতির দ্বারা নানা সাহেবের বৃত্তি ও ' পেশোয়া ' উপাধি বাতিল করা হয়?

A. স্বত্ববিলোপ নীতি

B. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি

C. সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি

D. কোনোটিই নয়

উত্তর - স্বত্ববিলোপ নীতি।



15. ' কেশরী ' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

A. লাজপত রায়

B. বালগঙ্গাধর তিলক

C. অরবিন্দ ঘোষ

D. বিপিনচন্দ্র পাল

উত্তর - বালগঙ্গাধর তিলক।



16. লখনৌ চুক্তি কবে সম্পাদিত হয়?

A. ১৯১৬ সালে

B. ১৯১৯ সালে

C. ১৯০৬ সালে

D. ১৯০৯ সালে

উত্তর - ১৯১৬ সালে।



17. ১৯৪৩- এর বাংলার দুর্ভিক্ষের সময় ভারতের ভাইসরয় কে ছিলেন?

A. ওয়াভেল

B. রিপন

C. আরউইন

D. ক্লাইভ

উত্তর - ওয়াভেল।



18. ' Now or Never ' - গ্রন্থের লেখক কে?

A . আগা খান

B. চৌধুরী রহমত আলী

C. মতিলাল নেহেরু

D. বালগঙ্গাধর তিল

উত্তর - চৌধুরী রহমত আলী।



19. ' India Today '- গ্রন্থের রচয়িতা কে?

A. ড: অনিল শীল

B. ড: রমেশ চন্দ্র দত্ত

C. ড: রজনীপাম দত্ত

D . ড: অমলেশ ত্রিপাঠী পাঠি 

উত্তর - ড: রজনীপাম দত্ত।



20. ' সীমান্ত গান্ধী' - নামে কে পরিচিত ছিলেন?

A. মহাত্মা গান্ধী

B. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ

C. মানবেন্দ্রনাথ রায়

D. খান আব্দুল গফফর খান

উত্তর - খান আব্দুল গফফর খান।



21. ' হরিজন' - পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

A. নেহেরু

B. গান্ধীজী

C. তিলক

D. কেশব মেনন

উত্তর - কেশব মেনন।



22. মুসলিম লীগের কোন অধিবেশনে পৃথক পাকিস্তানের দাবি তোলা হয়?

A. লাহোর

B. লক্ষ্নৌ

C. করাচি

D. ঢাকা

উত্তর - লাহোর।



23. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কে ছিলেন না?

A. এস এ ডাঙ্গে

B. মুজফফর আহমেদ

C. সোমনাথ লাহিড়ি 

D. ফিলিপ স্প্র্যাট

উত্তর - সোমনাথ লাহিড়ি।



24. মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কোথায়?

A.উত্তরপ্রদেশে

B. চম্পারণে

C. মিরাটে

D. ঢাকায়

উত্তর - ঢাকায়।



25. দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা কে ছিলেন?

A.আবুল কালাম আজাদ

B. আগা খান

C. সৈয়দ আহমদ খান

D. খান আবদুল গফ্ফর খান

উত্তর - সৈয়দ আহমদ খান।



26. মুসলিম লীগ কে গঠন করেছিলেন?

A. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ

B. আগা খান

C. সলিম উল্লাহ

D. ডালহৌসি

উত্তর - সলিম উল্লাহ।



27. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি কে চালু করেন?

A . কর্নওয়ালিস

B. লর্ড ডালহৌসি

C. লর্ড ওয়েলেসলি

D. লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস

উত্তর - লর্ড ওয়েলেসলি।



28. ভারতের প্রথম পাটকল গড়ে ওঠে কোথায়?

A. কলকাতায়

B. মুম্বাইতে

C. হুগলিতে

D. চন্দননগরে

উত্তর - হুগলিতে।



উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ SAQ 


1. ' সিডিশন বা রাওলাট কমিশন ' বলতে কী বোঝো?


উত্তর - ভারতে সবরকম রাজনৈতিক আন্দোলন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৭ সালে ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে, যা সিডিশন কমিশন বা রাওলাট কমিশন নামে পরিচিত।



2. মর্লেমিন্টো আইনের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো ।


উত্তর - মর্লেমিন্টো সংস্কার আইনের দুটি ত্রুটি হলো -

(i) ১৯০৯ সালের মর্লে মিন্টো আইনের দ্বারা কোন দায়িত্বশীল সরকার ও শাসন কাঠামো ভারতে গড়ে ওঠেনি।

(ii). মুসলিম লীগের পৃথক নির্বাচন নীতিকে স্বীকার করায় ভারতে সাম্প্রদায়িকতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।



3. রাওলাট আইনের দুটি শর্ত উল্লেখ কর।


উত্তর -  রাওলাট আইনের দুটি শর্ত হলো- (i) পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবং শুধুমাত্র সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করা যাবে।

(ii) এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে কোনো আবেদন করা যাবে না।


4. জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড কী?


উত্তর -পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগে একত্রিত হওয়া প্রায় ১০০০ নিরীহ জনগণের উপর ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে নির্বিচারে ১৬০০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। এতে বহু মানুষ নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন। এই ঘটনা ইতিহাসে জালিয়ানওয়ালাভাবে হত্যা কান্ড নামে পরিচিত।


5. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?


উত্তর - শ্রমিক আন্দোলনে সাম্যবাদের প্রভাব লক্ষ্য করে ব্রিটিশ সরকার ১৯২৯ সালের কুড়ি মার্চ মোজাফফর আহমেদ, পিসি Dharani Goswami এবং ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা ব্রাডলি ও স্পর্শ তেত্রিশ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করলে শুরু হয় মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলায় অধিকাংশ নেতা দশে প্রমাণিত হন এবং তাদের দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়।



6. লক্ষ্নৌ চুক্তি কবে কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?


উত্তর - ১৯১৬ সালে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে লক্ষ্নৌ  চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।



7. লক্ষ্নৌ চুক্তির দুটি শর্ত উল্লেখ কর।


উত্তর - (i) কংগ্রেস মুসলিম লীগের পৃথক নির্বাচন নীতিকে মেনে নিবে।

(ii) কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক উভয় আইনসভায় মুসলিমদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হবে।



8. চৌরিচৌরা ঘটনা কী?


উত্তর - ১৯২২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামক স্থানে উত্তেজিত জনতা থানায় আগুন লাগালে ২২ জন ব্রিটিশ পুলিশের মৃত্যু হয়, যা চৌরিচৌরা ঘটনা নামে পরিচিত।



9. কবে কেন সায়মন কমিশন গঠিত হয়েছিল?


উত্তর - ১৯২৭ সালে ভারতীয়দের স্বার্থে সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনে সায়মন কমিশন গঠিত হয়েছিল।



10. কে কবে চৌদ্দ দফা দাবি পেশ করেন?


উত্তর - ১৯২৯ সালের মার্চ মাসে মুসলিম লীগের সম্মেলনে দিল্লিতে মোঃ আলী জিন্নাহ মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ১৪ দফা দাবি।



11. সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি কী ?


উত্তর - ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ড ১৯৩২ সালের ১৬ই আগস্ট ভারতীয় মুসলমান, শিখ, ক্রিশ্চান প্রভৃতিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত হিন্দু এই দুই ভাগে ভাগ করে আইন সভায় পৃথক নির্বাচনের নীতি ঘোষণা করেন, যা সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি নামে পরিচিত।



12. পাকিস্তান কথাটি প্রথম কে কবে ব্যবহার করেন?



 উত্তর-  ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চৌধুরী রহমত আলী তার "  Now or Never"  নামক গ্রন্থে ১৯৩৩ সালে পাকিস্তান শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।



13. কে কবে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি চালু করেন?


উত্তর - লর্ড   ওয়েলেসলি ১৭৯৮ সালে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি চালু করেন।



14. স্বত্ববিলোপ নীতি কী ?



উত্তর - লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি ১৮৪৮ সালে চালু করেন। নীতির মূল কথা ছিল কোনো অপুত্রক রাজা মারা গেলে তার রাজ্য কোম্পানির অধিকারে আসবে। এমনকি কোনো অপূত্রক রাজা দত্তকপুত্র গ্রহণ করতে পারবেনা।



15. খেদা সত্যাগ্রহ কী ?


উওর - ১৯১৭-১৮ খ্রিস্টাব্দে দুর্ভিক্ষ  শস্যহানী প্রভৃতির কারণে গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকরা শোচনীয় অবস্থায় পড়ে সরকারের কাছে রাজস্ব মকুবের আবেদন জানালেও সরকার তাতে কান দেয়নি। বরং কৃষকদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি পায় ।তাই ১৯১৮ সালের ২২শে মার্চ গান্ধীজীর নেতৃত্বে সেখানকার কৃষকেরা যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেছিল, তা খেদা আন্দোলন নামে পরিচিত।


উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর


1. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট ও শর্তাবলী। এই আইনের গুরুত্ব কি ছিল?          4+4


                              উত্তর 

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন:-ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান হওয়ার পর ভারতে ব্রিটিশ শাসন চালু হয়। ১৯০৯ সালে ভারত শাসন আইন চালু হয়, এই আইনের  নানান ত্রুটির জন্য ১৯১৯ সালে মন্টেগু চেমসফোর্ড কর্তৃক ভারত শাসন আইন চালু হয়। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে নানান জটিলতার জন্যই ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ সালে ভারত বিষয়ক যে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করে, তা 1935 সালের ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত।


ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট:- ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রবর্তনের পটভূমি ছিল নিম্নরূপ- 


জাতীয়তাবাদের প্রসার:- বিংশ শতকের প্রথম দিকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাব গড়ে ওঠে, ফলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাই তারা নতুন ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করার চেষ্টা করে।


আন্দোলনের তীব্রতা:- ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। ফলে গান্ধীজীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন প্রভৃতি।


বিপ্লবী কার্যকলাপ:- ১৯৩০ এর দশকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন শুরু হয়। ভগত সিং, বটুকেশ্বর দত্ত , রাজগুরু, বাঘা যতীন প্রমুখের নেতৃত্বে বিপ্লবী কার্যকলাপ শুরু হলে ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।


আইন প্রণয়ন:- অবশেষে ব্রিটিশ সরকার সাইমন কমিশনের রিপোর্ট ও তিনটি গোলটেবিল বৈঠকে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে ১৯৩৩ সালে একটি  'শ্বেতপত্র ' প্রকাশ করে। এর  প্রস্তাব ও সুপারিশের ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাশ করে।


ভারত শাসন আইনের শর্ত:- ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়ক বিভিন্ন শর্ত ছিল। যেমন -


যুক্তরাষ্ট্র গঠন:- ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। ব্রিটিশ শাসনাধীন রাজ্য ও বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


কেন্দ্র ও রাজ্য তালিকা:- এই আইনের দ্বারা সরকারের কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের ক্ষমতা বন্টনের জন্য তিনটি তালিকার কথা বলা হয়। যথা- (i) কেন্দ্রীয় তালিকা, (ii) প্রাদেশিক তালিকা ও  (iii) যুগ্ম তালিকা।


অন্যান্য শর্ত:- এই শর্তগুলি ছাড়াও আরো বিভিন্ন শর্তের কথা বলা হয়েছে । যেমন- দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, মন্ত্রীসভা গঠন, সাম্প্রদায়িক নির্বাচন, বড়লাটের ক্ষমতা প্রভৃতি।


১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব:- ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের নানান ত্রুটি থাকলেও এর কিছু গরুত্বও লক্ষ্য করা যায়। যেমন -


রাজনৈতিক অধিকার:- ১৯৩৫ সালের পূর্বে কোন আইনের দ্বারাই ভারতীয়দের রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া হয়নি। কিন্তু ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ভারতীয়রা বিপুল পরিমাণ রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করে।


ভোটাধিকার লাভ:- ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ভোটদানের অধিকার পায়। তবে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪%।


সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব দান:- এই আইনের দ্বারা মুসলিমদের জন্য সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্যও সাম্প্রদায়িক নির্বাচনের কথা বলা হয়।


মন্তব্য:-১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এই আইনের দ্বারা ভারতীয়দের হাতে প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়নি। তাই কংগ্রেস এই আইনকে  হতাশাজনক এবং মুসলিম লীগ সম্পূর্ণ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ধ্বংসকারী বলে অবিহিত করেছেন ।


2. বাংলায় পঞ্চাশের মন্বন্তরের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।

                          উত্তর



পঞ্চাশের মন্বন্তর:- ভারতের স্বাধীনতার পূর্ব মুহূর্তে যে সকল প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বিপর্যয় ঘটেছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৪৩ সালের বাংলার মন্বন্তর। এরূপ মন্বন্তরের প্রভাবে সমগ্র বাংলায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দেয়, তবে এর মূলে বিভিন্ন কারণ অন্তর্নিহিত ছিল।



কারণ:- পঞ্চাশের মন্বন্তরের প্রধান কারণ গুলি হল- 



(i) উৎপাদন হ্রাস:- ১৯৪২ সমগ্র বাংলায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে ৪৫০ বর্গমাইল এলাকার ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এরূপ বিপর্যয়ে ১৯৪৩ এ ফসলের উৎপাদন হ্রাস পায় ও বাংলায় খাদ্যাভাব দেখা দেয়।



(ii) খাদ্য সংকট:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ব্রহ্মদেশের উপর জাপান তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। ফলে ব্রহ্মদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হত তা বন্ধ হয়ে যায়। এরূপ পরিস্থিতিতে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী খাদ্য মজুদ করে কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে।



(iii) পরিবহন ব্যবস্থার সংকট:-তৎকালীন সময়ে জলপথ ছিল পরিবহনের একমাত্র ভরসা। নৌকার সাহায্যে সেনাদের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে খাদ্য পাঠানো হতো। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার জাপানি সৈন্যবাহিনীর মধ্যে খাদ্য সংকট তৈরি করার জন্য প্রায় ২৬,০০০ নৌকা ভেঙে দেয় এবং ২০ হাজার নৌকা অন্য স্থানে পাঠায়। ফলে খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছায়।



(iv) ভ্রান্ত নীতি:-১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের জন্য ব্রিটিশ সরকারের নীতি অনেকাংশে দায়ী। যেমন পোড়ামাটির নীতি, আমেরিকা ও কানাডার খাদ্য রপ্তানি প্রত্যাখ্যান, অনেক দেরিতে রেশন ব্যবস্থা চালু, প্রচুর নোট ছাপানো প্রভৃতি।



(v) অন্যান্য কারণ:- এছাড়াও বাংলার দুর্ভিক্ষের নানান কারণ ছিল। যেমন - ফসল নষ্ট হওয়া, চালের জোগান বন্ধ হওয়া,  মুদ্রাস্ফীতি , অপর্যাপ্ত খাদ্যের যোগান,  শ্রমিক- মজুরদের স্বল্প মজুরি, খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধি, বাজার ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, অসাধু ব্যবসায়ীদের দালালি প্রভৃতি।



ফলাফল:- ১৯৪৩ এর মন্বন্তরের বিভিন্ন পরিণতি লক্ষ্য করা যায়। যেমন-

  

(i) ব্যাপক মৃত্যুহার:- একদিকে বিপুল অনাহার ,অপরদিকে অজানা রোগের প্রকোপ, ফলে বাংলার জনসংখ্যা তলানিতে যায়, রাস্তাঘাটে, বনে জঙ্গলে হাজার হাজার মৃতদেহের স্তূপ সৃষ্টি হয়েছিল। এই মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় 30 লক্ষ।



(ii) রাজনীতি:- পঞ্চাশের মন্বন্তরের অন্যতম কারণ ছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ না করা। এই আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণেই বাংলার জনগণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লিপ্ত হয় এবং সমগ্র বাংলায় খাদ্য সংকট ঘটে।



(iii) দুর্বল অর্থনীতি:- দুর্ভিক্ষের কারণে বাংলার আর্থিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বহু সম্পন্ন পরিবার ভিখারিতে পরিণত হয়।। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলের মানুষ খেতমজুর হয়ে পড়ে। তাদের কাছে রেশন পর্যন্ত ও পৌঁছায়নি।



(iv) নৈতিক অবক্ষয়:- পঞ্চাশের মন্বন্তরের কারণে গ্রাম বাংলার বহু মানুষ নিজের জীবনকে বাঁচানোর তাগিদে প্রিয়জনকে ছেড়ে শহরে চলে যায়। এমনকি ছোট শিশুকে বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতা খুঁজে না পেয়ে পুকুরে ফেলে দেয়।



(v) অন্যান্য ফলাফল:- দুর্ভিক্ষের কারণে বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। জমির মালিকানা মানুষ ত্যাগ করে ক্ষুধার যন্ত্রণায় দরিদ্র কৃষক বাবা-মা স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্মঘাতী হয়েছিল প্রভৃতি।


3. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো । এই ঘটনার গুরুত্ব কী ছিল ?



                    B     উত্তর 



ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতবর্ষে সর্বাধিক পৈশাচিক , ভয়াবহ এবং অমানবিক হত্যাকাণ্ড ছিল 1919 খ্রিস্টাব্দে পাঞ্চাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড । এই ঘটনা সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ইংল্যান্ডের অপশাসনকে পরিষ্কার করে তুলে ধরেছিল । 


জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট : 


কঠোর নির্যাত:-  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের কঠোর দমনমূলক নীতি ও সীমাহীন অত্যাচার । এইসময় সৈন্য ও অর্থ সংগ্রহের জন্য ইংরেজ সরকার যে নির্যাতন শুরু করেছিল তা এই ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী ।  


আর্থিক সংকট:-  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং শিল্প ধ্বংসের ফলে দেশজুড়ে বেকারের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় যা ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোকে অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত করে । 


মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন:- 1919 খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে মন্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইন পাশ করা হয় । কিন্তু এই আইন ভারতীয়দের দাবিদাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয় যা জনমানসে হতাশার সৃষ্টি করে । 


রাওলাট আইন:-  প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধের জন্য কুখ্যাত রাওলাট আইন পাশ করে । এই আইনের ভয়াবহতা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের জন্য অনেকাংশে দায়ী । 


রাওলাট সত্যাগ্রহ:- রাওলাট আইনের বিরোধিতা করে গান্ধিজির নেতৃত্বে রাওলাট সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয় । এইসময়ে 1919 খ্রিস্টাব্দের 10 এপ্রিল রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে মদত দেবার অপরাধে ড . সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড . সত্যপালকে গ্রেপ্তার করা হলো পাঞ্জাবে এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । 


জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড : এই পরিস্থিতিতে পাঞ্জাবে জেনারেল মাইকেল ও ডায়ার এক সমারিক আইন জারি করেন , এরই প্রতিবাদে 13 এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগের বাগানে ঘেরা এক স্থানে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ সমবেত হলে জেনারেল ডায়ার – এর নির্দেশে 1600 রাউন্ড গুলি চালানো হলে সেখানে শতাধিক মানুষ নিহত এবং অজস্র মানুষ আহত হন । এই কলঙ্কিত ঘটনা ইতিহাসে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত । 



গুরুত্ব :- ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছু গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। যেমন-



 প্রথমত , জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড সমগ্র ভারতবর্ষে তথা বিশ্ববাসীর কাছে ব্রিটিশ সরকারের নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী ছবি ফুটিয়ে তুলেছিল । ব্রিটিশ সরকারের বর্বরতাকে চিহ্নিত করেছিল । 


দ্বিতীয়ত , এই ঘটনার প্রতিবাদে সমাজের সকল স্তরের মানুষ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সমবেত হতে শুরু করেছিল । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশদের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেন । গান্ধিজি লেখেন— “ এই শয়তানের সরকারের সংশোধন অসম্ভব , একে ধ্বংস করতেই হবে । ” 


তৃতীয়ত , এই ঘটনার প্রতিবাদ ভারতের বাইরে ইংল্যান্ডেও হয় । প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যামকুইন মন্তব্য করেন— “ One of the worst outrages in the whole of our history ” , এর পরিপ্রেক্ষিতে হান্টার কমিশন গঠিত হয় এবং জেনারেল ডায়ারকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় । 


চতুর্থত , জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে সর্বভারতীয় অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল এই নৃশংস ঘটনা ও অন্যায়ের সুবিচার করা । 




4. ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের পটভূমি ব্যাখ্যা করো । এই আইনের ত্রুটিগুলি কী ছিল ? 


                       উত্তর



 পটভূমি : বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন , জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিরোধ এবং বৈপ্লবিক সন্ত্রাসবাদীদের উত্থানের মতো ঘটনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড বালফোর এক কৌশলী আপস নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন । তিনি লর্ড কার্জনের কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড মিন্টোকে ভারতের গভর্নর জেনারেল করে পাঠান । এইসময় ভারত সচিব ছিলেন লর্ড মলে । লর্ড মলে ও লর্ড মিন্টো এক শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দ্বারা কংগ্রেসের নরমপন্থী গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে ও নরমপন্থী – চরমপন্থী বিবাদ দীর্ঘস্থায়ী করতে এবং কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক দল মুসলিম লিগের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হন । তাঁদের উদ্যোগে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর ভারতের শাসন সংস্কারের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি খসড়া আইন পেশ করা হয় । ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এই খসড়া আইন আইনের রূপ পায় । এই আইন মর্লে – মিন্টো আইন , ১৯০৯ নামে পরিচিত । 



 আইনের বৈশিষ্ট্য : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে – মিন্টো শাসন সংস্কার আইনের প্রকৃত নাম ছিল ভারত শাসন আইন । এই আইনের দু’টি দিক ছিল । 


( ক ) কার্যনির্বাহী পরিষদ , 


( খ ) আইন পরিষদ । 


( ক ) কার্যনির্বাহী পরিষদ : 


গভর্নর জেনারেলের কার্যনির্বাহী পরিষদে একজন করে ভারতীয় প্রতিনিধি দল গঠন করা হয় । কার্যনির্বাহী পরিষদে প্রথম ভারতীয় প্রতিনিধি ছিলেন ব্যারিস্টার লর্ড সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ । তিনি এই পরিষদে আইন সদস্যরূপে নিযুক্ত হন । 

বোম্বাই , মাদ্রাজ ও বাংলার গভর্নরদের কার্যনির্বাহী পরিষদে সদস্যসংখ্যা ২ জন থেকে বাড়িয়ে ৪ জন করা হয় । 


আইন পরিষদ : আইন পরিষদে চার ধরনের নির্বাচকমণ্ডলী রাখার কথা বলা হয় । যথা – 


প্রাদেশিক আইন পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি দল , 

সংখ্যালঘু মুসলিমদের পৃথক নির্বাচনের জন্য নির্বাচক দল , 

দেশীয় শাসক ও জমিদারদের জন্য প্রতিনিধি দল এবং 

বিশ্ববিদ্যালয় , বণিক সংগঠন প্রভৃতি সংস্থার নির্বাচিত প্রতিনিধি দল । 

মলে – মিন্টো সংস্কার আইনের ত্রুটি : ভারতীয়দের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে মলে – মিন্টো আইন পাশ হলেও এই আইনের বিভিন্ন ত্রুটি ছিল । যেমন – 


অধিকারহীনতা : এই আইনের মাধ্যমে দেশীয় রাজ্য , সামরিক বিভাগ , বিদেশনীতি প্রভৃতি বিষয়ে কোনো প্রস্তাব আনার অধিকার আইনসভার হাতে ছিল না । 



 দায়িত্বশীলতার অভাব : মলে – মিন্টো আইনের দ্বারা কেন্দ্রে এবং প্রদেশে নির্বাচিত ভারতীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ কোনো গুরুত্ব স্বীকৃত হয়নি । ফলে এই আইন ভারতে কোনো দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় । 


আরো পড়ো ...... 



বিষয়   উচ্চ মাধ্যমিক সাজেশন ২০২৩
 বাংলা  বিস্তারিত 
 শিক্ষাবিজ্ঞান বিস্তারিত 
 রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিস্তারিত 
 ইতিহাস বিস্তারিত 

Post a Comment

0 Comments