পড়াশোনা:-দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস, দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে প্রশ্ন - উত্তর সাজানো হয়েছে। তবে প্রতি বছরের জন্য এই প্রশ্ন উত্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা খুজে চলেছে - দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় MCQ, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় SAQ , উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর, উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ছোটো প্রশ্ন উত্তর, দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর ,দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর প্রভৃতি।
■ উচ্চমাধ্যমিকের চতুর্থ অধ্যায়ঃ সাম্রাজ্যবাদের বিরুধ্যে প্রতিক্রিয়া থেকে MCQ আসবে আবার SAQ ও আসবে। তাই অধ্যায়টি খুঁটিয়ে পড়তে হবে। এরপর আমাদের দেওয়া MCQ ও SAQ পড়তে হবে। তোমরা যদি ছোটো প্রশ্নোত্তর খুঁটিয়ে পড়ো তাহলে অবশই ভালো ফল হবে। আশাকরি বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষা ভালোই হয়েছে। বাকি পরীক্ষাও ভালো করে দাও।
বিষয় | ইতিহাসঃ দ্বিতীয় অধ্যায় |
শ্রেণী | দ্বাদশ |
বোর্ড | WBCHSE |
MCQ | 30 টি |
SAQ | 15টি |
LAQ | 4 টি |
উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ MCQ
Q ➤ ভাস্কোদাগামা ভারতের কোন বন্দরে পদার্পণ করেন?
Q ➤ 'নতুন বিশ্ব'- শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
Q ➤ ইয়ান্দাবুর সন্ধি কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
Q ➤ পর্তুগিজরা 'ব্ল্যাক গোল্ড'- কাকে বলতো ?
Q ➤ সগৌলির সন্ধি কবে স্বাক্ষরিত হয়?
Q ➤ 'শিল্প বিপ্লব'- শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
Q ➤ ভারতের কোন রাজ্যে ইংরেজরা প্রথম রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে?
Q ➤ 'মার্কেন্টাইল'-শব্দটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন?
Q ➤ টিয়েনসিয়েন সন্ধি কবে স্বাক্ষরিত হয়?
Q ➤ ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব ঘটার পেছনে কারণ কী?
Q ➤ কত সালে আমেরিকার স্বাধীনতা লাভ করে ?
Q ➤ বার্থোলোমিও দিয়াজ কোন দেশের নাগরিক ছিলেন?
Q ➤ কার নাম অনুসারে আমেরিকা মহাদেশের নামকরণ করা হয়?
Q ➤ রেড ইন্ডিয়ান নামে কারা পরিচিত?
Q ➤ নিশিথ সূর্যের দেশ কাকে বলা হয় ?
উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাছাই করা SAQ
1. আলিনগরের সন্ধি কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল?
Ans- ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বাংলার নবাব সিরাজদৌলার মধ্যে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
Ans: Colonialism বা উপনিবেশবাদ শব্দের উৎস লাতিন শব্দ Colonia । এর অর্থ হলো বিশাল সম্পত্তি বা এস্টেট ।
12.আফ্রিকাকে কেন বলা হয় ‘ অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ ‘ ?
Ans: উনিশ শতকের মধ্যভাগের আগে পর্যন্ত আফ্রিকার অধিকাংশ অঞ্চলই ইউরোপের মানুষের কাছে অচেনা ও অনাবিষ্কৃত ছিল । তাই একে বলা হতো অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ
13. সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব কোথায় শুরু হয়েছিল ?
Ans: ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয় ।
14. কার নেতৃত্বে , কবে বার্লিন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ?
Ans: জার্মান চ্যান্সেলর বিসমার্কের নেতৃত্বে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ।
15.আমেরিকা ছিল কাদের উপনিবেশ ?
Ans: আমেরিকা ছিল ব্রিটিশদের উপনিবেশ ।
16. নীলজল নীতি ‘ কী ?
Ans: পোর্তুগিজ শাসনকর্তা আলবুকার্কের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ‘ নীলজল নীতি ‘ নামে পরিচিত ।
17.মুক্ত বাণিজ্য নীতির প্রবক্তাদের কী বলা হতো ? এই নীতির অন্যতম সমর্থক কে ছিলেন ?
Ans: ফিজিওক্র্যাটস বলা হতো । এই নীতির অন্যতম সমর্থক হলেন অ্যাডাম স্মিথ ।
উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বড়ো প্রশ্ন উত্তর
১.মার্কেন্টাইলবাদ বলতে কী বোঝো ? এর বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব আলোচনা কর। 2+6=8
উত্তরঃ
মার্কেন্টাইলবাদঃ- ষোড়শ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ইউরোপে বণিকবাদ বা মার্কেন্টাইলবাদ এর জন্ম হয়। এটি একটি ইউরোপের বিশেষ অর্থনৈতিক শক্তি। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ 'Wealth of nation' গ্রন্থে মার্কেন্টাইলবাদ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তার মতে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশে উপনিবেশগুলি দখল করে। তারা উপনিবেশ গুলি থেকে প্রচুর সম্পদ লুট করে ধনী হন। এরূপ ধনী বণিক সম্প্রদায় ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে আর্থিক শোষণ চালিয়ে যে মুনাফা অর্জন করেছিল, তাকে মার্কেন্টাইল মূলধন বলা হয়। তাই মার্কেন্টাইলবাদ এর প্রধান বক্তব্য ছিল সম্পদ সংরক্ষণ করা।
মার্কেন্টাইলবাদের বৈশিষ্ট্যঃ- মূলত রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে শক্তিশালী করার জন্য যে নীতিগুলি গৃহীত হয়, তাকে মার্কেন্টাইলবাদ বলে। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
মূল্যবান ধাতুর সঞ্চয়ঃ- মার্কেন্টাইলবাদ এর যুগে মূল্যবান ধাতু বলা হত সোনা ও রুপাকে। তাই সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল উপনিবেশগুলি থেকে যে কোনো উপায়ে সোনা ও রুপা সংগ্রহ করা। ইংল্যান্ড ভারত থেকে বহু সোনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
আমদানি নিয়ন্ত্রণঃ- ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নিজের দেশের শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি করা ও কৃষি জাত পণ্যের পরিমাণ হ্রাস করা। তেমনি আবার বিদেশ থেকে দ্রব্য আমদানি করা পণ্যের নিয়ন্ত্রণ করা।
শুল্কনীতির প্রচলনঃ- ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধি করার উপর জোর দেয়। এর ফলে দেশের সর্বত্রই শুল্কনীতির প্রচলন ঘটে। তাই রপ্তানিকারি দ্রব্যের উপর শুল্ক কম, আবার আমদানি করা দ্রব্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়।
মার্কেন্টাইলবাদের প্রভাবঃ- মার্কেন্টাইলবাদের নানান প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ইউরোপ তথা সারা বিশ্বে। যেমন-
বাণিজ্যিক পুঁজির উৎপত্তিঃ-- মার্কেন্টাইলবাদের ফলে উপনিবেশ গুলিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন উপনিবেশগুলিতে কৃষির বানিজ্যিকীকরণ ঘটে। যেমন- তুলো , পাট,আফিম প্রভৃতিকে বাণিজ্যিক ফসলের মর্যাদা দেওয়া হয়।
পুঁজিবাদের বিকাশঃ- মার্কেন্টাইলবাদের ফলে ইউরোপে পুঁজিবাদের উদ্ভব হয়। কারণ ইউরোপের দেশগুলি শিল্পজাত পণ্য উপনিবেশগুলিতে রপ্তানি করে প্রচুর মূলধনের অধিকারী হয়ে ওঠে।
আমেরিকার স্বাধীনতা লাভঃ- মার্কেন্টাইলবাদ অনুযায়ী ইংল্যান্ড উত্তর আমেরিকায় ৩টি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল ফলে আমেরিকার জনগণ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় ও সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে।
মন্তব্যঃ- এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার শেষে বলা যেতে পারে যে, মার্কেন্টাইল অর্থনীতির ভিতর থেকেই শিল্পপুঁজির আবির্ভাব ঘটে। ফলে শিল্প পুঁজির যুগে মালিকের হাতে বিপল মুনাফা আসে। সাধারণ মানুষও মুনাফা দেখে শিল্পের শেয়ার ক্রয় করে। এর ফলে ধীরে ধীরে মার্কেনটাইলবাদের অবসান ঘটে ও শিল্পপুঁজির আবির্ভাব ঘটে। সুতরাং তা সত্ত্বেও মার্কেন্টাইলবাদের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না।
২. ঔপনিবেশিক সমাজের জাতিসংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো। 8
উত্তর
ভূমিকাঃ- ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল- বর্ণ বৈষম্য ও জাতিভেদ। ইংরেজি Race এর বাংলা অর্থ হল জাতি বা কুল বা বর্ণ। বিভিন্ন ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র নিজেদের উপনিবেশ গুলিতে শাসন পরিচালনা করার জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দেয় জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব ও জাতিগত নিকৃষ্টতার উপর, যার ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয় জাতিগত বৈষম্য।
জাতি বৈষম্যঃ- পশ্চিমী দেশের সাদা চামড়ার মানুষেরা জাতি গত বৈষম্য ধারনার সৃষ্টি করেছিলেন। এর উৎপত্তি হয়েছিল জাতি, ধর্ম, বংশ, সম্প্রদায় ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে। যার প্রভাব ও ব্যবহার সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি ঘটিয়েছিল। যেমন- ঔপনিবেশিক শ্বেতাঙ্গদের ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদির মতো দেশগুলিতে এই বর্ণ বৈষম্য নীতির নির্লজ্জ বহি:প্রকাশলক্ষ করা যায়।
শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গঃ- ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক জাতিগুলি উপনিবেশের অধিবাসীদের নিচু চোখে দেখতো। এই ইউরোপীয়দের চামড়া সাদা ছিল তারা শ্বেতাঙ্গ নামে পরিচিত। আবার তাদের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মানুষ কালা আদিবাসী বা কৃষ্ণাঙ্গ নামে পরিচিত। এই কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের বিভেদকেই সাধারণভাবে জাতি বৈষম্য বা বর্ণ বৈষম্য বলা হয়।
জাতিগত ব্যবধানের প্রভাবঃ- জাতিগত ব্যবধান ছিল ঔপনিবেশিক যুগের একটি সামাজিক পরিণতি। জাতি ও বর্ণবৈষম্যের প্রভাব প্রায় সব উপনিবেশগুলিতে পড়েছিল। এর প্রভাবগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- সদর্থক প্রভাব ও নয়র্থক প্রভাব।
সদর্থ প্রভাবঃ- জাতিগত ব্যবধানে সদর্থক প্রভাবগুলি হল-
যুক্তিবোধের বিকাশঃ- বর্ণ বৈষমের ফলে উপনিবেশগুলিতে পাশ্চাত্যের প্রভাব পড়ে। ফলে ভারত ও আফ্রিকার মতো মানুষেরা কুসংস্কার মুক্ত হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও যুক্তিবোধে অনেক এগিয়ে যায়।
শিল্পকলা ও সংগীতের বিকাশঃ- ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে যেমন পাশ্চাত্যের শিল্পীরা প্রাচ্য শিল্প রীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। তেমনি উপনিবেশগুলিতেও পাশ্চাত্য চিত্রকলার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন- পাবলো পিকাসো প্রাচ্য রীতির দ্বারা চিত্র অংকন করেছিলেন।
নারী বিজ্ঞানের উন্নতিঃ- জাতিগত বৈষম্যের কারণেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটে। পাশ্চাত্য জাতির প্রভাব পড়ে প্রাচ্যের জীবন তথা সমাজ ইতিহাসের উপর।ফলে নৃবিজ্ঞানের গবেষণা বৃদ্ধি পায় এবং জীববিজ্ঞানের শাখা হিসেবে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে।
নয়র্থক প্রভাবঃ- জাতিগত বৈষম্যের কিছু নয়র্থক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমনঃ-
অমানবিক আচরণঃ- শ্বেতাঙ্গ জাতি কৃষ্ণাঙ্গ জাতির উপর শোষণ চালাত। ফলে কৃষ্ণাঙ্গদের রাস্তাঘাট, হোটেল, খেলার মাঠ, গাড়ি প্রভৃতি ক্ষেত্রেই অপমানিত হতে হতো। যেমন- ভারতের গান্ধীজিকে রেলগাড়ি থেকে ঠেলে নামিয়ে দেওয়া হয়।
শোষণ ও অত্যাচারঃ- শ্বেতাঙ্গরা উপনিবেশগুলিতে তীব্র শোষণ ও অত্যাচার করতো।যেমন- শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে বাধ্য করেছিল কৃষ্ণাঙ্গদের। এছাড়াও অসম শুল্কনীতির দ্বারা কৃষি, ব্যবসা ও কুটির শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়।
অন্যান্য নয়র্থক প্রভাবঃ- এছাড়াও সাদা চামড়ার মানুষেরা নিজেদেরকে ঈশ্বরের দূত ঘোষণা করে শ্রেষ্ঠ জাতির উপাধি গ্রহণ করে। তারা উপনিবেশ থেকে বহু ক্রীতদাস আমদানি করতো, কৃষ্ণাঙ্গরা ভালো পদে চাকরি করলেও বেতন বৈষম্য, খাদ্য বৈষম্য ও বাসস্থানের পার্থক্য ছিল।
৩. নয়া উপনিবেশবাদ বলতে কী বোঝো? নয়া উপনিবেশবাদের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো। 2+6=8
উত্তরঃ
নব্য উপনিবেশবাদঃ- ল্যাটিন শব্দ "Colonia" থেকে ইংরেজি কলনি শব্দটি এসেছে। যার অর্থ হল উপনিবেশবাদ। এই উপনিবেশবাদ সময়ের সাথে সাথে নতুন রূপ লাভ করে। সম্ভবত ১৮৭০ এর দশকে ইউরোপের শিল্পোন্নত জাতিগুলি ইউরোপের বাইরে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এর ফলে নতুন নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার হয়। যেগুলি ইউরোপীয় জাতির উপনিবেশে পরিণত হয়। একেই নয়া উপনিবেশবাদ বলে। এই কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছিলেন ফরাসি ঐতিহাসিকগণ এবং মার্কসবাদী ঐতিহাসিকগণ।
নয়া উপনিবেশবাদের বৈশিষ্ট্যঃ- আটএর দশকে পুঁজিবাদী দেশগুলির সরকার, বহু জাতি সংস্থার আধিপত্য বর্ণনা প্রসঙ্গে যে নয়া উপনিবেশবাদের আলোচনা করা হয়েছে তাতে এর কতকগুলি বৈশিষ্ট্য ধরা পড়েছে। যেমন-
উপনিবেশহীন সাম্রাজ্যঃ- অতীতে উপনিবেশগুলির অর্থনৈতিক ক্ষেত্র বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। পরে উপনিবেশগুলি দখল করা হয়। কিন্তু আধুনিক যুগে নয়া উপনিবেশবাদের উৎপত্তি ঘটে। ফলে উপনিবেশ গুলির উপর সাম্রাজ্যবাদের কোন চিহ্ন নেই। তাই অনেকে নয়া উপনিবেশবাদের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কোনো উপনিবেশ থাকে না বলে মনে করেন।
বাজার অর্থনীতিঃ- নয়া উপনিবেশবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বাজার অর্থনীতি। বর্তমানে বাজারি অর্থনীতিকে হাতিয়ার করে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র আমেরিকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে।
অর্থনৈতিক শোষণঃ- ধনী দেশগুলি চক্ষুর আড়ালে দরিদ্র তথা উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর বহু জাতি সংস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক শোষণ চালায়। পুঁজিবাদী দেশগুলি ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে অনুন্নত দেশগুলিতে এই শোষণ চালায়।
শাসক গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণঃ- ধনী দেশগুলি দরিদ্র দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিকে খুশি করার জন্য বিশেষভাবে যত্ন নেয়। এমনকি সেই দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা, বৃত্তি প্রদান, ঋণ প্রদান প্রভৃতির মাধ্যমে অনুন্নত দেশের শাসককে প্রভাবিত করেন। যাতে অনুন্নত দেশের শাসক ধনী দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সামরিক জোট গঠনঃ- রাশিয়া ও আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশ গুলি নতুন স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলির উপর নিজেদের ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বিভিন্ন সামরিক জোট ও চুক্তি সম্পাদন করে দুর্বল রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে। যেমন ন্যাটো, সিয়াটো,সেন্টো প্রভৃতি।
রাজনৈতিক ভিত্তিঃ- উপনিবেশ স্থাপনে উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা। কিন্তু আধুনিককালে লোকচক্ষুর আড়ালে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন অনুদান প্রদান, প্রযুক্তিগত সহায়তা, শিল্পের বিকাশ, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতির দ্বারা রাজনৈতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে।
মন্তব্যঃ- পরিশেষে বলা যায় যে, নয়া উপনিবেশবাদ দরিদ্র তথা উন্নয়নশীল দেশগুলি উন্নয়নের ব্যবস্থা করেনি, বরং পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি তাদের অলিখিতভাবে পরাধীন করে রেখেছে। একারণেই উন্নয়নশীল ও দরিদ্র রাষ্ট্রগুলি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ,G-77 প্রভৃতির সমর্থনে নয়া উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
৪. সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝো? সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর
ভূমিকাঃ- অতীতকাল থেকেই দেখা যাচ্ছে শক্তিমান মানুষ দুর্বল মানুষের উপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দেখা যায় ধনী তথা শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি দুর্বল তথা অনুন্নত দেশগুলিতে নিজেদের ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। যেমন- ইউরোপীয় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি ভৌগোলিক অভিযানের ফলে নতুন নতুন দেশ আবিষ্কার করে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছে।
সাম্রাজ্যবাদঃ- সাম্রাজ্যবাদ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Imperialism এসেছে ল্যাটিন শব্দ Imperium থেকে। যার অর্থ হল সর্বময় কর্তৃত্ব। ১৮৭০ এর দশকে সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্টি হয়। সেই সময় বিভিন্ন দেশে স্থান অধিকার করাকেই সাম্রাজ্যবাদ বলা হত। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পর মনে করা হয়, কোনো দেশের ভৌগোলিক, জনগণ, ভূমি, সংস্কৃতি প্রভৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করাকেই সাম্রাজ্যবাদ বলা হয়।
■ সর্বশেষে বলে যেতে পারে যে সাম্রাজ্যবাদ হল এমন এক নীতি, যার মাধ্যমে কোন শক্তিশালী রাষ্ট্র কোন দুর্বল দেশের উপর নিজের প্রভুত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করে।
সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণঃ- ১৮৭০ সালে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারে প্রচলন ঘটে। এই সাম্রাজ্য বিস্তারের বিভিন্ন কারণ ছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। যেমন - অর্থনৈতিক ,রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মপ্রচার, সংস্কৃতি প্রভৃতি।
অর্থনৈতিক কারণঃ- শিল্প বিপ্লবের পর ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি কাঁচামাল সংগ্রহ, পণ্য বিক্রয়, শ্রমিক যোগান, উদ্বৃত্তমূল্য সংগ্রহ প্রভৃতির উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘাটি নির্মাণ করে পরবর্তীতে তারা প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করলে সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ঘটায়।
রাজনৈতিক কারণঃ- ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে প্রচার করার জন্য এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় অভিযান চালান। ফলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রতিযোগিতায় তারা জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সাম্রাজ্যবাদের লড়াই। যেমন- হিটলার অনার্য জাতির উপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে।
সামাজিক কারণঃ- অনেকে মনে করেন উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা ও জাতীয় নিরাপত্তা সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের অন্যতম কারণ। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলির জনসংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে বাসস্থান ও কাজের উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন দেশে গমন করে । তার ফলে সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি হয়। আবার অনেকে মনে করে কোনো দেশ জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অন্য দেশের সীমা অতিক্রম করে ভূখণ্ড অধিকার করলে সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি হয়।।
ধর্মীয় কারণঃ- সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের অন্যতম কারণ হল ধর্ম প্রচার।যেমন খ্রিস্টান মিশনারীরা, ফরাসি ধর্ম প্রচারক ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতে ও আফ্রিকায় প্রবেশ করে। এইভাবেই ইউরোপীয় বণিকরা সে দেশে শাসন ক্ষমতা নিজেদের হস্তগত করে। সুতরাং বলা যায় ধর্ম প্রচার সাম্রাজ্যবাদের জন্ম দিয়েছিল।
সাংস্কৃতিক কারণঃ- পিছিয়ে পড়া অনুন্নত দেশগুলিতে শিক্ষা ও সংস্কৃতির আলো পৌঁছে দেওয়ার নাম করে ইউরোপীয় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি দুর্বল দেশের ভূখণ্ড অধিকার করেছে।
মন্তব্যঃ- পরিশেষে বলা যায় সাম্রাজ্যবাদ ও তার প্রভাব কোনো সভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারেনি। বর্তমানে চরম নিন্দা সূচক অর্থে সাম্রাজ্যবাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তবে সাম্রাজ্যবাদের হাত ধরেই ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেছে।
3 Comments
Geography ar gulo ar political ar gulo dile valo hoi
ReplyDeleteDon't worry. Kaj chalchhe khub taratari upload kara habe
Delete👍
ReplyDelete