***শিকার কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর || উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

***শিকার কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর || উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

 পড়া শোনা -  উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্য শিকার কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হলো। এই কবিতা থেকে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন-উত্তর ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আজকে তোমাদের কথা ভেবেই আমরা রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর আপলোড করলাম। তোমরা অনেকেই খুঁজে চলেছো শিকার বড় প্রশ্ন উত্তর pdf প্রভৃতি। তাই প্রতিটি উত্তর যথাযথভাবে দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ১৫০ শব্দের মধ্যে বাংলার রচনাধর্মী প্রশ্নএর উত্তর দিতে হয়। সেই অনুযায়ী উত্তর লেখা হয়েছে।


 ■ 2024 সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ব্যবস্থায় বদল হতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অনেকের মতে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা দুটি ধাপে হতে পারে। তবে যে পদ্ধতিতেই পরীক্ষা নেওয়া হোক না কেন আমাদের প্রস্তুতি বজায় রাখতে হবে।  



উচ্চমাধ্যমিকের 'শিকার' কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর 

১." আগুন জ্বলল আবার"- আবার শব্দটির ব্যাবহারের তাৎপর্য কী? 
 আবার আগুন জ্বলল কেন? এই ঘটনা কীসের ইঙ্গিত দেয়? ১+২+২=৫
২." হয়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো"-
 এখানে কিসের কথা বলা হয়েছে?
কবিতাটির বিষয়বস্তু অবলম্বনে মন্তব্যটি যথার্থতা বিচার করো। ১+৪=৫
৩. 'শিকার'- কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। ৫
৪ . 'শিকার' কবিতায় দুটি স্তবকের সূচনায় 'ভোর' শব্দটি প্রয়োগ
 করা হয়েছে ।দুটির 'ভোর' শব্দের প্রয়োগগত পার্থক্য আলোচনা করো।৫
৫." এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল"- কে অপেক্ষা করছিল?
তার পরিণতি কী হয়েছিল?                           ১+৪=৫
৬. " একটা অদ্ভুত শব্দ"- শব্দটি কীসের? এই শব্দের পর
 কোন ঘটনার কথা বলেছেন কবি?                ১+৪=৫

 ১. "আগুন জ্বলল আবার"-আবার শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী ?আবার আগুন জ্বলল কেন ? এই ঘটনা কীসের ইঙ্গিত দেয় ?                                ১+২+২ =৫


                                  -- উত্তর ---


আবার শব্দটির তাৎপর্য :- জীবনানন্দ দাশের 'শিকার ' কবিতায় আগুন জ্বলার প্রসঙ্গ দুইবার ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমবার আগুন জ্বালিয়েছিল দেশোয়ালি মানুষেরা। শীতের সময় শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য তারা শুকনো অশ্বস্থ পাতায় আগুন জ্বালিয়েছিল। কিন্তু কবিতায় আরো একবার আগুন জ্বালানো হয়েছিল হরিণের মাংস তৈরির জন্য । এই দুই প্রকার আগুনের বিভেদ বোঝাতেই কবি 'আবার' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। 


আগুন জ্বালানোর কারণঃ- এক শীতের ভোরের আলোয় মৃত্যু ভয় কাটিয়ে বাদামি হরিণ মাঠে নেমে আসে । সারারাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য সুন্দর বাদামি হরিণ সংগ্রাম করেছে। কিন্তু ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু ভয় কেটে যায়। হরিণটি অকুতোভয়ে যখন সবুজ সুগন্ধি ঘাস ছিড়ে খাচ্ছিল, তখন ক্লান্ত শরীরটাকে সতেজ করার জন্য হরিণটি নদীর তীক্ষ্ণ শীতল জলে নামিয়ে দেয়। বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন নিয়ে হরিণটি সোনার বর্ষার মতো জেগে উঠতে চেয়েছিল। নতুন স্বপ্নে বিভোর হরিণটি নিজের রূপের দ্বারা হরিণির পর হরিণিকে চমক লাগাতে চেয়েছিল। এরূপ স্বপ্নে বাদামি হরিণটি যখন বিভোর হয়ে পড়ে, সেই মুহূর্তে শিকারীদের ছোড়া গুলিতে সমস্ত স্বপ্নের অবসান ঘটে । কবির কথায়- " একটা অদ্ভুত শব্দ / নদীর জল মচকা ফুলের পাপড়ির মতো লাল / আগুন জ্বলল আবার- উষ্ণ লাল হরিণের মাংস তৈরি হয়ে এ।" অর্থাৎ মাংস লোভী শিকারীর দল নিজেদের ভোগবাসনা পূরণের জন্য পুনরায় আগুন জ্বালায় । যাদের উদ্দেশ্য ছিল হরিণের মাংস তৈরি করে রসনা তৃপ্তি করা।


ঘটনার ইঙ্গিতঃ-  অরণ্য পরিবেশে নিষ্পাপ হরিণটি রাতের অন্ধকারে চিতা বাঘের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করলেও উন্নত প্রাণী মানুষের লোভী দৃষ্টি তাকে হত্যা করেছে। এই ঘটনার দ্বারা কবি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যান্ত্রিক শক্তির কাছে সমস্ত প্রাণী অসহায়। লোভী মানুষেরা নিজেদের স্বার্থ ও লোভ লালসা পূরণের জন্য যন্ত্র শক্তিকে ব্যবহার করে। এতে তাদের লালসা হ্রাস পায়না বরং বেড়েই চলে। তাই ক্ষমতালোভী মানুষেরা নিজেদের বাসনা চরিতার্থ করার জন্য মানুষকে মেরে ফেলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। তাদের লোভের আগুনে পুড়ে কত নিষ্পাপ প্রাণ হারিয়ে যায়, কত স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যায়, এই চরম সত্য কবি উদ্ধৃতাংশটির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।


২. " হয়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো"- এখানে কিসের কথা বলা হয়েছে? কবিতাটির বিষয়বস্তু অবলম্বনে মন্তব্যটি যথার্থতা বিচার করো।

                                                                   ১+৪=৫

                           --- উত্তর----

উল্লেখিত বিষয়ঃ- 'শিকার' কবিতার উদ্ধৃতাংশটি দেশোয়ালিদের  জ্বালানো আগুনের রং সূর্যের আলোয় বিবর্ণ হয়ে গেছে, সেই কথা বোঝাতেই কবি আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন। এখানে জীবনের দুটি পর্বের চিত্র অঙ্কন করেছেন কবি। প্রথম ভোরের সূচনালগ্নে জীবনের চঞ্চলতা যেমন লক্ষ্য করা যায়, তেমনই শেষ পর্বে হরিণের করুন পরিণতিতে জীবনের আলো বিবর্ণ হয়ে যায়। দেখা যায় দেশোয়ালিরা যে আগুন জ্বালিয়ে ছিল, তা শেষ পর্যন্ত বিবর্ণ হয়ে যায়। সূর্যের আলোর এরূপ প্রাণহীন বিবর্ণ আলোকে কবি রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার সঙ্গে তুলনা করেছেন।


কবিতার বিষয়বস্তুঃ- 'ভোর' শব্দটির মধ্য দিয়ে কবিতা শুরু হয়েছে। এই পর্বে দেখা যায় চারিদিকের পেয়ারা ও নোনার গাছ টিয়ার পালকের মতো সবুজ। আকাশের রং ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল-নীল। এমনকি দেশোয়ালি -দের জ্বালানো আগুনের রং ছিল ফুলের মত লাল। এরূপ সুন্দর পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটায়। যা কবিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় বা নেশাগ্রস্ত করে তুলেছে। তবে এরূপ ভোরের উজ্জলতা যে ম্লান হয়ে যায় তা কবি উল্লেখ করতেই লিখেছেন- " শুকনো অশ্বত্থ পাতা দুমড়ে এখনো আগুন জ্বলছে তাদের /সূর্যের আলোয় তার রঙ কুমকুমের মতো নেই আর/ হয়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো।" অর্থাৎ সূর্যের আলোয় চারিদিকের বর্ণ ও আকাশ ঝিলমিল করলেও আগুনের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়।


মন্তব্যটি যথার্থতাঃ- যে কোন প্রাণীর প্রথম জীবনে নানান স্বপ্ন ও আশা থাকে। সেই স্বপ্ন পূরণে তারা চঞ্চল ও সতেজ থাকে। কিন্তু আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার মানুষদের লোভের কাছে তাদের স্বপ্ন ভেঙে যায়। আলোচ্য কবিতায় দেখা যায় হরিণটি অকুতোভয় যখন সবুজ ঘাস ছিঁড়ে খাচ্ছিল, নদীর তীক্ষ্ণ শীতল জলে নামে, হরিণির পর হরিণিকে চমক দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন হরিণের জীবনের রং দেশোয়ালিদের জ্বালানো আগুনের মতো উজ্জ্বল ছিল। কিন্তু একটা অদ্ভুত শব্দ প্রকৃতি তথা সমস্ত সুন্দর ভোরের উজ্জ্বলতাকে কেড়ে নেয়। যদি সূর্যের আলোয় হরিণটি নেমে না আসতো, তাহলে হয়তো হরিণটির মৃত্যু ঘটতো না। যেভাবে সূর্যের আলোয় দেশোয়ালিদের আগুনের রং বিবর্ণ হয়ে যায়, তেমনই সূর্যের আলোয় হরিণটির জীবনও হারিয়ে যায় ।অর্থাৎ হরিণটির করুণ পরিণতিকেই কবি উদ্ধৃত অংশটির মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন।


৩. শিকার কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।                                                                 ৫


                                --- উত্তর---

নামকরণঃ- মানুষের নামকরণের সঙ্গে সাহিত্যের নামকরণের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। স্থুল ছেলের নামও হতে পারে কার্তিক। আবার কুৎসিত মেয়ের নামও হতে পারে অপ্সরা। কিন্তু সাহিত্যের নামকরণ করা হয় বিশেষ আঙ্গিকে। যেমন- চরিত্রভিত্তিক, ঘটনাধর্মী, ব্যঞ্জনাধর্মী প্রভৃতির দিক থেকে। কারণ এই নামকরণের মধ্য দিয়েই পাঠক কবিতার মূল বিষয়ের পরিচয় পেয়ে থাকে। তাই নামকরণকে অনেকে সাহিত্যের চাবিকাঠি বলে উল্লেখ করেছেন। আমাদের আলোচ্য 'শিকার' কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ব্যঞ্জনার দিক থেকে।


মূল বিষয়বস্তুঃ- আলোচ্য 'শিকার' কবিতা শুরু হয়েছে 'ভোর' শব্দ দিয়ে। এই ভোরের দুটি রূপ কবিতায় দেখানো হয়েছে। প্রথম ভোরে পৃথিবীর স্নিগ্ধ শীতল প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা রয়েছে। আলো জরায়ু ছিন্ন করে অন্ধকার থেকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে নেমে আসে। সূর্যের আলোয় আকাশ, বৃক্ষরাজি, ঘাস ও ঘাসের উপর শিশির বিন্দু এক অপরূপ রূপে সেজে ওঠে। দ্বিতীয় ভোরের স্নিগ্ধ পরিবেশে বাদামি হরিণ আবির্ভূত হয়।  সারারাত চিতাবাঘিনির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এক বন থেকে অন্য বনে ছুটে বেড়িয়েছে। তাই ক্লান্ত শরীরকে আবেশ দেওয়ার জন্য হরিণটি নদীর শীতল জলে নামলে, নামার পর মুহুর্তেই তার মৃত্যু ঘটে। বলা যেতে পারে সে শিকার হয় নাগরিক সমাজের তথাকথিত সভ্য মানুষের লালসার কাছে।


ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণঃ- বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী শক্তিশালী প্রাণী দুর্বল প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তাই শক্তিশালী চিতাবাঘিনি হরিণ শিকার করার জন্য তাড়া করেছে। কিন্তু হরিণটি চেনা শত্রুর হাত থেকে বাচার কৌশল পূর্ববর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে রপ্ত করলেও গুপ্তঘাতকের হাতে তার আকস্মিক মৃত্যু ঘটেছে।

■ বর্বর তথাকথিত সভ্য মানুষ হল হরিণটির ঘাতক। যারা নাগরিক সভ্যতায় অভ্যস্ত মানবিকতার হত্যাকারী।যারা সিগারেটের ধোঁয়ায় পরিবেশকে কলুষিত করে। তাদের কাছে হরিণের সৌন্দর্য ও প্রকৃতির সৌন্দর্য মূল্যহীন।  তাদের মূল উদ্দেশ্য নিজেদের লোভ-লালসা ও স্বার্থ চরিতার্থ করা। এই তথাকথিত সভ্য মানুষেরা নিজেদের রসনা তৃপ্তির জন্য নিরপরাধ হরিণটিকে হত্যা করেছে। অর্থাৎ নিষ্পাপ হরিণটি সভ্য মানুষের লোভের কাছে শিকার হয়েছে।

সার্থকতাঃ- সভ্য বর্বর মানুষদের শিকারের অমানবিক পাশবিক গল্প সকলের জানা। যারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অনায়াসে নিরীহ প্রাণীদের স্বীকার করে। এমনকি অসহায় মানুষদের উপর শোষণ চালিয়ে নিজেদের স্বার্থ পূরণ করে। কবি এই বর্বরদের শিকারের ইতিবৃত্ত কাব্যিক ভাষায় পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। তাই বলা যেতে পারে যে আলোচ্য কবিতার 'শিকার' নামকরণ যথার্থ ও সার্থক হয়েছে ।


৪ . 'শিকার' কবিতায় দুটি স্তবকের সূচনায় 'ভোর' শব্দটি প্রয়োগ
 করা হয়েছে ।দুটির 'ভোর' শব্দের প্রয়োগগত পার্থক্য আলোচনা করো।                                        ৫


                                --উত্তর--

ভূমিকাঃ- জীবনানন্দ দাশের 'শিকার' কবিতায় "ভোর" শব্দটি দুবার ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম স্তবক যেমন "ভোর" শব্দটি দিয়ে শুরু হয়েছে, তেমনই তৃতীয় স্তবক "ভোর" শব্দটির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ।তবে এই দুই স্তবকে দুটি ভিন্ন ভোরের রূপ তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম স্তবকে রয়েছে নির্মল প্রকৃতির অপূর্ব অলৌকিক সৌন্দর্যের বর্ণনা। তৃতীয় স্তবকে রয়েছে বর্বর তথাকথিত সভ্য মানুষদের বর্বরতার পরিচয়। যাদের লালসার কাছে পরাজিত হয়েছে নিরীহ শান্ত বাদামি হরিণটি।

প্রথম ভোরের তাৎপর্যঃ- কবিতার প্রথম স্তবকে "ভোর" শব্দটির মধ্য দিয়ে এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিত্র এঁকেছেন কবি। সেই ভোরের বর্ণনায় সূর্যোদয়ের পূর্বে আকাশের রং ছিল "ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল।" চারিদিকের পেয়ারা ও নোনার গাছ ছিল টিয়ার পালকের মতো সবুজ। এরপর ভোরের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে আকাশ, বন ও ঘাসের উপর লেগে থাকা শিশির বিন্দু জিলমিল করে ওঠে। আকাশে রয়েছে এখনও একটি তারা। যা ভোরের সৌন্দর্যকে আরো বেশি মোহনীয় করে তুলেছে। এরূপ ভোরের সৌন্দর্যের বর্ণনায় কবি যেন চিত্রশিল্পীর মতো এক জীবন্ত চিত্র এঁকেছেন। প্রথম ভোরে শীতের হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য দেশোয়ালি মানুষেরা সারারাত মাঠে আগুন জ্বেলেছে। কিন্তু সূর্যোদয়ের পরে আগুনের রং ফিকে হয়ে যায়। কবির কথায়- "সূর্যের আলোয় তার রঙ কুমকুমের মতো নেই আর/ হয়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো।" তবে সকালের আলোয় চারিদিকের বন ও আকাশ ঝিলমিল করছে ময়ূরের ডানার মতো।


দ্বিতীয় ভোরের তাৎপর্যঃ- দ্বিতীয় ভোরের বর্ণনায় আছে মানুষের পাশবিক হিংস্রতার পরিচয় । দেখা যায় একটি বাদামি হরিণ চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে ভোরের আলোয় নেমে এসেছে। ঘুমহীন ক্লান্ত শরীরটাকে সতেজ করার জন্য নেমে যায় নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে। হরিণটি যখন সোনার বর্ষার মতো জেগে উঠে সাহসে সাধে সৌন্দর্যে হরিণীর পর হরিণীকে চমক দেওয়ার জন্য স্বপ্নে বিভোর থাকে, তখনই শোনা যায় একটি অদ্ভুত শব্দ। যেশব্দ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয় হরিণটি জীবনাবেগকে । নাগরিক মানুষের লোভ লালসার শিকার হয়ে চিরঘুম দেয় নিরপরাধ হরিণটি। এই নির্মম হত্যা দ্বিতীয় ভোরকে এক অন্য প্রতীকী ব্যঞ্জনা দান করেছে।


৫." এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল"- কে অপেক্ষা করছিল?
তার পরিণতি কী হয়েছিল?                           ১+৪=৫


                           ----  উত্তর-----

ভূমিকাঃ- কবি জীবনানন্দ দাশের "শিকার" কবিতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি নিরীহ সুন্দর বাদামি হরিণ। যার বেঁচে থাকার লড়াই বা জীবন সংগ্রামের চিত্র যেমন কবিতায়  দেখানো হয়েছে, তেমনি কবিতার শেষ পর্যায়ে সুন্দর বাদামি হরিণটির মর্মান্তিক করুন পরিণতি লক্ষ্য করা যায়। কবি নিজস্ব চিত্রকল্প ও শব্দবন্ধে এক ভিন্ন মাত্রার কাব্য সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন।


হরিণটির জীবন সংগ্রামঃ- প্রতিটি প্রাণী জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকে। হরিণটি প্রতিটি রাত্রে জীবন সংগ্রাম করে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে। আলোচ্য কবিতায় সুন্দর বাদামি হরিণটি সারারাত ধরে চিতাবাঘিনির তাড়া খেয়েছে। মৃত্যুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য মেহগনির মতো অন্ধকার সুন্দরী গাছের বন থেকে অর্জুনের বনে ছুটে বেড়িয়েছে। অপেক্ষা করতে থাকে ভোরের জন্য। তাই ভোরের আলো ফুটলে মনোরম পরিবেশে মৃত্যুভয় আশঙ্কিত হরিণটি ক্ষুধা নিবারণের জন্য কচি বাতাবিলেবুর মতো সুগন্ধযুক্ত সবুজ কচি ঘাস ছিড়ে খায়। ঘুমহীন ক্লান্ত শরীরকে সতেজ করার জন্য নদীর তীক্ষ্ণ শীতল জলে নামে । প্রেমের নতুন আবেগে হরিণীকে চমক দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়।

পরিণতিঃ- বাদামি হরিণটি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যেন নতুন জন্ম লাভ করে। সে নতুন স্বপ্ন আশা অনুভব করে, হরিণীর পর হরিণীকে চমক দেওয়ার জন্য যখন হরিণটি বিভোর হয় । তখনই শোনা যায় একটি অদ্ভুত শব্দ। দেখা যায় নদীর জল মচকা ফুলের মতো লাল । বাদামি হরিণ পরিণত হয় মানুষের লালসার ভোগ্যবস্তুতে । তার এই অনিবার্য পরিণতির পাশে ফুটে উঠেছে শিকারিদের পাশবিক উল্লাসের চিত্র।

যুগ যুগ ধরে এভাবেই সাম্রাজ্যবাদী বর্বর তথাকথিত সভ্য মানুষেরা প্রকৃতি তথা প্রকৃতির উপাদানের উপর আক্রমণ করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করেছে।কবিতায় লক্ষ্য করা যায় যে হরিণটির মাংস রান্না করে তারা নিজেদের রসনা তৃপ্তি করেছে।


সম্পূর্ণ উত্তরের পিডিএফ

File Details 

Type- pdf

Size- 336.8 kb

Location- Google drive 

 DOWNLOAD PDF 






আরো পড়ো...                           

Post a Comment

0 Comments