MADHYAMIK BANGLA||অসুখী একজন কবিতা




MADHYAMIK BANGLA- "অসুখী একজন কবিতা " রচণাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর। 

অসুখী একজন "

                        কবিপরিচিতি 

জন্ম ও পরিচয়:-পাবলো নেরুদা ছিলেন একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও চিলিয়ান কবি। তিনি ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দদের ১২ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। বিংশ শতকের সামগ্রিক বিষয়সমূহকে প্রেক্ষাপট করে কবিতা লেখেন। 


সাহিত্য সম্ভার:-পাবলো নেরুদার উল্লেখযোগ্য রচনা হল-"ক্রোপানাকুলাবি"(১৯২৩),"টোয়েন্টি পোয়েমস অব লাভ অ্যান্ড ওয়ান ডেসপারেট সঙ "(১৯২৫),"জেনারেল সঙ্"(১৯৫৪),"এলিমেন্টাল ওডস্"(১৯৫৪)প্রভৃতি। 


প্রাপ্ত পুরস্কার :-পাবলো নেরুদা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭১ সালে নোবেল পুরস্কার পান। 


রাজনৈতিক জীবন:-নেরুদা বহু কূটনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি চিলিয়ান কমিউনিস্ট পার্টিতে সেনেটরের পদ সামলেছেন। কিন্তু চিলির রাষ্ট্রপতি গঙ্জ্ঞালেস ভিদিলা  কমিউনিস্ট পার্টিকে নিশ্চিহ্ন করার পদক্ষেপ নিলে নেরুদা চিলি থেকে পালিয়ে আর্জেন্টিনায় চলে যান। 

মৃত্যু:- অবশেষে ক্যান্সারের আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু তিনদিন পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭৩ সালের ২৩শে নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরূপ কিংবদন্তির মৃত্যুতে সারা বিশ্বে আলোড়ন পড়ে যায়। 

                    "বিষয়বস্তু "

কবিতায় 'আমি "অর্থাৎ কবি তার প্রিয়তমাকে  (স্বদেশ ভুমি)
দরজায় অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে যান বহু দুরে। সে জানতেই পারলো না যে কথক আর কখনো ফিরে আসবেন না। যাওয়ার সময় হেটে গেল একটা কুকুর। আবার হেটে গেলেন গির্জার এক নান বা সন্ন্যাসিনী। কেটে যায় একটা সপ্তাহ থেকে বছর। কবির পায়ের দাগ ধুয়ে দিল বৃষ্টি। পথ ঢেকে গেল ঘাসে। অপেক্ষারত মেয়েটির কাছে বছরগুলো নেমে আসলো পাথরের মতো। 

**এক সময় রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো যুদ্ধ নেমে এল সমতলে। বহু শিশু মারা গেল, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেল। যুদ্ধের আগুন সমস্ত সমতলে ধরে গেল ।হাজার বছর ধরে যে শান্ত হলুদ দেবতারা ধ্যানে মগ্ন ছিল, তারাও মন্দির থেকে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। তাঁরা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। 
একসময় যে মিষ্টি বাড়ির বারান্দার ঝুলন্ত বিছানায় কবি ঘুমিয়েছিলেন।সেই বারান্দার গোলাপী গাছ, হাতের তালুর মতো পাতা, চিমনি,প্রাচীন জলতরঙ্গ বা বাদ্য যন্ত্র প্রভৃতি নিঃশ্বেষ হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে দেখা যায় কবির বাসভুমি তথা সমতলে পড়ে থাকলো কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা,মূর্তির বিভৎস মাথা আর রক্তের এক কালো দাগ। 

                                     ---------
 বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর :-

1.'অসুখী একজন '-কবিতার কবি পাবলো নেরুদা কোন দেশের কবি?
উ-চিলি। 
2."অসুখী একজন "- কবিতাটি কে অনুবাদ করেছেন ?
উ-নবারুণ ভট্টাচার্য।
3."অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে "-কোথায় দাঁড় করিয়ে রাখে?
উ-দরজায়। 
4."অসুখী একজন "-কবিতায় কার মৃত্যু হয়নি?
উ-মেয়েটির। 
5.কোথায় আগুন ধরে গেল?
উ-সমতলে। 
6.দেবতারা কীসে ডুবে ছিল?
উ-ধ্যানে।
7."তারপর যুদ্ধ এল "-যুদ্ধকে কিসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উ-আগ্নেয়পাহাড়। 
8."অসুখী একজন "-কবিতায় কারা খুন হল?
উ-শিশু আর বাড়ি। 
9."বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল "-বৃষ্টিতে কী ধুয়ে দিল?
উ-পায়ের দাগ। 
10."হেটে গেল "-কী?
উ-কুকুর। 
11."চলে গেল গির্জার "- কে?
উ-নান 
12."আমি তাকে ছেড়ে দিলাম "-কাকে?
উ-সেই মেয়েটিকে। 
13."নেমে এল তার মাথার ওপর "-কী নেমে এল?
উ-বছর। 
14.রাস্তায় কী জন্মাল?
উ-ঘাস। 
15.দেবতারা কত বছর ধ্যানে ডুবে ছিলেন?
উ-হাজার বছর। 
16.রক্তের দাগ কেমন?
উ-কালো। 
17.কোথায় কাঠকয়লা ছড়িয়ে রইল?
উ-শহরে। 
18.সবকিছু কীসে জ্বলে গেল?
উ- আগুনে। 
19.কথক কোথায় ঘুমিয়েছিলেন?
উ-ঝুলন্ত বিছানায়। 
20.কারা মন্দির থেকে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়?
উ- দেবতারা। 

এক কথায় প্রশ্ন ও উত্তর -                                মান-1
1."অসুখী একজন "-কবিতায় প্রকৃত পক্ষে অসুখী কে?

উ-কবিতায় স্বদেশ ভুমি ছেড়ে বিভুই বাসী কথক তথা কবি পাবলো নেরুদা  স্বয়ং  অসুখী ।

2."সে জানত না "-'সে '-কী জানতো না?

উ-'অসুখী একজন '-কবিতায়  ,কবির নারীকল্প স্বদেশ ভুমি জানত না,যে কথক আর কখনো ফিরে আসবেন না। 

3."আমি চলে গেলাম দুর-দুরে "-কবি কেন দুরে গেলেন?

উ-কবি দেশের একজন সুসন্তান, যাঁর অন্তরে আছে দেশপ্রেম।তাই দেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে নিজের প্রতিবাদ মননে জাগ্রত কবি দুর দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়। 

4."নেমে এল তার মাথার ওপর "-কী, কীসের মতো নেমে এল?

উ-" "অসুখী একজন "-কবিতায় পাবলো নেরুদা অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে যাকে ছেড়ে আসেন, তার মাথার ওপর বছরগুলো একের পর এক পাথরের মতো নেমে আসে। 

5.দেবতারা কেন আর স্বপ্ন দেখতে পারল না?

উ-শান্ত হলুদ দেবতারা, যারা হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে ছিল,তারা মন্দির থেকে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায় বলে আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। 

6."সব চূর্ণ হয়ে গেল "-কী কী চূর্ণ হয়ে যায়?

উ-কবির প্রিয় বাড়ি, তার প্রিয় বারান্দা, গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা, চিমনি ও প্রাচীন জলতরঙ্গ যুদ্ধের কারণে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। 

7."সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন "-কেন?

উ-পালবো নেরুদার প্রিয় শহরের জনবসতি অত্যন্ত ঘন ছিল, বাড়িগুলো পর পর গড়ে উঠেছিল। সেজন্য যুদ্ধের আগুন সমস্ত সমতলে ধরে গেল। 

8-"রক্তের একটা কালো দাগ "- বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উ-যুদ্ধ ক্রমান্বয়ে হত্যা চালায় ,ফলে বহু রক্তপাত ঘটে। সেই রক্ত শুকিয়ে গেলে রং কালো হয়ে যায়। সেই রক্তের কালো দাগ যুদ্ধের ভয়ঙ্করতার স্মৃতি বহন করে। 

9."সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না "-কেন?

উ-কবিকথিত "সেই মেয়েটি "-আসলে মাতৃকল্প দেশ। যুদ্ধ বাধলে সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু কালচক্রে সেই দেশে পুনরায় নতুন সভ্যতা গড়ে উঠে। তাই যুদ্ধে সবকিছু ধ্বংস হলেও সেই মেয়েটির মৃত্যু বা ধ্বংস হয়নি। 

10."সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায় "-কে কার জন্য অপেক্ষা করছিল?

উ-পাবলো নেরুদার "অসুখী একজন " কবিতাই  'সেই মেয়েটি 'অর্থাৎ কবির স্বদেশ ভুমি কবির জন্য অপেক্ষা করছিল। 




 ●ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর                                  মান-3

১."আমি তাকে ছেড়ে দিলাম "-কবি কাকে কেন ছেড়ে দিলেন?

উ-"অসুখী একজন "-কবিতার উদ্ধৃত অংশে কবি যাকে ছেড়ে যান তিনি হলেন নারীকল্প স্বদেশ ভুমি। এখানেই তাঁর আপন সত্তার বিকাশ ঘটেছিল। 

■স্বদেশ ভুমি সকলের কাছে জননী সমান। নিজের স্বদেশের পরিস্থিতি কবিকে বাধ্য করেছিল ছেড়ে চলে যেতে। কারণ নিজের প্রতিবাদী কণ্ঠকে কখনোই রোধ করতে দিতে চাননি। সেজন্যই কবি চলে যান দুর দেশে। কবির কথায়-"আমি তাকে ছেড়ে দিলাম/অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়/আমি চলে গেলাম দূর...দূরে। "দেশের দূরাবস্থা কবি হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে, তাই নিজের দেশেই তাঁর নিজেকে মনে হয়েছিল পরবাসী। 

২."তারপর যুদ্ধ এল "-যুদ্ধের ফলে কী ঘটল?

উ-মানুষের হিংস্র উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ হল যুদ্ধ।এই যুদ্ধকে কবি তুলনা করেছেন-'রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো।"কবিতায় যুদ্ধের আগমন শিশু ও বাড়িরা খুন তো হলই,সমস্ত সমতলে আগুনও ধরে গেল। হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে থাকা দেবতারাও মন্দির থেকে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। কবির প্রিয় মিষ্টি বাড়ির বারান্দা,গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মযো পাতা, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ প্রায় সমস্ত কিছুই আগুনে পুড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। কোলাহলপূর্ণ শহর শ্বশানে পরিণত হয়। শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঠ-কয়লা আর দোমড়ানো লোহা  ও মরা পাথরের বীভৎস মাথা।

৩."তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না "-কারা স্বপ্ন দেখতে পারল না?স্বপ্ন দেখার তাৎপর্য কী?                    ১+২=৩

উ-'অসুখী একজন ' -কবিতায় যারা হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে নিজ মন্দিরে ,সেই শান্ত হলুদ দেবতারা  আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। 

■কবির মতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পট পরিবর্তন করলেও সমাজের একশ্রেণীর মানুষ নিজের স্বপ্নময় জগতে বাস করে। সেখান থেকে তারা একপাও নড়তে চান না। তাদের এরূপ মানষিকতা দেবতাদের ধ্যানস্বরূপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে তারাও আর নিজস্ব স্বপ্নের জগতে অটল থাকতে পারলেন না। তাই কবি লিখেছেন-" সেই  শান্ত হলুদ দেবতারা,----তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। "

৪."রক্তের একটা কালো দাগ "-তাৎপর্য নির্নয় করো। 

উ-ক্ষমতা লোভী মানুষ লালসার বশবর্তী হয়ে যুদ্ধ ঘটায়। কিন্তু এই যুদ্ধ নির্বিচারে হত্যালীলা চালায়। ফলে নিরিহ শিশু,নারী, বৃদ্ধ ও বাড়ি খুন হয়। তাদের তাজা রক্তে পৃথিবীর বুক লাল হয়।কাল প্রবাহে রক্ত কালো দাগে পরিণত হয়। যা যুদ্ধের স্মৃতি বহন করে। 

■রক্ত যখন তাজা থাকে তার রং হয় লাল। কিন্তু বাসি রক্তের দাগ হয়ে পড়ে কালো। উদ্ধৃত অংশে কালো দাগ হল যুদ্ধের ভয়াবহতার প্রতীক। কবি কালো দাগের উল্লেখ করে যুদ্ধের বীভৎসতার বিরোধীতা করেছেন। 

৫."সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না "-কোন মেয়েটির কেন মৃত্যু হল না?

উ-'অসুখী একজন '- কবিতায় যুদ্ধ যখন রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল কবির স্বদেশ ভুমিতে তখন সমস্ত সমতলে আগুন ধরে যায়। নিরীহ শিশু ও বাড়িরা খুন হল। শান্ত হলুদ দেবতারা মন্দির থেকে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। স্মৃতিবিজড়িত কবির মিষ্টি বাড়ি,ঝুলন্ত বিছানা,গোলাপি গাছ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু কবির স্বদেশ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত হয়ে ধুকতে থাকলেও, মৃত্যুলগ্না করতে পারল না যুদ্ধ তাকে। কারণ  দেশ তার বিশাল ক্রোড়ে সকলের আশ্রয়দাত্রী।অতএব কবির প্রতীক্ষায় থাকা প্রিয় স্বদেশ কিছুতেই মৃত্যুকবলিত হল না। 

■MADHYAMIK BANGLA  ,"অসুখী একজন "- কবিতার ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর  :-                  মান-৫

১.' অসুখী একজন'- কবিতায় যুদ্ধের যে বীভৎসতা প্রকাশ পেয়েছে, তা আলোচনা করো। 

উত্তর:-দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্গত "চিলি "-রাষ্ট্রের কবি পাবলো নেরুদা "অসুখী একজন "-কবিতায় যুদ্ধের বীভৎসতার রূপটি অঙ্কন করেছেন। যুদ্ধ কখনোই সমস্যার সমাধান করতে পারে না। বরং যুদ্ধ জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। যুদ্ধ সংঘটিত হলে অবলীলাক্রমে ধ্বংসাত্মক কাজ চালায়। সেই যুদ্ধের করাল গ্রাসে শুধু সৈনিক নয় সাধারন মানুষও  মারা যায়। তাই কবি যুদ্ধকে আগ্নেয় পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।কবির কথায়-"তারপ যুদ্ধ এল/রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো/শিশু আর বাড়িরা খুন হল।"অর্থাৎ যুদ্ধের বীভৎসতার কারনে নিরীহ শিশু ও বাড়িরা খুন হল। 

■রক্তাভ লাভাস্রোতের মতো যুদ্ধ 'চিলির '-শহরে নেমে আসলে, সমস্ত সমতলে আগুন ধরে যায়। শহর ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় যুদ্ধের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শিশু আর বাড়িরা খুন হল। যাঁরা হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে ছিল তারা মন্দির থেকে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। তাঁরা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। যুদ্ধের দাবানলে কবির মিষ্টি বাড়ির বারান্দা,ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, করতলের মতো পাতা, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ প্রায় সমস্ত কিছুই আগুনে পুড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। যে শহরে একজন কোলাহল শোনা যেত, যুদ্ধের বীভৎসতায় তা শ্বশানে পরিণত হয়। পড়ে থাকে সেখানে কাঠ-কয়লা, দোমড়ানো লোহা আর মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। 

২."অসুখী একজন "-কবিতায় কাকে অসুখী বলা হয়েছে?সে কেন অসুখী?                          ১+৪=৫

উ:-"অসুখী একজন"-কবিতায় কবি স্বয়ং অসুখী বলে উল্লেখ করেছেন।  

■ সুখ ও দুঃখ যেন একই মুদ্রার দুই পিঠ। প্রতিটি মানুষ জীবনে সুখের অন্বেষণ করে। কিন্তু সবাই সুখ খুঁজে পায় না। মানুষের জীবনের গতিপ্রকৃতি যখন যথাযথ নিয়মে চলতে থাকে তখন তাকে সুখী বলা হয়। যখন ব্যক্তি দেশ ও সমষ্টির সঙ্গে বিজরিত থেকে আপন সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাত পারে তখন তাকে সুখী বলা হয়। কবি স্বদেশে থেকে সুখের প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু সুখ প্রাপ্তি তাঁর ঘটেনি। তাই কবি আক্ষেপ করে বলেছেন-"আমি তাকে ছেড়ে দিলাম/অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়/আমি চলে গেলাম দূর-দূরে। " এই আক্ষেপ আরো বেশি ধরা পড়ে তার পরবর্তী উক্তিতে-"সে জানত না, আমি আর কখনো ফিরে আসবো না। "কবির পদচিহ্ন বৃষ্টি মুছে ফেলে। ফলে কবি বেদনা অনুভব করেছেন। 

■ যুদ্ধ যখন কবির প্রিয় শহরে এসে ধ্বংস চালায় ,নিরিহ শিশু আর বাড়ি খুন করে,এমনকি তাঁর মিষ্টি বাড়িটিকে পুড়িয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং শহরকে শ্বশানে পরিণত করে তখন কবি আরো বেশি অসুখী হয়ে পড়েন। শহরের বুকে লেগে থাকা সেই রক্তের কালো দাগ কবির অসুখীর বার্তা বহন করে। কারণ কবি কখনোই যুদ্ধ চাননি। যুদ্ধের বিরোধীতা করেছেন। তবুও যুদ্ধ তাঁর সমতলের শহরে ধ্বংসলীলা চালালে কবি অস্থির হয়ে পড়েন। মানষিক দিক থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই বলা যায় কবিই প্রকৃতপক্ষে অসুখী ছিলেন। 




3.'সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না। মেয়েটি কে? কোন্ প্রসঙ্গে এই বক্তব্য ? বক্তব্যটির তাৎপর্য লেখো। ১+১+৩


উত্তরের প্রথমাংশ → পাবলো নেরুদা প্রণীত 'অসুখী একজন’ নামাঙ্কিত কবিতায় ‘মেয়েটি’ হলেন কথকের প্রিয়তমা।


উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: দরজার সামনে অনন্ত প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে কথকের প্রিয়তমা। কথক তাঁকে দাঁড় করিয়ে চলে এসেছিলেন। কথকের কর্মযজ্ঞ এতটাই বিস্তৃতি পেয়েছিল যে, সেই দায়বদ্ধতা থেকে তিনি পিছিয়ে আসতে পারেননি। 


উত্তরের তৃতীয়াংশ: প্রতিশ্রুতি দিয়েও বক্তা ফিরতে পারেন নি। সময়ের স্রোতস্বিনী ধারায় অপেক্ষার বছরগুলি কেটে যায়। বৃষ্টির ধারা কথকের পথ-চলা পায়ের চিহ্ন মুছে দেয়। ঘাস জন্ম নেয় পথের বুকে। একের পর এক, অনড় পাথরের মতো বছরগুলো চেপে বসে কথকের প্রিয়তমার বুকে। ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের দামামা বাজে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বারুদের গন্ধ। যুদ্ধবাজ দেশগুলি মারণ অস্ত্র নিয়ে পর এগিয়ে আসে। তাদের হাত থেকে শিশুরাও রক্ষা পায় না। বাড়ি-ঘর, মঠ-মন্দির সবকিছু ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। কবি লেখেন, সেই সর্বাত্মক ধ্বংস ও মৃত্যুপুরীর মধ্যেও কথকের প্রিয়তমা অনন্ত প্রতীক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকেন।


***সমস্ত ভাঙনের মধ্যে কথকপ্রিয়া যেন হয়ে ওঠেন একমাত্র প্রাণের প্রতীক। যুদ্ধের বিধ্বংসী আগ্নেয় অস্ত্রে মন্দিরের দেবতা পর্যন্ত মন্দির থেকে বেরিয়ে এলেন বাইরে; কথকের স্বপ্নের বাসভূমি যখন চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে' তখনও ‘সেই মেয়েটি’, কথকের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন।


4.'আমি তাকে ছেড়ে দিলাম'— 'অসুখী একজন' কবিতায় 'আমি'র পরিচয় দাও। 'আমি'র বেদনা কবিতায় কীভাবে ব্যক্ত হয়েছে লেখো।


উত্তর: 'আমি'র পরিচয়:- চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় 'আমিত্ব'-এর যে বিকাশ, তার উৎসসন্ধান করলে দেখা যায়, এই 'আমি' হলেন স্বয়ং কবি। তিনি এখানে বেদনাহত কণ্ঠে কথা বলেন, কেন-না ‘তাকে বলে তিনি যাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, তিনি একার্থে তাঁর

প্রিয় স্বদেশ। নারীকল্প এই স্বদেশ তাঁর মগ্নচৈতন্যে অনিবার্য ভর করে থাকে বলেই তিনি বেদনাহত।


'আমি'র বেদনার স্বরূপ :-স্বদেশ কবির কাছে মাতৃকল্পও। এই প্রিয় ভূমির উপরেই তাঁর জীবনধর্ম ও মনোধর্মের বিকাশ। তাই তিনি যখন তাঁকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন দূর থেকে দূরে, তখন তিনি বেদনাকীর্ণ কণ্ঠে বলে ওঠেন—“সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না।” কিন্তু সময় থেমে থাকে না। সে সতত প্রবহমান। এই সহজ সময় সঞ্চারণকে কবি রূপকের আকার দেন, বলেন-

একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গির্জার এক নান।' কবি তাঁর হৃদয়ার্তির হাহাকারকে গভীরভাবে চিত্রায়িত করেন পরবর্তী দুটি পক্তিতে—

'বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ/

ঘাস জন্মালো রাস্তায়'।


**স্বদেশের মাটিতে তাঁর কোনো পদচিহ্নই আর যে থাকল না, এও সময়প্রবাহের দীর্ঘ ব্যঞ্জনাকে প্রকাশ করে, তৈরি করে স্বদেশ বিচ্ছিন্নতার প্রেক্ষাপটে গভীর বেদনা। কবি যাকে দরজায় অপেক্ষারত অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন, তাকে স্পর্শ করেই যেন ‘একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।' কিন্তু স্বদেশ বিচ্ছিন্ন সময়ের পদচিহ্ন যে শত ভারী হয়ে উঠতে পারে, তার এক বেদনাবাহিত রূপারোপ ঘটান কবি অন্যভাবে। বছর ঘোরে—


আর একটার পর একটা, পাথরের মতো/

পর পর পাথরের মতো, বছরগুলো/

নেমে এল তার মাথার ওপর।”


এ পাষাণভার কি কবিরও নয়? এরপর যুদ্ধ এসে যখন দেশকে ভাঙাচোরা চেহারা প্রদান করে, তখন কবিমনও অনিবার্য ভেঙে পড়ে। গভীর অক্ষেপে তিনি বলেন-“সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।” এই আশাবাদের মধ্যেই কবির বেদনাবোধ শেষপর্যন্ত প্রাণ পায়।


5."আর সেই মেয়েটি আমার অক্ষোয়।''- কীভাবে সেই অপেক্ষা শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল, তা কবিতা অবলম্বনে লেখো। 


অথবা,


 'আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়'— মেয়েটির অপেক্ষার কারণ তাৎপর্য সহ ব্যাখ্যা করো। ১+৪


উত্তর > ‘অসুখী একজন' কবিতার নামকরণের নেপথ্যে আছে কবির ব্যক্তিগত প্রেম-প্রণয়; আর অন্যদিকে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর সর্বাত্মক ধ্বংসের চিত্র। প্রণয়ের বিষয়ে তিনি কথা রাখতে পারেননি; আবার বিশ্বের সর্বত্র ভাঙনের ছবি দেখে কবি স্বস্তি পাননি। অর্থাৎ তিনি বাস্তবিকই ‘অসুখী একজন’।


***কবিতার প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত এক প্রতীক্ষিত প্রাণ খুঁজতে থাকে তার ভালোবাসার মানুষটিকে। অনন্ত অপেক্ষা নিয়ে তার যেন কেটেছে একেলা বিরহের বেলা আকাশ কুসুম চয়নে'। ভালোবাসার মানুষটি ফিরে আসবেন; এই বিশ্বাসে তিনি বিনিদ্র রাত অপেক্ষা করেন। বৈস্নব পদাবলীর রাধাও এভাবে বিনিদ্র রাত অপেক্ষা করেন। সুতরাং বৈষ্ণব পদাবলীর রাধার মতো তাঁরও জীবনে দেখা যায় দুঃখের অনন্ত বর্ষা।


***ইতিমধ্যে রাক্ষুসী এক কালবেলায় হাজির হয় যুদ্ধ। নিরীহ, শান্ত, সরল শিশুরাও সেই যুদ্ধ-রাক্ষসীর থাবা থেকে মুক্ত হয় না। কথক দেখেছেন দেবতারা মন্দির থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। কবির শৈশব-স্মৃতিসম্বলিত সেই মিষ্টি বাড়ি; ‘সেই বারান্দা’ যেখানে কবি ‘ঝুলন্ত বিছানায়' ঘুমাতেন; সেসব ধূলিধূসরিত হয়েছে। কবি দেখেছেন—

যেখানে ছিল শহরসেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা। মৃত্যুর কালো গুহায় জীবনের কোনো কান্তিময় আলো দেখা যায়নি বলে কবি আশাহত। গভীর নিরাশায় কবি উচ্চারণ করেন এ ধরনের বিচ্ছিন্ন পক্তি—'রক্তের একটা কালো দাগ”।


**কবিতার শেষে পুনরায় প্রথম স্তবকের ছবিটি আসে -“আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।' কিন্তু আদৌ কী ‘সে মেয়েটির' কাছে তিনি ফিরতে পারবেন; না মেয়েটি সেভাবেই কথকের অপেক্ষায় ‘অসুখী একজন' হয়ে অনন্ত সময়ের বহমানতার দিকে তাকিয়ে কবির ফিরে আসার প্রহর গুনতে থাকবেন।


READ MORE....







Post a Comment

0 Comments