সিরাজদৌল্লা নাটকের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর ।।দশম শ্রেণীর পাঠ্য

সিরাজদৌল্লা :-শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা সিরাজদৌল্লা নাটকের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর আজ আলোচনা করা হলো। নাটক থেকো কোনো ছোটো প্রশ্ন আসে না। কেবলমাত্র চার নম্বরের প্রশ্ন আসে দুটি। তবে উত্তর দিতে হয় মাত্র যেকোনো একটির। 


সিরাজদৌল্লা নাটকের সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো। প্রতিটি উত্তর যথাযথ ভাবে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে থাকলে তোমরা আমাদের TELEGRAM  এ যুক্ত হয়ে করতে  পারো।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                          

১." জানিনা আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি, রাক্ষসী পলাশী!"- কে কোন প্রসঙ্গে এ উক্তিটি করেছে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।


উত্তরঃ-সি রাজদৌলা নাট্যাংশে পলাশির প্রান্তরের উল্লেখ করা হয়েছে।জানা যায় একসময় এই প্রান্তর লাখ লাখ  পলাশফুলের আভায় রঙ্গিন থাকতো। অধিক পলাশ ফুলের প্রাচুর্যের কারণে প্রান্তরের নাম হয়েছিল পলাশি। কিন্তু কালের প্রবাহে প্রান্তজ্যোতি পলাশহীন রুক্ষ ও শুষ্ক ভূমিতে পরিণত হয়। লাল রংয়ের তেষ্টায় প্রান্তটি যেন ক্ষুধার্থ রাক্ষসী পরিণত হয়েছে । নবাব সিরাজদৌলা ইংরেজদের ষড়যন্ত্র ও সভাসদদের চক্রান্ত অনুভব করে আশঙ্কা করেছিলেন যুদ্ধ মানেই রক্তপাত। পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজ বাহিনী বা সিরাজ যে পক্ষই জয়ী হোক না কেন রক্তপাত ঘটবেই। সেই আশঙ্কা থেকেই নবাব অনুমান করছেন, লাখ লাখ পলাশ ফুলের লাল রঙে রাঙ্গিয়ে থাকতো যে পলাশীর প্রান্তর, আবার রঙিন হয়ে ফুটবে যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের রক্তে। এই আসন্ন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে নবাব সিরাজ উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন। 


তাৎপর্যঃ- সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ কোম্পানির ফৌজ কাশিমবাজার অভিযান করেছে- এই বার্তা সিরাজের কাছে আছে। মাতৃভূমির মান মর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে একে বিপদজনক বলে মনে হয়েছে ।তাই ভয়ঙ্কর দুর্দিনে সভাসদদের সমস্ত শক্তি দিয়ে বাংলার মান মর্যাদা রক্ষার অনুরোধ করেছেন। তাদের পলাশীর প্রান্তরে প্রেরণ করেছেন ইংরেজ সৈন্যকে প্রতিহত করার জন্য। আসন্ন পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধের নিষ্ঠুর দৃশ্য কল্পনা করে সিরাজ পলাশীর প্রান্তরকে নৃশংস রাক্ষসীর সঙ্গে তুলনা করেছেন ।তার মনে হয়েছে আজও পলাশী রক্তিম বর্ণ ধারণ করার নেশায় রক্ততৃষ্ণায় উন্মত্ত। তাই পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধের ফলে যে রক্তক্ষরণ হবে তা অবশ্যম্ভাবী। 



২.  "মনে হয়, ওর নিঃশ্বাসে বিষ,ওর দৃষ্টিতে আগুন , ওর অঙ্গ সঞ্চালনে ভূমিকম্প"-কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে? এরূপ মন্তব্যের কারন লেখো।

                                                   উত্তর-


যার সম্পর্কে মন্তব্য :- প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে নবাব পত্নী লুৎফা ঘসেটি বেগম সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন।


সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র :- নবাব আলীবর্দী তার অবর্তমানে প্রিয় দৌহিত্র সিরাজকে বাংলার মসনদে মনোনয়ন করেন।  নবাবের ঘরে-বাইরে অনেকেই এটা মেনে নিতে পারেনি। তাদের অন্যতম হলো আলীবর্দী-কন্যা ঘসেটি। তাঁর একান্ত ইচ্ছা ছিল বোনের পালিতপুত্র শওকত জংকে বাংলার সিংহাসনে বসানো।ঘসেটি সিরাজের নিজের মাসি। কিন্তু ঘসেটির সিরাজের প্রতি আচরণে মমতা বা মাতৃত্বের  কোনো প্রকাশ ছিলনা। প্রতিহিংসার আগুনে সে নিজে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হয়েছে আর সতত সিরাজের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে।


ঘসেটির বাসনা :- তার একান্ত অনুগত বাসনা ছিল যে-কোনভাবে সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করা। তাই সে নবাবের বিরোধী সভাসদ ও কোম্পানির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সিরাজ তার ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরেছেন।ঘসেটির মতিঝিল প্রাসাদ অধিকার করেছেন। কিন্তু প্রতিবৎস্যলের নিদর্শন হিসাবে নিজের প্রাসাদে সম্মানের সঙ্গে স্থান দিয়েছেন।তবুও ঘসেটির অন্তরাত্মাকে সিরাজ তৃপ্ত করতে পারেননি।


 নবাবের সংশয়ঃ -নবাব পত্নী লুৎফা ঘসেটির এরূপ আচরণে বিস্মিত হয়েছে।ঘসেটির অভিশাপের দাহে  আহত হয়েছে।হয়েছে ভীত শঙ্কিত। তার মনে জেগেছে প্রশ্ন।সিরাজের কাছে অকপটে জানতে চেয়েছে এরূপ আচরণের কারণ। প্ৰত্যুত্তরে নবাবও ঘসেটি সম্পর্কে তার সংশয় ব্যক্ত করেছেন লুৎফর কাছে। সে মানবী না দানবী তা নিয়েই জেগেছে সংশয় ,এহেন পরিস্থিতিতে লুৎফা উক্ত মন্তব্যটি করেছে। 


৩ . 'সিরাজদৌল্লা'- নাটক অবলম্বনে সিরাজদৌল্লা চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো। 


উত্তরঃ - বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব হলো সিরাজদৌল্লা। তিনি অল্প সময়ের জন্যই সিংহাসনে বসেছিলেন। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তাতে তিনি একজন পরিপূর্ণ নবাব হয়ে উঠেছেন। 'সিরাজদৌল্লা' নাটক পাঠ করলে তার কতকগুলি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন-

রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব:- সিরাজদৌল্লার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব ছিলো। মীরজাফর, রায় দুর্লভ, জগৎশেঠকে তিনি নিয়ন্ত্রিত করতে পারেননি। মীরজাফরের ষড়যন্ত্রের কথা জেনেও তার প্রতি কঠোর হতে পারেননি।


বিষন্নতার ছায়া:- চারিদিকে ষড়যন্ত্র, সন্দেহ ও  সমালোচনার ঘূর্ণাবর্তে পরে অসহায় বোধ করেছিলেন সিরাজ। সব সময় এক উৎকণ্ঠা তাকে রাহুর মতো তাড়া করত। ষড়যন্ত্রে কণ্টকিত নবাব প্রতিনিয়ত অপমানিত ও অপদস্থ হয়েছেন।


পরিস্থিতির শিকার:- নবীন নবাব রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। সিরাজের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইংরেজরা তার বিরুদ্ধে একটি প্রবল বিপক্ষ শক্তিকে সঙ্গবদ্ধ করেছিলেন।


খাঁটি দেশ প্রেমিক:- সিরাজ খাঁটি দেশপ্রেমিক ,মাতৃভূমি ভয়ঙ্কর সর্বনাশের মুখে পতিত হতে চলেছে তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন, তাই তিনি মীরজাফরকে জানিয়েছেন বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।


অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ:- জাফর আলী কে উদ্দেশ্য করে নবাব যে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে নবাবের উদার ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ প্রতিফলিত হয়েছে।



আরো পড়ো .............

অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর 


বহুরূপী গল্পের গুরুত্বপূর্ণ MCQ & SAQ

Post a Comment

0 Comments