মৌলিক অধিকার ও কর্তব্য বড় প্রশ্ন উত্তর || অষ্টম অধ্যায় || একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান

 মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যঃ- একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান,অষ্টম অধ্যায়, মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যঃ থেকে অনেকে খুজে চলেছো- মৌলিক অধিকার ও কর্তব্য বড় প্রশ্ন ও উত্তর, মৌলিক অধিকার ও কর্তব্য রচণাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর,একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান অষ্টম অধ্যায় বড় প্রশ্ন ও উত্তর, মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলক নীতির মধ্যে পার্থক্য লেখো। মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পার্থক্য, একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর প্রশ্ন ও উত্তর ইত্যাদি। তাই তোমাদের কথা ভেবেই আজকে এই অধ্যায় থেকে রচণাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো। 

আলোচ্য প্রশ্ন  সংখ্যা 
ভারতের সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক কর্তব্যগুলির 
সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 
1
নির্দেশমূলক নীতি কাকে বলে? গুরুত্বপূর্ণ 
নির্দেশমূলক নীতিগুলো উল্লেখ করো। 
2
মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলক নীতির মধ্যে
 পার্থক্য লেখো 
3
ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর CLICK HERE 


 ভারতের সংবিধানে উল্লেখিত মৌলিক কর্তব্যগুলি উল্লেখ করো।


 ভারতের মৌলিক কর্তব্যঃ-সাধারণভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সচেতন নাগরিক হিসেবে যে দায় দায়িত্ব পালন করতে হয় সেগুলিকে মৌলিক কর্তব্য বলা হয়।1949 সালের 26 শে নভেম্বর গণপরিষদে যে সংবিধান গৃহীত হয়, তাতে কোনো মৌলিক কর্তব্যের উল্লেখ ছিল না। কিন্তু 1976 সালের 42 তম এবং 2002 সালের 86 তম সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে কয়েকটি মৌলিক কর্তব্যের উল্লেখ করা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায় এবং 51 (ক) নামে দুটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এই ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য 11 টি মৌলিক কর্তব্য পালনের কথা বলা হয়েছে।


ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য সমূহঃ- ভারতের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মোট 11 টি মৌলিক কর্তব্য সংযোজিত হয়েছে। এই 11 টি মৌলিক কর্তব্য হলো-


প্রথম - সংবিধান মেনে চলা, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য।


দ্বিতীয়- যেসব মহান আদর্শ জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যোগানোর কাজ করেছিল, সেগুলিকে যত্নসহকারে রক্ষা এবং অনুসরণ করা ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য।


তৃতীয়- ভারতের সার্বভৌমত্ব , একতা ও সংহতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য।


চতুর্থ- দেশরক্ষা এবং জাতীয় সেবামুলক কাজের আহব্বানে এগিয়ে আসা ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য।


পঞ্চম- ধর্মগত, ভাষাগত, অঞ্চলগত অথবা শ্রেণীগত বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সমস্ত ভারতীয়দের মধ্যে একতা ও ভ্রাতৃত্ব বোধ সম্প্রসারিত করা এবং নারীর মর্যাদাহানিকর বন্ধ করা।


ষষ্ঠ- ভারতের মিশ্র সংস্কৃতির গৌরবময় ঐতিহ্যকে মূল্য দেওয়া ও সংরক্ষণ করা, ভারতীয়  নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য।


সপ্তমঃ- বনভূমি ধ্বংস রদ , বন্যপ্রাণী প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করা এবং জীব জন্তুর প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশ করা।


অষ্টম- বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিকতা, অনুসন্ধিৎসা , কুসংস্কার ও সংস্কারমুখী দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানো প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের কর্তব্য।


নবম- ভারতীয় নাগরিকদের অন্যতম কর্তব্য হলো জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা এবং হিংসার পথ পরিত্যাগ করা।

দশম- সবক্ষেত্রে জাতীয় উন্নতির গতগতি বজায় রাখতে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সব কাজে চরম উৎকর্ষ সাধনের জন্য সচেষ্ট হওয়া।

একাদশ- 6 থেকে 14 বছর বয়সী প্রতিটি বালক-বালিকার শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা প্রতিটি পিতা-মাতা ও অভিভাবকের কর্তব্য।


মন্তব্য- পরিশেষে বলা যায় যে মৌলিক কর্তব্যগুলি প্রকৃতপক্ষে বাধ্যতামূলক নয়। জনগণ কোনো মৌলিক কর্তব্য অমান্য করলে রাষ্ট্রের কিছু করার থাকেনা। রাষ্ট্র কোনোভবেই জনগণকে মৌলিক কর্তব্য পালনে বাধ্য করতে পারেনা। এমনকি এগুলি অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আদালতেও যাওয়া যায় না।


নির্দেশমূলক নীতি বলতে কী বোঝো? গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশমূলক নীতিগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ  করো।


নির্দেশমূলক নীতিঃ- ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। এই সংকল্পের বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায় বলা হয়েছে শাসনকার্য পরিচালনা ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র' যে নীতিগুলি অনুসরণ করবে সেগুলিকে নির্দেশমূলক নীতি বলা হয়।


গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশমূলক নীতিঃ- ভারতের সংবিধানের চতুর্থ ভাগে 35 থেকে 51 নং ধারায় নির্দেশমূলক নীতি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ।এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-


আর্থসামাজিক আদর্শ সম্পর্কিতঃ- এই বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে- (i) রাষ্ট্রীয় নীতি এমনভাবে পরিচালিত হবে যাতে নারী পুরুষ উভয় জীবিকা অর্জনের অধিকার লাভ করবে।(ii) নারী-পুরুষ উভয় সমাজে সমান কাজে সমান মজুরি পাবে।(iii)  নারী- পুরুষ নির্বিশেষে সমস্ত শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও কর্মশক্তি অপব্যবহার করা যাবে না। (iv) জনসাধারণের কল্যাণে সম্পদের মালিকানা বন্টন ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। (v) সম্পদ ও উৎপাদনের উপাদানগুলি কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকবে না।


প্রশাসনিক:- গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক নির্দেশমূলক নীতি গুলি হল- (i) স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন করে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দান করবে। (ii) বিচার বিভাগকে সরকারি প্রশাসন থেকে পৃথক করতে হবে। (iii) সমগ্র ভারতের জনগণের জন্য একই রকম দেওয়ানী আইন প্রবর্তনের চেষ্টা করতে হবে।


উন্নত রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কিত:- এই সম্পর্কিত নির্দেশমূলক নীতি গুলি হল- (i) 10 বছরের মধ্যে 14 বছর বয়স পর্যন্ত বালক-বালিকাদের অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা । (ii) ঔষধ ছাড়া অন্য মাদকদ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা( iii) SC ও ST  জাতিদের অর্থনৈতিক ও শিক্ষার উন্নতিবিধান করার জন্য রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে।


আন্তর্জাতিকঃ- এই সম্পর্কিত নির্দেশমূলক নীতিগুলি হল-
(i) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে। (ii) জাতিসমূহের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত ও সম্মানজনক সম্পর্ক স্থাপনে রাষ্ট্র উদ্যোগী হবে । (iii) সালিশের সাহায্যে আন্তর্জাতিক বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটানোর বিষয়ে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে।


অন্যান্য নীতিঃ-  এই নীতিগুলি ছাড়াও সংবিধানে আরো কয়েকটি নির্দেশমূলক নীতি ঘোষণা করা হয়েছে ।যেমন- মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করা, হিন্দি ভাষা প্রসারের চেষ্টা করা , যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি প্রদান করা, চাকরিতে SC,ST উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।



মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলকনীতি সমূহের মধ্যে পার্থক্য লেখ।


 পার্থক্যঃ-  ভারতের সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকারের সঙ্গে চতুর্থ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ  নীতির কিছু মৌলিক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় যেমন-


নির্দেশের প্রকৃতিঃ- মৌলিক অধিকার গুলি রাষ্ট্রের কর্তৃত্বের উপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যেসব কাজ করা উচিত নয় মৌলিক অধিকারগুলি সেই নির্দেশ জারি করে । কিন্তু নাগরিক অধিকারের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের কি কি কাজ করা উচিত নির্দেশমূলক নীতিগুলি রাষ্ট্রকে সম্পর্কে বিভিন্ন ইতিবাচক নির্দেশ দিয়ে থাকে।


আদালতের বলবৎ যোগ্যতাঃ- মৌলিক অধিকারগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎ যোগ্য। তবে সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত নির্দেশমূলক নীতি গুলির ব্যাপারে আদালতের কোন দায়বদ্ধতা নেই নির্দেশমূলক নীতি গুলি আদালত কর্তৃক বলবৎ যোগ্য নয় ।


কার্যকারিতাঃ- কোন মৌলিক অধিকারকে কার্যকর করতে গেলে আইনসভাকে তার জন্য আলাদাভাবে আইন প্রণয়ন করতে হয় না । আবার নির্দেশমূলক নীতি কার্যকর করতে গেলে আলাদাভাবে আইন প্রণয়ন করতে হয়।



বাতিল করুনঃ- সংবিধানের 13 নং ধারা অনুযায়ী আইনসভার কোন আইন অথবা শাসন বিভাগের কোনো নির্দেশ যদি মৌলিক অধিকার বিরোধী হয় তাহলে আদালত সেই আইন বা নির্দেশকে বাতিল ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু নির্দেশমূলক নীতি বিরোধী কোন আইন বা নির্দেশ আদালত বাতিল করতে পারে না।


রাষ্ট্র কর্তৃত্বের পরিধিঃ- নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ এর জন্য মৌলিক অধিকার গুলি রাষ্ট্রকর্তৃক পরিধিকে সংকুচিত করে তবে নির্দেশমূলক নীতি গুলি বহুমুখী অর্থনৈতিক ও সামাজিক আদর্শকে রুপায়ন করার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃত্বের পরিধিকে প্রসারিত করে ।


স্থিতিশীলতাঃ- মৌলিক অধিকারগুলি স্থিতিশীল। মূল সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলি যেভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছিল তা এখনো সেভাবে রয়েছে, কোনো নতুন মৌলিক অধিকার আজ পর্যন্ত সংযোজিত হয়নি। আবার নির্দেশমূলক নীতি গুলি পরিস্থিতির তাগিতে পরিবর্তিত সংযোজিত হয়।

উদ্দেশ্যঃ- মৌলিক অধিকারগুলির উদ্দেশ্য হলো গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করা । সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলির প্রকৃতি মূলত রাজনৈতিক গণতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দেশমূলক নীতি গুলি জনকল্যাণকামী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পক্ষপাতী। নির্দেশমূলক নীতিগুলি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব আরোপ করে।


READ MORE.......




Post a Comment

0 Comments