তোমরা হাত বাড়াও তাকে সাহায্য করো|| আমার বাংলা সুভাষ মুখোপাধ্যায়

 পড়াশোনা:- দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্য- আমার বাংলা(সুভাষ মুখোপাধ্যায়) প্রবন্ধ থেকে "হাত বাড়াও"- প্রবন্ধের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নঃ- "তোমরা হাত বাড়াও তাকে সাহায্য করো"- লেখক কাকে কেন সাহায্য করতে বলেছেন? এবং  "সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে সেইসব খুনিদের শনাক্ত করছে"- কে শনাক্ত করছে ? কাদের কেন খুনি বলা হয়েছে? - এই দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হল। এবছরের বার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন দুটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অন্যান্য বছরের পরীক্ষাতেও প্রশ্ন দুটি আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমার বাংলা থেকে যেকোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তাই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের- 'আমার বাংলা' প্রবন্ধের প্রশ্ন- উত্তরগুলি তোমরা ভালোভাবে পড়বে । এছাড়াও এগুলির পিডিএফ ডাউনলোড করে রাখতে পারবে।  ধন্যবাদ লেখাটি ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য।


"তোমরা হাত বাড়াও, তাকে সাহায্য করো" লেখক কাকে কেন সাহায্য করতে বলেছেন?

                   উত্তরঃ 

যাকে সাহায্য করতে হবে:- সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'আমার বাংলা'- প্রবন্ধের অন্তর্গত 'হাত বাড়াও' রচনায় পঞ্চাশের মন্বন্তরে ক্ষুধার্থ ১২ - ১৩ বছরের সম্পূর্ণ উলঙ্গ এক কিশোরকে সাহায্য করার কথা বলেছেন। কারণ দীর্ঘদিন না খেতে পেয়ে সে পশুর মতো চার পায়ে হাটে।

সাহায্যের কারণ:- আলোচ্য "হাত বাড়াও"- রচনায় প্রকৃতির সৌন্দর্যের বর্ণনা থাকলেও ৫০- এর দুর্ভিক্ষের ভয়ঙ্কর বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে লেখক ১২ -১৩ বছরের একটি ছেলের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। ছেলেটির জ্বলন্ত দুটি চোখ যেন সেই সমস্ত সুবিধাবাদী সুখী মানুষদের করুন চোখে প্রশ্ন করে চলেছে  -  "আর কতদিন এই শোষণ চলবে?" তার হাতের সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে শনাক্ত করছে সেই সমস্ত খুনিদের - যাদের ষড়যন্ত্রে শস্য-শ্যামল বাংলা পরিণত হয়েছে অনাহারের শ্মশানে। করুন দৃষ্টি যেন বলতে চায় -অনেক হয়েছে আর নয় । অর্থাৎ সে যেন শান্তি চায়। তাই লেখকের আবেদন বৃহত্তর সমাজের কাছে, তারা অসুখে জর্জরিত হলেও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে, উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তাদের এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই ক্ষুধার্থ, দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের প্রতিনিধি ছেলেটির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রার্থনা  করেছেন।

সমাজের অসুখঃ- বৃহত্তর সমাজে ধনী স্বার্থপর মানুষেরা অর্থ রোজগারের নেশায় মত্ত হয়ে আছে ।তাদের সামান্য সহানুভূতি মন্বন্তরের ফলে সৃষ্ট রোগ সারিয়ে তুলতে পারে । তাই বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী লেখক 'স্পর্শকাতর মন' প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে ছড়িয়ে দিতে চান। ভয়ঙ্কর খাদ্যাভাবকে দূর করা সম্ভব। যদি সমাজের সকল স্তরের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়ায়। তাই গদ্যাংশের শেষে লেখক প্রার্থনা করেছেন- "বাংলার বুক জুড়ে সবুজ মাঠের সোনালী ফসলে, চাষীর গোলাভরা ধানে ভরে উঠুক শান্তি ।কারখানায় কারখানায় বন্ধনমুক্ত মানুষের আন্দোলিত বাহুতে বাহু মেলাক শান্তি"- অর্থাৎ মানুষের সহযোগিতায় দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস থেকে মানুষ মুক্তি পাবে এবং বাংলা পুনরায় শস্য-শ্যামল হয়ে উঠবে।

           


2- "সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে সেই সব খুনিদের সে শনাক্ত করছে"- কে শনাক্ত করছে? তাদের কেন খুনি বলা হয়েছে?


                        উত্তরঃ-

সনাক্তকারীঃ- সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'আমার বাংলা' প্রবন্ধের অন্তর্গত "হাত বাড়াও" রচনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পঞ্চাশের মন্বন্তরের বিপর্যস্ত ১২- ১৩ বছরের এক কিশোর, তার সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে সেই সব খুনিদের শনাক্ত করছে। যাদের কারণে আজ শস্য-শ্যামল বাংলা দুর্ভিক্ষের শ্মশানে পরিণত হয়েছে।


খুনি বলার কারণ:- আসমুদ্রহিমাচল সোনার বাংলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ আর কিছু আড়তদার, জোদ্দার ও মহাজন ষড়যন্ত্র করে বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করেছে। যারা দরিদ্রদের পেটের গ্রাস কেড়ে নিয়ে সুখ ভোগ করেছে। তাদের খুনি বলা হয়েছে। গ্রাম বাংলার কৃষি নির্ভর অসহায় মানুষ প্রকৃতির দুর্যোগ ও ব্রিটিশ সরকারের ষড়যন্ত্রে কাছে বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। প্রতিবাদহীন বাংলার সিংহভাগ শ্রমজীবী মানুষ এরূপ করুণ পরিণতির জন্য কাউকে দোষারোপ না করে যেন নিজের ভাগ্যকেই দোষী সাব্যস্ত করেছে। মানবিক লেখক তাদের প্রতিনিধি হয়ে লোভী তথা লাভের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা মানুষদেরকে খুনি বলেছেন।


শনাক্তকরণের কারণঃ- মানবিক লেখক নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছিলেন বাংলার অধিকাংশ খাদ্য যুদ্ধের সৈনিকদের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। আর কিছু ব্যবসায়ী খাদ্য গুদাম ঘরে মজুদ করে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করেছিল। অর্থাৎ এই সমস্ত পুঁজিপতি বাংলার দুর্ভিক্ষকে অনিবার্য করে তুলেছিল। যে দুর্ভিক্ষের ভয়ঙ্কর প্রভাব রচনায় ফুটে উঠেছে ছেলেটির বর্ণনায়। হাঁটতে না পারা, মাজা পড়ে যাওয়া, রোগা ছেলেটি দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের প্রতিনিধি হয়ে সেই সমস্ত খুনিদের শনাক্ত করছে। লেখকের কথায়- "সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে সেইসব খুনিদের সে শনাক্ত করছে -শহরে- গ্রামে বন্দরে - গঞ্জে, জীবনের গলায় যারা মৃত্যুর ফাস্ট পরাচ্ছে, মাথা উঁচু করে বাঁচতে দিচ্ছে না যারা মানুষকে।" অর্থাৎ অর্থ রোজগারের নেশায় মত্ত মানুষদের লেখক খুনি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর কিশোরটি সেই সমস্ত খুনিদের চিহ্নিত করে চলেছে তার সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে।


আরো পড়ো.....


গারো পাহাড়ের নীচে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রা


ভারতবর্ষ গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর 


ভাত গল্পের গুরুত্বপূর্ণ MCQ &  SAQ


রূপনারানের কূলে কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Post a Comment

0 Comments