একাদশ শ্রেণীর শিক্ষাবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর

 পড়াশোনা:- একাদশ শ্রেণীর শিক্ষাবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর / একাদশ শ্রেণীর শিক্ষাবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর/ থেকে MCQ ও SAQ প্রশ্ন যেমন থাকবে তেমনি একটি রচনাধর্মী প্রশ্ন থাকবে। উত্তরটি pff ফাইল আকারে তোমাদের দেওয়া হলো। যা তোমাদের প্রস্তুতি  নিতে অনেক সহায়তা করবে।

■ এছাড়াও 2023 সালের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা এ বছর একাদশ শ্রেণীতে উঠেছো তারা অবশ্যই এই প্রশ্ন-উত্তরের পিডিএফ ডাউনলোড করে প্রস্তুতি নেবে।।


 আলোচ্য বিষয়    শিক্ষাবিজ্ঞান 
 প্রশ্ন -1  ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে
কী বোঝো? ব্যাপক অর্থে
শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
প্রশ্ন-2 সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা এবং
ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মধ্যে
 পার্থক্য লেখো।
প্রশ্ন-3 শিক্ষার ব্যাক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য
বলতে কী বোঝো?  শিক্ষার 
ব্যাক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও
অসুবিধাগুলি লেখো।
মান 8


প্রশ্নঃ- ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে কী বোঝো? ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।


                             উত্তর 

ব্যাপক অর্থের শিক্ষাঃ- ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে এমন এক জীবনব্যাপী বিরামহীন ক্রমবিকাশের প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যা নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ব্যাক্তি পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে এবং সমাজের বহুমুখী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
                                             ■ অধ্যাপক এস এস মেকেঞ্জির মতে, ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হলো এমন এক প্রক্রিয়া যার দ্বারা ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন ঘটে এবং এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক বজায় রাখতে সমর্থ হয়।


ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্যঃ- ব্যাপক অর্থে শিক্ষার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন-

জীবনব্যাপী প্রক্রিয়াঃ- শিশুর জন্মের পর থেকে শিক্ষা লাভ করা শুরু হয়, যা চলতে থাকে আমৃত্যু পর্যন্ত।তাই ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হলো জীবনব্যাপী বিরামহীন প্রক্রিয়া।


সর্বাঙ্গীণ বিকাশের প্রক্রিয়াঃ- ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হলো শিশুর শারীরিক, মানসিক, বৌদ্ধিক , প্রাক্ষোভিক প্রভৃতি দিকের বিকাশ ঘটানো। তাই ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হলো সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের প্রক্রিয়া।


শিশুকেন্দ্রিক প্রক্রিয়াঃ- ব্যাপক অর্থে শিক্ষায় শিশুকেন্দ্রিক। কারণ শিক্ষার্থীর চাহিদা, আবেগ, রুচি, পছন্দ-অপছন্দ, গ্রহণ ক্ষমতা প্রভৃতিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষকের ইচ্ছা এক্ষেত্রে গুরুত্ব পায় না।


বহুমুখী প্রক্রিয়াঃ- ব্যাপক অর্থে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাঠ্যক্রম ইত্যাদি ছাড়াও সমাজ, সম্প্রদায় ,পরিবেশ প্রভৃতিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি উপাদানের গুরুত্বকে স্বীকার করা হয়। তাই ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হলো বহুমুখী প্রক্রিয়া।


সামাজিক প্রক্রিয়াঃ- শিক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যাক্তি যেমন সমাজ পরিবেশের নানান উপাদানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে চলে। তেমনি প্রতিযোগিতা, সহযোগিতা, সামাজিকীকরণ ইত্যাদির মতো বিষয়গুলিও শিক্ষার মধ্য দিয়ে অর্জন করে।


আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়াঃ- ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হল ব্যক্তির আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, সদা পরিবর্তনশীল বিশ্বে আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যক্তি তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে।


মূল্যবোধের বিকাশঃ- ব্যাপক অর্থে শিক্ষায় শিশুর বা ব্যক্তির মধ্যে মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। উন্নত জীবনাদর্শ উপলব্ধির শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ পায়। এই শিক্ষা ব্যক্তিকে চরিত্রবান সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।


মন্তব্যঃ- উপরের এই আলোচনা থেকে বলা যেতে পারে যে, ব্যাপক অর্থে শিক্ষার ফলে ব্যক্তি পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, যা ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটায় ও সমাজে সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।


প্রশ্ন- সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা এবং ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য লেখো।


                                উত্তর 

শিক্ষার সংকীর্ণ অর্থ ও ব্যাপক অর্থের মধ্যে পার্থক্যঃ - এই দুই ধরনের শিক্ষার মধ্যে কতকগুলি বিষয়ের মিল থাকলেও কিছু  পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় ।যেমন- 

অর্থগতঃ- সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হলো পাঠ্যপুস্তক এর মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা। কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হলো শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সুপ্ত সম্ভাবনাগুলির পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করা।


শিক্ষার লক্ষ্যঃ- সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষায় শিক্ষার্থী পুস্তক পাঠের মাধ্যমে 3R ( Reading,Writing and Arithmetic) জ্ঞান অর্জন করে । আবার ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য 7R ( Reading, Writting, Arithmetic, Recreation, Rights, Responsibilities & Relations) বিষয়ের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে।


শিক্ষার সময়কালঃ- সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শুরু হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শেষ হয়। অর্থাৎ প্রাক্- প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে ব্যাপক অর্থে শিক্ষা শিশুর জন্মের পর থেকে আমৃত্যু  পর্যন্ত চলতে থাকে।  অর্থাৎ এই শিক্ষা সারা জীবন ধরে চলে।


পাঠ্যক্রমঃ- সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষায় শিক্ষার পাঠক্রম একমুখী। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কতকগুলি বিষয়ের উপরেই শুধু গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বহুমুখী। অর্থাৎ তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক উভয় প্রকার অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে পাঠ্যক্রম গঠিত হয়।


শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকাঃ- সংকীর্ণ অর্থের শিক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেবলমাত্র তত্ত্বগত জ্ঞান প্রদানে ব্যস্ত থাকেন। আবার ব্যাপক অর্থে শিক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা বন্ধু, দার্শনিক ও পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন।


শিক্ষার্থীর ভূমিকাঃ- সংকীর্ণ অর্থের শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় থাকে, কেবল গ্রহীতা হিসেবে জ্ঞান গ্রহণ করে । তবে ব্যাপক অর্থে শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা সবসময় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।


সংখ্যা ও মাধ্যমঃ- সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা বিদ্যালয় ও পরিবারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বিদ্যালয়, পরিবার, বেতার, দূরদর্শন ,চলচ্চিত্র , প্রেস ইত্যাদির মাধ্যমেও পরিচালিত হয়।


শিক্ষাদান কৌশলঃ- সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা মৌখিক আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয় । শিক্ষার্থীদের স্মৃতির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় । আবার ব্যাপক অর্থে শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রচেষ্টা বাস্তবমুখী জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন, কার্যকারণ ব্যাখ্যা প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।



প্রশ্নঃ- শিক্ষার ব্যাক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝো?  শিক্ষার ব্যাক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।


                          উত্তর 

শিক্ষার ব্যাপ্তৃতান্ত্রিক লক্ষ্যঃ- এই শিক্ষা সম্পর্কে শিক্ষাবিদ সক্রেটিস বলেছেন- "Man is the root of mankind.Man is the measure of all things. " অর্থাৎ মানব প্রজাতির মূলে আছে মানুষ, সকল বিষয়ে মানুষেই একমাত্র বিবেচ্য। তাই ব্যাক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যে ব্যক্তির বিকাশ বা ব্যক্তির উন্নয়নকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। সমাজের প্রয়োজনে ব্যক্তি নয় বরং ব্যক্তির প্রয়োজনে সমাজ গঠিত হয়েছে। তাই বিশ্বের শিক্ষাবিদগণ শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশকে শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেছেন।

ব্যক্তিতান্তরিক শিক্ষার সুবিধাঃ- শিক্ষায় ব্যাক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা গুলি হল- 

সুপ্ত গুণাবলীর বিকাশ সাধনঃ- প্রতিটি মানব শিশু জন্মের সময় কতকগুলি বৈশিষ্ট্য নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়, প্রাথমিক অবস্থায় ওই বৈশিষ্ট্যগুলি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তাই শিক্ষার কাজ হল শিশুর এই সকল সুপ্ত গুণাবলীর বিকাশ সাধনে সহায়তা করা।


শিক্ষার ব্যবস্থাঃ- এই শিক্ষায় ব্যক্তিকেই একক সত্তার অধিকারী ধরা হয়। দলগতভাবে একাধিক ব্যক্তিকে একসঙ্গে শিক্ষার আঙিনায় এনে শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয় না। এককভাবে ব্যক্তির বিকাশের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।


আত্ম উপলব্ধি ও আত্মপ্রকাশে সহায়তাঃ- শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো আত্মউপলব্ধী। প্রাচীন যুগের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর আত্ম উপলব্ধি ও আত্মপ্রকাশের উপর গুরুত্ব দেওয়া হতো। আত্ম উপলব্ধির মধ্যে দিয়েই ব্যক্তির মধ্যে পরিপূর্ণতা আসে। ব্যক্তি কেন্দ্রিক শিক্ষার মাধ্যমে আত্ম উপলব্ধির কাজটি সহজে করা যায়। আত্ম উপলব্ধির মধ্য দিয়ে নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে।


অন্যান্য সুবিধাঃ- এছাড়াও এই শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ পরিবেশের বাইরে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, ব্যক্তিগত বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করা হয়, সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশে সহায়তা করা হয় প্রভৃতি।


শিক্ষায় ব্যক্তি তান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধাঃ- শিক্ষায় ব্যাক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধাগুলি হল- 


স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতাঃ- ব্যাক্তিতান্ত্রিক শিক্ষায় ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার কাজ পরিচালিত হয়। ফলে ব্যাক্তি ধীরে ধীরে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। এর ফলে ব্যক্তি সমাজ, দেশ, মানুষ প্রভৃতির কল্যাণকে অবজ্ঞা করে কেবল নিজের কল্যাণেই ব্যস্ত থাকে।


স্বাধীনতার অপব্যবহারঃ- ব্যাক্তিতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যক্তিকে সব ধরনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ব্যক্তি অবাধ স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে জীবন যাপন করে। এটি ব্যাক্তির সমাজ ও দেশের পক্ষে ক্ষতিকর।


খরচ সাপেক্ষ শিক্ষাঃ- শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষে ব্যক্তিগত বৈষম্যের প্রতি নজর দিয়ে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদা ভাবে শিক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ এবং জটিল।


অন্যান্য অসুবিধাঃ- এছাড়াও এই শিক্ষার লক্ষ্যের আরো কতকগুলি অসুবিধা লক্ষ্য করা যায়। যেমন- বাস্তবায়নের অসুবিধা, সমাজের অগ্রগতি অবহেলিত, অমনোবৈজ্ঞানিক শিক্ষা প্রভৃতি।


মন্তব্যঃ- পরিশেষে বলা যায় যে ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মাধ্যমে শিক্ষার উদ্দেশ্য সাধন ও আধুনিক লক্ষ্য পরিপূরণ তথা জাতীয় বিকাশ অসম্ভব। তাই ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।


PDF FILE DETAILS 

Format:- PDF

Size- 246.2 Kb
 
Page:- 4 

CLICK HERE-  DOWNLOAD PDF 




Post a Comment

0 Comments